তৃতীয় জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

আভা ডেস্কঃ ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর, ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর’- কাজী নজরুল ইসলামের অমর কবিতার মতোই জয়ধ্বনি করে ফেলল বাংলাদেশ। ইতিহাসের অমর পাতায় অক্ষয় কালিতে নিজেদের নাম লিখে ফেলল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

বাংলাদেশের ক্রিকেট রূপকথায় যোগ হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায় বাংলাদেশকে ভাসাচ্ছে নিদারুণ আনন্দে। মিরপুরের সবুজ গালিচায় বাংলাদেশও আনন্দে মাতল। বৃত্ত বানিয়ে আনন্দ নৃত্য করলো মাহমুদউল্লাহ, সাকিব, মোস্তাফিজ, সোহানরা।

দানে দানে তিন দান। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারানো হতে পারে অঘটন। হতেই পারে! দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জিতে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দেয় প্রথম জয় অঘটন ছিল না। এবার জিতল তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। এবার অবশ্যই ফেভারিট হিসেবেই জিতল বাংলাদেশ। হাতে দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতল টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

মিরপুর শের-ই-বাংলা অনেক সাফল্যের সাক্ষী হয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। আজকের ১০ রানের জয় নিশ্চিতভাবেই তালিকার উপরেই থাকবে। টস জিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেটে ১২৭ রান করে। জবাবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানের বেশি করতে পারেনি।

ম্যাচ জয়ের নায়ক হাফ সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ হলেও আসল কাজটা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তাইতো ম্যাচের মহামূল্যবান খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। লো স্কোরিং ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছেন। ১৫টিই ছিল ডট বল। উইকেট না পেলেও মোস্তাফিজ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের যে চাপে রেখেছিলেন তার উত্তর জানা ছিল না কারো।

বিশেষ করে ম্যাচের ১৯তম ওভারে বাঁহাতি পেসার যে বোলিং করেছেন তা ছিল দুর্বোধ্য। শেষ ১২ বলে ২৩ রান লাগত অস্ট্রেলিয়ার। মোস্তাফিজ প্রথম বল ডট দেন। দ্বিতীয় বলে ক্যারি নেন এক রান। বাকি চার বলে ক্রিস্টিয়ান দর্শক হয়ে ছিলেন। তার একেকটি স্লোয়ার ছিল ক্রিস্টিয়ান তালগোল পাকিয়েছেন। ওই ওভারে মাত্র এক রান আসায় শেষ ওভারে টার্গেট নাগালের বাইরে চলে যায়। ২২ রান নিয়ে বোলিংয়ে এসে মেহেদী প্রথম বলে ছক্কা হজম করলেও পরের পাঁচ বলে দেন পাঁচ রান। ব্যাস। তাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের।

স্বল্প পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে মিলে সাফল্য। স্পিনার নাসুমের শিকার অজি অধিনায়ক ওয়েড। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে অতিথিরা যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে দাপট দেখায় তাকে এলোমেলো হয়ে যায় বোলিং আক্রমণ। লড়াইয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব মিচেল মার্শের। ডানহাতি ব্যাটসম্যান আরো একবার ২২ গজে দায়িত্ব নিয়ে লড়লেন। নাসুমকে কভারের ওপর দিয়ে, সাকিবকে মিড উইকেট দিয়ে যেভাবে ছক্কা উড়িয়েছেন তাতে ভয় ধরেছে বাংলাদেশ শিবিরে।

কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারেননি। তার ও ম্যাকডরমেটোর ৬৩ রানের জুটি সাকিব ভাঙার পর মার্শ শরিফুলের বলে উইকেট হারান। সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন ম্যাকডরমেট (৩৫) । মার্শ আগের দুই ম্যাচে ৪৫ করে সাজঘরে ফিরলেও এবার ফিফটি তুলে ৫১ রানে আউট হন। দেয়াল হয়ে দাঁড়ানো মার্শকে ফেরানোর আগে শরিফুল সাজঘরের পথ দেখান হেনরিকসকে। ইনিংসের মধ্যওভারে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে দারুণভাবে। সঙ্গে মোস্তাফিজের কিপটে বোলিং ছিল এগিয়ে যাওয়ার মূল রসদ। তাতে ম্যাচটা জিতে সিরিজটাও জিতে যায় বাংলাদেশ।

তবে ইতিহাস গড়ার দিনে ব্যাটিং নিয়ে আছে হতাশা। আবারো ব্যর্থ দুই ওপেনার। দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতেই যেন অপারগ নাঈম-সৌম্য। নাঈম দ্বিতীয় ওভারে ফিরলেন হ্যাজেলউডের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। সৌম্য জাম্পাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। ৩ ওভারে বাংলাদেশের রান মাত্র ৯, উইকেট নেই ২টি। সেখান থেকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের লড়াই শুরু। মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই ছিলেন ধীরস্থির। সাকিব কিছুটা আগ্রাসন দেখান। তাতে কিছুটা আশার আলো দেখা যায়।

পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে তার ব্যাট থেকে আসে প্রথম বাউন্ডারি। পাওয়ার প্লে’র শেষ বলে উইকেটের পেছন দিয়ে পেয়ে যান আরেকটি চার। সবমিলিয়ে পাওয়ার প্লে’তে রান ২৮। অথচ পরের ৪ ওভারে ৩২ রান তুলে ৬০ রান নিয়ে ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে চলে যায়। কিন্তু হারায় মহাগুরুত্বপূর্ণ সাকিবের উইকেট। অষ্টম ওভারে হ্যাজেলউডকে পরপর দুই চার মেরে সাকিব ভালো কিছুর আশা দেখান। কিন্তু পরের ওভারে জাম্পাকে উড়াতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন ২৬ রানে।

এরপর মাহমুদউল্লাহ ধীর গতির ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক আফিফ (১৯) ও দারুণ ফর্মে থাকা সোহানের (১১) রান আউট ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়ায়।শেষ দিকে দলের দাবি কেউ মেটাতে পারেননি উল্টো মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজ ও মেহেদী ইনিংসের শেষ তিন বলে আউট হয়ে অভিষিক্ত নাথান এলিসকে হ্যাটট্রিক উপহার দেন। মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারের পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ইনিংসটি সাজান ৫৩ বলে। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার।  নাথান ৩৪ রানে ৩ উইকেট পেলেও ঝরঝরে বোলিং করেছেন হ্যাজেলউড। ১৬ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া জাম্পা ২৪ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।

ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। চিরকালীন শ্রেষ্ঠত্বে লিখা হয়ে থাকবে, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বাঘের গর্জন তাসমান পাড়ি দিয়ে শুনছে গোটা বিশ্ব।

Next Post

আজও রামেকে করোনা-উপসর্গে ১২ মৃত্যু

শনি আগস্ট ৭ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন নারীসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে মৃত্যু হয় তাদের। একই সময়ে শনাক্ত হয়েছেন ২০৩ জন। শনিবার সকালে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links