আভা ডেস্কঃ তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বিধিবিধান বিএনপির জন্য লাভজনক। কারণ আমাদের দেশে মন্ত্রী বা এমপিরা প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না।
মঙ্গলবার অপরাহ্নে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর নেতৃত্বে কমিটির সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রী। তথ্য সচিব কামরুন নাহার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছে কিনা- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে তো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আছেই এবং সেটি বিএনপির পক্ষে। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মন্ত্রীরা সরকারি প্রটোকল বাদ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, যে পর্যায়েরই মন্ত্রী হোন না কেন? সংসদ সদস্যরা তো পারেনই। সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীর অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। আমরা পারছি না। এটি বরং বিএনপিকে সুবিধাজনক অবস্থান দিয়েছে সুতরাং প্লেয়িং ফিল্ডটা তাদের পক্ষে।
বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ড. হাছান বলেন, প্রথমত বিষয়টি পুরোপুরিভাবে না জেনে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি পরিবেশকে ঘোলাটে করার জন্য একটি মহল সক্রিয়। এটি সেই পক্ষেরই কারসাজি কিনা? সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আর বিএনপির প্রথম থেকেই প্রচেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। সুতরাং নানা ধরনের ঘটনা প্রবাহের মধ্যদিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া, এটি সেই প্রক্রিয়ারও অংশ কিনা- সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
চট্টগ্রামে গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ৩২ বছর পর এ হত্যা মামলার রায় হয়েছে। এজন্য অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট। আমি মনে করি, এ গণহত্যা চালানোর জন্য ঢাকা থেকে যারা নির্দেশ দিয়েছিল তাদেরও আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ১৯ বছর আগে সিপিবির সমাবেশে যেভাবে হামলা করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। সেটিরও যে বিচার হয়েছে, এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করছি।’
গণহত্যার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে ড. হাছান বলেন, ‘১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে একটি জনসভা করার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গাড়িবহর নিয়ে আসছিলেন। আমি নিজে সেই গাড়িবহরের মিছিলের সামনের সারিতে ছিলাম। আমরা যখন কোতোয়ালি মোড় অতিক্রম করি তখন থেকেই গুলি শুরু হয় এবং নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২৪ জন বলা হলেও আসলে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি কারণ সেদিন অনেক লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল। আমাদের হিসাব ৩০ জনের বেশি, কারও কারও মতে সেটি ৩৬। জননেত্রী শেখ হাসিনার মিছিলে ওপর নির্বিচারে গুলি তাকে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যেই। যারা এ হামলা পরিচালনা করেছিল তাদের উত্তরসূরিরা কিন্তু এখনও সক্রিয়। আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রথম আলোর সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয় যে, দেশে আইন এবং আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, তাদের জামিন পাওয়ার মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে।
চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, চলচ্চিত্রের বন্ধ্যত্ব কেটে গেছে এবং মধ্যবিত্ত আবার হলমুখী হয়েছে।
সভার শুরুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর নেতৃত্বে সদস্যরা তথ্যমন্ত্রী ও তথ্যসচিবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
খোরশেদ আলম খসরু প্রতিটি চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষে বিএফডিসি থেকে সেন্সর বোর্ডকে প্রদেয় ছাড়পত্রের জন্য নবনির্ধারিত এক লাখ টাকা ফিস কমানোর আবেদন জানান ও চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
যুগান্তর