আভা ডেস্কঃ পটুয়াখালীতে তর্কের জেরে এক পথচারী যুবককে মাদকসেবী সাজিয়ে জেলে পাঠিয়েছে পটুয়াখালী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ইন্সপেক্টর।
ঘটনার দিন প্রকাশ্যে ইন্সপেক্টর নিজেই ওই যুবককে বেদম প্রহার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করলে ম্যাজিস্ট্রেট অমিত রায় ওই যুবককে তিন মাসের দণ্ড প্রদান করেন।
ভিকটিমের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মামলায় দুই নম্বর সাক্ষীর বক্তব্যে রয়েছে অসঙ্গতি। অপর সাক্ষীর হদিস পাওয়া যায়নি।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর বিকালে পটুয়াখালী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ইন্সপেক্টর আবু রেজা মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে শহরের স্বনির্ভর এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলমের বাসায় সামনে সুমন নামে এক যুবককে আটক করতে গেলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হলে উৎসুক জনতার ভিড় হয়।
পরিস্থিতি দেখতে অন্যান্যদের মত নুরুজ্জামান সোহাগ তার মোটরসাইকেল থামিয়ে বিষয়টি দেখতে থাকেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নুরুজ্জামানের দেহ তল্লাশি শুরু করেন ইন্সপেক্টর আবু রেজা মেহেদী হাসান।
ইন্সপেক্টরের এ কর্মকাণ্ডে নুরুজ্জামান হতবাক হয়ে প্রতিবাদ এবং তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় ইন্সপেক্টর ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুজ্জামানকে ব্যাপক মারধোর শুরু করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে হাতকড়া লাগিয়ে জব্দ তালিকায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়। ওই জব্দ তালিকায় উল্লেখ রয়েছে আটককৃত ব্যক্তি মাদক সেবন করেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফিরোজ এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার সোলেমান যুগান্তরকে জানান, ঠিকাদারি কাজের ঘটনার ১০ মিনিট পূর্বে নুরুজ্জামানকে স্বনির্ভর সড়কস্থ আজাদ মিয়ার বালু মহলে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পরে এমন খবর শুনে নুরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ইন্সপেক্টর দেখা করতে দেননি।
নুরুজ্জামানের বরাত দিয়ে তার ভাই খালিদ জানান, তার ভাইকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মাদক সেবনের বিষয়টি বলতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্যথায় জামিন অযোগ্য মাদক মামলা জড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে ওসির পক্ষ থেকে।
ঘটনার সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর মধ্য মো. বসির হাওলাদার জানান, অন্যদের মতো তিনিও ঘটনাস্থলে হাজির হয়। আটককৃত নুরুজ্জামানের কাছে কোনো প্রকার মাদক পাওয়া যায়নি। ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হওয়ায় তাকে মারধোর করে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।
স্বনির্ভর রোডস্থ একাধিক ব্যক্তিরা একই বক্তব্য দিয়েছেন।
বশির আরও জানান, এর আগে তার ভাই দুলালকে একটি মামলা সাক্ষী করা হয়েছে অথচ দুলাল মামলা সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে দাবি করেন তিনি।
ওই মামলার দুই নম্বর সাক্ষী মো. শাহিন হোসেন জানান, ঘটনার সময় সুমন নামে এক যুবক তাদের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ সময় নুরুজ্জামান পরিস্থিতি দেখতে দাড়ালে ইন্সপেক্টর তার দেহ তল্লাশি চালায়। এ সময় নুরুজ্জামান ও ওসির মধ্যে তর্ক হয়। ইন্সপেক্টর ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুজ্জামানকে মারধোর করে জোর করে নিয়ে যায়। তার কাছে মাদক পায়নি তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন স্বনির্ভর রোডস্থ এলাকায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের লোকজন অভিযান চালিয়ে ক্রেতাদের আটক করে। চিহ্নিত ব্যবসায়ীর বাসায় তারা অভিযান চালায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই দিন নুরুজ্জামানের সঙ্গে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি এটা সত্য। কিন্তু ওসির সঙ্গে সে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ইন্সপেক্টর আবু রেজা মেহেদী হাসান বলেন, তিনি মাদক সেবন করেছে তা বুঝা গেছে।
আটককৃত রাস্তায় দাড়িয়ে সেবন করেছে কিনা এমন প্রশ্নে ইন্সপেক্টর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রশ্নের এক পর্যায় তিনি নীরবতা পালন করেন।
যুগান্তর