সোহানুল হক পারভেজ, তানোর: রাজশাহীর তানোরের তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ড মোহর গ্রামের বাসিন্দা ভুমিহীন মর্জিনা বেওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁই চায়। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সরকারের দেয়া একটি বাড়ী তিনি পাবেন। সেই আশায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
মর্জিনা বেওয়া জানান, শিশু বয়সে তার সৎ চাচা তাকে নৌকা করে রাজশাহী শহরে নিয়ে যায় এবং শহরের কল্পনা সিনেমা হল এলাকার পাচানি মাঠ সংলগ্ন এতিম খানার বারান্দায় রেখে সে নিরুদ্দেশ হয়। সারা রাত্রি সেখানে সে একাকী অবস্থান করেন। এমতাবস্থায় শহরের লক্ষীপুর এলাকার ব্যবসায়ি জনৈক এমাজ উদ্দিনের দৃষ্টিগোচর হলে তাকে তার বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তার ওপরে শুরু হয় অমানষিক নির্যাতন ও অত্যাচার।
একপর্যায়ে সেখান থেকে সে পালিয়ে (মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক) শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান হেনার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে এএইচএম কামরুজ্জামান হেনার চাচাত ভাই (বাণী মিয়া) মর্জিনাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেন। তখন তার বয়স ছিল প্রায় দশ বছর। সেখানেই মর্জিনার কিশোর বেলা ও যৌবন কাল অতিবাহিত হয়েছে। পরবর্তীতে কামরুজ্জামান হেনার (তায়োই) তানোর পৌর এলাকার এরাজ সরকার মর্জিনাকে তানোরে নিয়ে এসে তালন্দ ইউনিয়নের মোহর গ্রামের বাসিন্দা সোনার সরকারের সঙ্গে বিবাহ দেন। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের চার বছর পরেই বিধবা হয় মর্জিনা, এক পুত্র সন্তান নিয়ে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। খাস জমিতে একটি কুঁড়েঘর ব্যতীত এক শতক চাষাবাদী জমি নেই মর্জিনার।
মর্জিনা দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছর ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনো রকমে ধুঁকে ধুঁকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মর্জিনা শিশু বয়সেই পিতা-মাতা হারা হওয়ায় তার পিতৃপরিচয়ও এখন বলতে পারেন না।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ইউপি সদস্য এনতাজ আলী এবং তালন্দ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রইস উদ্দিন বাচ্চুর কাছে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ণা দিয়ে ও শত আবেদন-নিবেদন করেও (মুজিববর্ষ-২০২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার) একটি ঘর পান নাই। তিনি স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।