তদন্তের নামে দফায় দফায় মানসিক নির্যাতনেই আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে মোহনপুরের স্কুল ছাত্রী বর্ষা।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বর্ষাকে (১৪) ধর্ষণ করা হয়। এটি গত ২৩ এপ্রিলের ঘটনা। ওই ঘটনার পরে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর মেয়েটির বাবা থানায় ধর্ষণের মামলা দিলেও পুলিশ সেটি গ্রহণ না করে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দেয়। আর সেই মামলায় দফায় দফায় তদন্তের নামে চলে মেয়েটির ওপর মানসিক নির্যাতন। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নানা ধরনের অশালিন মন্তব্য। একপর্যায়ে গত ১৬ মে আত্মহত্যার পথই বেছে নেই সুদর্শনা কিশোরী মেয়েটি। ওইদিন বিকেলে মেয়েটি নিজ শয়নকক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তদন্তের নামে পুলিশ ধারাবহিকভাবে মেয়েটির ওপর যে অত্যাচার করেছে এবং নিরাপত্তহীনতায় ফেলেছে-তাশে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথেই যেতে হয়েছে তাকে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় মানুষের মাঝে। তারা জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে আসামিদের নানাভাবে সুরক্ষা দেওয়া সেই পুলিশ ঘটনার পরে এক মূল হোতা মুকুলের বৃদ্ধ নানীসহ দুই প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, অন্যতম আসামি মুকুলের নানী সখিনা বেওয়া (৭০), খালু আব্দুর রহমান (৪৫) ও খালাতো ভাই রাব্বি (১৭)। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা হলো, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মুকুল হোসেন (২২), সহপাঠি সোনিয়া খাতুন। তাদের মধ্যে সোনিয়া জামিনে রয়েছে। আর মুকুল জেলহাজতে রয়েছে।

মামলা ও আত্মহত্যাকারী সুমাইয়া আক্তার বর্ষার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের মেয়েকে কোচিংয়ে পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় সহপাঠি সোনিয়া খাতুন। তারা দু’জনেই উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এরপর ওইদিন দুপুরে তানোর লালপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা স্কুল শিক্ষার্থীর বাবাকে মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তাঁর মেয়ে মোহনপুর-কালিগঞ্জ রাস্তার পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে সেখানে মেয়েটির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

মেয়েটির বাবা আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, ঘটনার পরে তিনি থানায় ধর্ষণ মামলা করতে গেলেও পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। শেষে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ঘটনার চারদিনের মাথায় ২৭ এপ্রিল অপহরণ চেষ্টা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা নেয় পুলিশ।

ঘটনার পরে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তবে পরের দিন রাতে সবাইকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর মামলা হলে পুলিশ আবারো দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে জামিন পাই এক আসামি। তবে মূল আসামি মুকুল হোসেন এখনো জেলে আছে।

আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, মামলা দায়েরের পর পুলিশ মেয়েটিকে কোনো নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো দফায় দফায় নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এ নিয়ে চরমভাবে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পাশাপাশি মেয়েটিকে ঘিরে প্রতিবেশীদের নানা অশালিন মন্তব্যও সমানে চলতে থাকে। এতে করে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মেয়েটি। একপর্যায়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও তেমন কথা-বার্তা বলত না সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। এরই মধ্যে গত ১৬ মে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

মেয়েটির বাবার অভিযোগ, মামলার পরেও মেয়েটিকে কোনো নিরাপত্তা দিতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু তদন্তের নামে মেয়েটিকে একই বিষয়ে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করে মানসিকভাবে আরো বিপাকে ফেলানো হয়েছে। আত্মহত্যার দিনও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বাড়িতে গিয়ে মেয়েটিকে একই বিষয়ে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

তবে পুলিশের কোনো গাফলতি ছিল না বলে দাবি করেছেন মোহনপুর থানার ওসি আবুল হোসেন। তিনি বলেন, মামলা হওয়ার পরে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক আসামি এখনো কারাগারে আছে। আবার আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাজেই পুলিশ যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।

আরকে প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মামলার স্বার্থেই ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে মানসিকভাবে হয়রানির প্রশ্নই আসে না।

আত্মহত্যার আগে সুমাইয়া আক্তার বর্ষা এক চিঠিতে লিখেছে, ‘প্রিয় বাবা-মা তোমাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি অনেক কিছু পেয়েছি, অনেক আদর, অনেক ভালোবাসা। কিন্তু একটা মেয়ের কাছে তার মানসম্মান সবচেয়ে বড়। আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন পর পুরুষের কাছে এসব বলতে বলতে আমি আর পারছি না। অপরাধিকে শাস্তি দিলেই তো আমার মানসম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা করো। ’

এস/এল

Next Post

গভির রাতে ঢাবিতে ছাত্রলীগ নারীনেত্রীর হাউ মাউ করে কান্নার ভিডিও ভাইরাল।

রবি মে ১৯ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার সংগঠনটির নারী নেত্রীদের কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জেরে গতকাল শনিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে টিএসসিতে নারী নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সমর্থক সংগঠনের কর্মীরা এ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links