ঢাকা সিটি নির্বাচন করে প্রাণ গেল যুবকের, বুক খালি হলো এক মায়ের ।

আভা ডেস্কঃ আমার ছেলেটার কী দোষ ছিল? সারাদিন লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে নৌকা আর ঠেলাগাড়ির জন্য কাজ করেছে। বিকেলে বাসায় আইসা নাস্তা খাইয়া গেছে আড্ডা দিতে। সুস্থ-সবল ছেলেকে আমি আর বুকে ফিরে পাই নাই, পাবও না। হারলেও ওরা, জিতলেও ওরা। কিন্তু বুক খালি করল আমার। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি কোপে নিহত সুমন শিকদারের (২৪) মা ঝুমুর বেগম।
রাজধানীর লালমাটিয়া এফ ব্লকের ৪/২ ভবনের কেয়ারটেকার আনোয়ার আহমেদ শিকদারের ছেলে নিহত সুমন। এ ভবনের নিচতলায় বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন তিনি।
রোববার ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, উপার্জনক্ষম সন্তান হারানোর শোকে শয্যাশায়ী মা ঝুমুর বেগম। দুই বোন সুইটি ও সুবর্ণা মায়ের পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাই হাউমাউ করে বারবার কেঁদে উঠছেন।
নিহত সুমনের বোন সুবর্ণা বলেন, ঢাকা উত্তরের নৌকা মার্কার প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিল সুমন। ভোটের সারাদিন কাটিয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। ভোট শেষ হবার পর বাসায় এসে নাস্তা খায়। এরপর তার মোবাইলে একটা কল আসে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় ভাই। আর ফেরেনি। রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে ছুটে যাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দেখি রক্তাক্ত নিথর শরীর নিয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে আমার ভাই। ডাক্তার আর পুলিশের মুখে জানতে পারি সুমন ভাইকে কে বা কারা কুপিয়ে খুন করেছে।
মা ঝুমুর বেগম বলেন, আল্লাহ তুমি বিচার করো, কারা এমন করে আমার ছেলেটাকে খুন করল। আমার বুকটা ফাঁকা করল। আমি এখন কেমনে বাঁচুম!’
তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছেলেটারে কোপাইছে। আমি খুনের বিচার চাই। আমার ছেলের মতো আর কারো ছেলেখুন না হয়। এ মহল্লায় সবাই ওরে চেনে-জানে।
ছোট বোন সুইটি বলেন, রাতে খেতে আসার জন্য ভাইকে কল দেই, ধরে না। পরে আমরা খেতে বসি। ভাইয়ের খুনের খবর পেয়ে খাবার ফেলে দৌড়ে হাসপাতালে গেছি। আর কখনও ভাইকে পাব না। আর একসঙ্গে খাবার খাওয়া হবে না।
স্থানীয়রা জানান, নিহত সুমন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলামের লালমাটিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। সুমন শিকদারের বাবা আনোয়ার আহমেদ শিকদার লালমাটিয়ার এফ ব্লকের ৪/২ ভবনের কেয়ারটেকার। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত সুমনের বন্ধু সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি, সুমন, রুবেল, আল-আমিন, ইমরান (মেসি) ও ইমরানসহ ছয়জন মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার রহিম বেপারি ঘাটে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। হঠাৎ অর্ধশত যুবক এসে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবনের লোক কে কে আছে বলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে সুমন আহত হলে আমরা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারী সবার মুখে মাস্ক পরা থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি।’
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রবাহ বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে নিয়ে আসার আগেই সুমনের মৃত্যু হয়। বুকের ডান পাশে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া তার পেট, পা ও পিঠসহ শরীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
মোহাম্মাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, সুমন হত্যায় জড়িতদের শনাক্তে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি। নিহতের বাবাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এ ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Next Post

রাজশাহী মহানগর পুলিশের বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত ।

সোম ফেব্রু. ৩ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বিকেলে আরএমপি পুলিশ লাইন্স মাঠে এ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links