ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনেও আপনিও হতে পারেন আসামী।

আভা ডেস্কঃ প্রযুক্তির সুবাদে আজ সমগ্র বিশ্বের মানুষ খুব সহজেই পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিচরণ করছে। তথ্য-প্রযুক্তির ক্রম বর্ধমান বিকাশ এবং উৎকর্ষে সমগ্র পৃথিবী এখন মানুষের নখদর্পণে বা হাতের মুঠোয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন মানুষকে অধিক মাত্রায় ইন্টারনেট জগতে আকর্ষণ করছে।

বিভিন্ন গবেষণা বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটির বেশি। আর এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ মূলত মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এবং ৬ শতাংশ ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে এ সেবা গ্রহণ করছে।

বর্তমানে আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে শিশু। এসব শিশুর মধ্যে কত শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তার প্রকৃত পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা যায় যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু রয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ‘বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক জরিপে দেখা গেছে যে, দেশের ২৫ শতাংশ শিশু ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করে, যাদের মধ্যে ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইনে হয়রানি, সহিংসতা, ভয়-ভীতি ও নিগ্রহের শিকার হয়। জরিপটি ১২৮১ শিশুর উপর চালানো হয়।

জরিপে আরো দেখা গেছে, ৯৪ শতাংশেরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট আছে, ৬৩% শিশু নিজের ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ফলে তাদের ওপর অভিভাবকদের নজরদারি কম থাকে।

জরিপ থেকে আরো জানা গেছে, ১৪ শতাংশ শিশু ইন্টারনেটে পরিচয় বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছে, ১৭ শতাংশ শিশু অপরিচিতদের সাথে ভিডিওতে কথা বলেছে, ১১ শতাংশ শিশু তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে বন্ধুদের জানিয়েছে, ১৬ শতাংশ শিশুর অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে এবং ৯ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সময় ধর্মীয় উস্কানিমূলক বার্তা পেয়েছে। (সূত্র: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, দৈনিক প্রথম আলো)।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মেয়েদের ৭৭ শতাংশই ফেসবুক কেন্দ্রীক সাইবার অপরাধের শিকার হয়। পাসওয়ার্ড হ্যাকিংয়ের শিকার হয় ১২ শতাংশ, ৪ শতাংশ ইমেইল ও এসএমএস হুমকি, ২ শতাংশ সাইবার পর্নোগ্রাফি এবং ৫ শতাংশ আইডেনটিটি থেফটের শিকার হয়। (সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ, তারিখ: ২০ এপ্রিল ২০১৭)

ইন্টারনেট মানুষের জীবনযাত্রাকে বহুমাত্রিকভাবে সহজ করেছে, জ্ঞানের পথকে উন্মুক্ত করেছে-এটা খুবই সত্য কথা। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাত্রাকে বিশেষত নারী ও শিশুদের জীবনকে অনেক ক্ষেত্রে কঠিন করে তুলেছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর সবাই যে ইন্টারনেটের প্রকৃত ব্যবহারের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে তা নয়, বরং এর অপব্যবহারের মাধ্যমে অনেকে নানা অপরাধ, হয়রানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। নারীরা, বিশেষত শিশুরা নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ধরনের হয়রানি নানাভাবে করা হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (যেমন-কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাব) মাধ্যমে নানাভাবে শিশু নির্যাতনের শিকার হতে পারে। যেমন: ওয়েবক্যামের মাধ্যমে অনলাইনে ধারণকৃত শিশুর যৌনচিত্র প্রচার এবং তার বিনিময়ে অর্থ আদান-প্রদান করার মাধ্যমে।

সাইবার হয়রানির মাধ্যমেও শিশু নির্যাতনের শিকার হতে পারে। যখন কোনো ব্যক্তি ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যজনকে হুমকি বা ভীতিমূলক বার্তা প্রদান করে, তখন তাকে সাইবার হয়রানি বলে। এর শিকার শিশুও হতে পারে।

অনেক সময় শিশুরা কোনো বল প্রয়োগ ছাড়া সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় যৌন উত্তেজনামূলক ছবি বা ভিডিও ধারণ করে থাকে, একে সেক্সটিং বলে। এই ছবিগুলো তারা তাদের ছেলে বা মেয়ে বন্ধুকে পাঠায়। কিন্তু কিছুদিন পর তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে এই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তিরা তা সংগ্রহ ও বিক্রি করতে পারে, যা শিশুদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিকাশের ক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দেবে। আমাদের দেশে আমরা প্রায়শ দেখি এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

শিশুরা তাদের যৌন উস্কানিমূলক ছবির কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনকারীরা তাদের এই ছবিগুলো ওই শিশুর বন্ধু, পরিবার বা বৃহৎ পরিসরে বিতরণ করার হুমকি দিয়ে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করতে পারে। এই ধরনের আচরণকে সেক্সটরশন বলা হয়।

গ্রুমিংয়ের মাধ্যমেও অনলাইনে শিশু নির্যাতন হতে পারে। গ্রুমিং হলো যখন কোনো বয়স্ক ব্যক্তি বন্ধুত্বপূর্ণ উৎসাহব্যঞ্জক অথবা কূটকৌশলের মাধ্যমে কোনো শিশুকে যৌন কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে। এ ধরনের অনেক গ্রুমিংয়ের ঘটনা ইন্টারনেট বিশেষত ফেসবুকের মাধ্যমে তৈরি হয়। পরে তারা সরাসরি দেখা করতে আসে এবং নানা কৌশলে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। গ্রুমিংয়ের অংশ হিসেবে নির্যাতনকারীরা শিশুদের যৌনতা-সম্পর্কিত কোনো ছবি বা যৌনসামগ্রী দেখতে প্ররোচিত করে। যৌনতাকে সাধারণ বিষয় হিসেবে শিশুদের কাছে উপস্থাপন করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

অনেক সময় শিশুকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে অথবা অর্থ উপহার, খাদ্য, চাকরি, ইত্যাদি দেয়ার মাধ্যমে তাকে যৌন শোষণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অন্য শিশুর যৌন শোষণের ভিডিও বা ছবির দৃশ্য দেখাতেও অপরাধী বাধ্য করে থাকে। কোনো শিশু যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জানালে অপরাধীরা শিশুকে অশ্লীল কথা বলে, অনেক ক্ষেত্রে তাকে বা তার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক নির্যাতন করে তাকে যৌন কাজে যেতে বাধ্য করে। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি) দ্বারাও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন, কারো নামে ফেসবুকে জাল অ্যাকাউন্ট খুলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা বা কারো অ্যাকাউন্ট, পাসওয়ার্ড বা তথ হ্যাক করার মাধ্যমে হয়রানি করা। আবার অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে চ্যাটিং করার মধ্যদিয়ে শিশুরা অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হতে পারে।

বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে অনলাইনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যথেষ্ট কি না এ প্রশ্ন করা যেতেই পারে। দেখা যাক বিদ্যমান আইনী কাঠামোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কতটুকু যথেষ্ট:

ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড পলিসি ২০০৯- ‘এ পলিসি শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক হয়রানির বিষয়ে নীরব। এমনকি পলিসির ৯.১ ও ৯.২ দফা মোতাবেক বিভিন্ন আইন প্রণীত হলেও সেখানে শিশুদের সুরক্ষায় উপযুক্ত বিধান যেমন যুক্ত করা হয়নি, তেমনি প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকে কীভাবে বিষয়টিকে মোকাবেলা করা যাবে সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ১০ নং দফা অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিত ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’

ক্যাবল টেলিভিশন সংযোগ রেগুলেটরি আইন ২০০৬- যে কোনো ধরনের পর্ন, নগ্ন,অশালীন অভদ্র ছবি প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক মেধা মননশীল ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এমন ধরনের কোনো তথ্য বা ছবি যা শিশুদেরকে নেতিবাচক দিকে উৎসাহিত করে তা প্রচার করাও সমান অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। (ধারা ১৯ অনুযায়ী)

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ উল্লিখিত আইনের ৫৭ ধারা অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ বেশ কিছু সাইবার অপরাধের প্রতিরোধে কার্যকর বিধান, তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর মাধ্যমে এ ধারটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী-
পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, প্রচার, ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ, বহন, যোগান এবং সরবরাহ নিষিদ্ধ;

শিশুকে ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা করলে কিংবা শিশু পর্নোগ্রাফি বিক্রয়, সরবরাহ ও প্রদর্শন করলে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড;

পর্নোগ্রাফি উৎপাদনে শিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করলে, তার জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে স্থির, ভিডিও, চলচ্চিত্র ধারণ করলে ৭ বছর কারদণ্ড ও ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড;

পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক বা ব্যক্তি মর্যাদাহানি করলে, ভয় দেখালে, মানসিক নির্যাতন করলে ৫ বছর কারাদণ্ড ও ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড;

ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, মোবাইল বা অন্যকোন ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে ৫ বছর কারাদণ্ড ও ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড;

এই আইনের অধীনে সংঘটিত কোন অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী প্রত্যেকেই একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অর্থাৎ, ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বা সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে/সহায়তায় শিশুরা যদি পর্নোগ্রাফির সংস্পর্শে আসে তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর আওতায় দণ্ডিত হতে পারেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-
ধারা-৫ অনুযায়ী সরকার সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা ও তার শাখা প্রশাখা থাকবে; এ সংস্থা ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকিসৃষ্টিকারী তথ্য ও উপাত্ত অপসারণ করতে পারবে, ব্লক করতে পারবে;

ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়ক হবে;
ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক প্রতারণা (যেমন: ফেইসবুকে তথ্য বিকৃতি) ৫ বছর কারাদণ্ডে/ ৫লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ;

পরিচয় প্রতারণা/ছদ্মবেশ ধারণ/ফেইক আইডি খোলা ৫ বছর কারাদ- বা ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ;
আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতিপ্রদর্শক তথ্য প্রেরণ ও প্রচার ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ;

অনুমতি ব্যতিত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার ৫ বছর কারাদ- বা ৫ লক্ষ টাকা অর্থদ-ে দ-নীয় অপরাধ;

ওয়েবসাইট বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাশে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ;

অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারী মূল অপরাধীর সমান শাস্তি পাবে;

জালিয়াতি, প্রতারণা বা ছদ্মবেশধারণকারীর অপরাধের শিকার ব্যক্তি ক্ষতির সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণও লাভ করবেন।

‘অনলাইনে শিশুরা সাধারণত যতপ্রকারে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে তার প্রায় প্রতিটির বিরুদ্ধে এই আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। বিটিআরসি শিশুদের সুরক্ষায় ব্রডব্যান্ড পলিসির আওতায় এই আইনের প্রয়োগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিত পরিকল্পণা গ্রহণ করতে পারে।’

ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সাইবার ক্যাফের মালিকগণের অসাবধানতা, দায়িত্বে অবহেলা কিংবা সম্ভাব্য অপরাধরোধে যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন কিংবা কোন শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয় তাহলে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর আওতায় দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।

ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং ট্রাভেল ও ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিশুদের যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট- এসিডি’। সংস্থাটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আলী হোসেনের মতে, প্রতিদিন অসংখ্য শিশু প্রস্তুত না হয়েই ইন্টারনেট এর জগতে প্রবেশ করছে। তারা এর ঝুঁকি এবং ঝুঁকি থেকে সুরক্ষার উপায় সম্পর্কে মোটেও অবগত নয়। তাদের পিতা-মাতাও ইন্টারনেটের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অকিবহাল নন। ফলে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য শিশু যৌন নির্যাতন কিংবা যৌন শোষণের শিকার হচ্ছে। আমরা খররের কাগজে কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া মারফত যে খবর পাই তা ঘটে যাওয়া ঘটনার খুবই সামান্য অংশ। বেশির ভাগ নির্যাতনের খবর অপ্রকাশিতই থেকে যায়। অজ্ঞতাজনিত কারণে অনেক শিশু অপরাধের সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্ট করছে। আমাদের স্নেহের শিশুদের জরুরি ভিত্তিতে সচেতন ও সতর্ক করা দরকার। অভিভাবক, শিক্ষক সম্প্রদায়সহ গণসচেতনতা তৈরি করা দরকার। আমাদের সকলের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সকলকে সমন্বিত এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। আশার কথা বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসিডির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে শ্রেণিকক্ষে নিরাপদ ইন্টারনের ব্যবহার এবং ক্ষতিকারক দিক এর প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন করছে।

সর্বোপরি, ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন ও শোষণ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় সমাজের সকলকে সুসমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের আগামী প্রজন্ম ভয়াবহ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে। এটা কাম্য হতে পারে না।

সরকার নানাভাবে ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধ করতে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় অসংখ্য পর্নো সাইট ব্লক করছে। সরকারি পর্যায়েও নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান নয়। বিলম্ব মোটেও কাঙ্খিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব বহুমূখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইন সংশোধন ও নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা অতীব জরুরি। সরকারকে অনতিবিলম্বে নিরাপদ ইন্টারনেটের ব্যবহারবিধ, পাঠ্য পুস্তকে সংযুক্ত করতে হবে, শিক্ষক সমাজকে সচেতন করতে হবে। ইন্টারনেট সেবাকে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করার জন্য সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে, শিশুদেরকে সচেতন করতে হবে। পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। সেইসাথে মা-বাবা তথা অভিভাবককে হতে হবে ইতিবাচক ও বন্ধুসুলভ মনভাবাপন্ন। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারবো শিশুর নিরাপদ ভবিষ্যৎ।

ডিসি/৩এল

Next Post

সাত বিদেশির বিরুদ্ধে সি আই ডির মামলা।

বৃহস্পতি জুন ১৩ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার ঘটনায় এবার সাত বিদেশির বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) সাইবার তদন্ত বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রশান্ত কুমার সিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানায় গত সোমবার এই মামলা করেন। এর আগে গত ৩ জুন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links