তোমাকে হারিয়ে দেশ জাতী হারিয়েছে, এক দেশপ্রমিক ও দেশনায়ক, দেশবরণ্য বরপুত্র।

ডেস্ক রির্পোটঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে কজন ক্ষণজন্মা মানুষ স্বীয় প্রতিভা ও কর্মগুণে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং বাঙালি জনজীবনে নিজের আসন পাকাপোক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে জাতীয় নেতা শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান (১৯২৩-১৯৭৫) একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। আজ বুধবার তাঁর ৯৬তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের কথা জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে। ওই সময় মুজিবনগর সরকার গঠন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা ও যোগ্যতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি কখনোই নির্বাচনে পরাজিত হন নি এবং তিনি সর্বদাই জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেছেন।
এই মহান ব্যক্তিত্ব ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নাটোর মহকুমার বাগাতিপাড়া থানার মালঞ্চী রেলস্টেশন সংলগ্ন নূরপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস রাজশাহী শহরের কাদিরগঞ্জ মহল্লায়। তাঁর দাদা গুলাই এর জমিদার হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার (১৮৪৮-১৯৩৬) ব্রিটিশ আমলে একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। কামারুজ্জামানের পিতা আবদুল হামিদ মিয়া (১৮৮৭-১৯৭৬) ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজসেবক। তিনি রাজশাহীতে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন।
এই পিতার গর্বিত ও বিশ্বনন্দিত সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামানও দাদা এবং পিতার আদর্শকে সামনে রেখে শৈশবেই সেই অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পিতা আবদুল হামিদ মিয়া ও মাতা জেবুন নেসার ১২টি ছেলেমেয়ের মধ্যে কামারুজ্জামান ছিলেন প্রথম সন্তান। তাঁর জন্মের সময়ে দাদা হাজী লাল মোহাম্মদ সরদার ছিলেন কলকাতায়। তিনি রাজশাহী এসে পৌত্রের আকিকার ব্যবস্থা করেন। পৌত্রের তিনি নামকরণ করেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম দিলেন দাদি ‘হেনা’। হাসনা-হেনা ফুলের গন্ধ ও সৌরভে বংশের সুনাম বৃদ্ধি করবে এই হেনা আদরের পৌত্র; এই ছিল দাদির ঐকান্তিক প্রার্থনা। দাদির সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। যে বংশে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনার মতো বিশ্বনন্দিত মানুষ জন্মগ্রহণ করেছেন সেই বংশের মর্যাদা ও সুনাম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। কামারুজ্জামান হেনার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় বাড়িতেই পিতৃব্য বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সমাজসেবক কবি মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ সাহেবের কাছে। তারপর তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন তাঁর এক ফুফা। হঠাৎ করেই তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে বদলি হয়ে যান। ফলে কামারুজ্জামান হেনাকেও তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যান। কামারুজ্জামান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থনীতিতে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ল’ পাশ করেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের রাজশাহী জেলা শাখার সম্পাদক এবং ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া থানার চামরুল গ্রামের জোতদার আশরাফ উদ্দীন তালুকদারের কন্যা জাহানারা বেগমকে বিবাহ করেন। তিনি ছয় সন্তানের জনক। তাঁর সন্তানগণ হলেন ফেরদৌস মমতাজ পলি (১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমি (১৯৫৭), এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (১৯৫৯), এএইচএম এহসানুজ্জামান স্বপন (১৯৬১) ও কবিতা সুলতানা চুমকি (১৯৬৪)। তাঁর বড় পুত্র অ্যাডভোকেট খায়রুজ্জামান লিটনও পিতার মতই রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন। এ কথা স্বীকার্য যে, চারপুরুষ রাজনীতিতে এমন পরিবার বাংলাদেশে খুব বেশি নেই।

সূত্র: ড. তসিকুল ইসলাম রাজা, ‘বাংলাদেশে চারপুরুষের রাজনীতি : এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাঁর পরিবার’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহিত।

Next Post

সবাইকে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

বুধ জুন ২৬ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সবাইকে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ভেরিপাড়া মোড় এলাকায় সড়ক বিভাজনে সিটি কর্পোরেশনের জিরো সয়েল প্রকল্পের আওতায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান মেয়র। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র লিটন বলেন, পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে এবং […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links