জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান এরশাদের একাল সেকাল।

নুরে ইসলাম শেখ, রংপুরঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাপা) এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ আর নেই। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার সকাল পৌনে ৮ টার সময় রাজধানীর সম্মিলিতি সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিঃসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর। গত ২৬ জুন থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে)চিকিৎসাধীন ছিলেন এরশাদ। সেখানে সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো। তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনীর জটিলতায় ভুগছিলেন। এরশাদের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারী খন্দকার দেলোয়ার জালালী তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

১৫ জুলাই সকাল ১০ টায় জাতীয় সংসদ সচিবালয় জানাজা শেষে সকাল ১১ টায় কাকরাইলের জাতীয পার্টি অফিসে সর্বসাধারনের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হবে। বাদ জোহর বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে হেলিকপ্টার যোগে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে রংপুরে। বিকেলে আবার লাশ ঢাকায় আনা হবে। আগামী ১৭ই জুলাই গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রপতি পদে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় নয় বছর সরকার চালানো এরশাদ আমৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুরের কুড়িগ্রামে মাতুলালয়ে।
তার বাবা মকবুল হোসেন ও মা মজিদা খাতুন। ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে এরশাদ ছিলেন দ্বিতীয়। অবশ্য ভাইদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। বাবা-মা আদর করে পেয়ারা নাম ডাকতেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে।
এরশাদের স্কুল এবং কলেজ জীবন কেটেছে রংপুর শহরে। ১৯৪৬ সালে দিনহাটা হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন করেন তিনি। এরপর ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।

সেখানে পড়ার সময় মনোযোগ দেন লেখালেখির দিকে। ছিলেন কলেজ ছাত্রসংসদেও সাহিত্য সম্পাদক। বাবা মকবুল হোসেন ছিলেন নামকরা আইনজীবী। এরশাদেরর ইচ্ছা ছিলো বাবার মতো বড় আইনজীবী হওয়ার। ১৯৫০ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। ভর্তি হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। মাত্র ২০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন এরশাদ।
বাবার ওপর চাপ কমাতে নিজেই শুরু করেন টিউশনি। বাবার মতো বড় আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এম এ ক্লাসে পড়ার পাশাপাশি ভর্তি হন ল কলেজে। ১৯৪৮ সালে এরশাদ কারমাইকেল কলেজের শ্রেষ্ঠ ত্র[ীড়াবিদ হবার গৌরব অর্জন করেন। বিশ^বিদ্যালয়ের ও ক্রিড়া দলের তিনি ছিলেন কৃতি খেলোয়াড়। ১৯৫৩ সাল থেকে ৫৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা অঞ্চলের ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

১৯৫২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশণ লাভ করেন এরশাদ। এরপর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। সেনা কর্মকর্তা হিসেবে এরশাদ প্রথম নিয়োগ পান ২ নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের কোয়েটে স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সমাপ্ত করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে শিয়ালকোটে ৫৪ বিগ্রেডের ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট অ্যাডজুট্যান্ট ও কোয়াটার মাস্টার জেনারেল ব্রিগেড মেজর ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি এরশাদ। তিনি ওই সময় পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ১২ ডিসেম্বর এরশাদ কর্ণেল হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সরকার উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের দিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে পাঠায়। সেখানেই প্রশিক্ষণকালে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। ওই বছরই আগষ্ট মাসে আবার পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন।

১৯৭৮ সালের ১ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৯ সালের ৭ নভেম্বর তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের ৫টি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে ৫টি আসনে বিজয়ী হন।

২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪ টি আসন নিয়ে বিজয়ী হন। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল ২৭ টি আসন নিয়ে বিজয়ী হন।
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সামনে আসে জাতীয় পার্টি। তবে এরশাদ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দুত। তার স্ত্রী রওশন এরশাদ বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে সংষদে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সংসদে বিরোধী দলে জায়গা পায় জাতীয় পার্টি। এরশাদ হন বিরোধী দলের নেতা।

এরশাদের ৪টি স্থানে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জুলাই বাদ জোহর ক্যান্টমেন্ট কেন্দ্রীয় জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে লাশ রাখা হবে হিমঘরে।

১৫ জুলাই সকাল ১০ টায় জাতীয় সংসদ সচিবালয় জানাজা শেষে সকাল ১১ টায় কাকরাইলের জাতীয পার্টি অফিসে সর্বসাধারনের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হবে। বাদ জোহর বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে হেলিকপ্টার যোগে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে রংপুরে। বিকেলে আবার লাশ ঢাকায় আনা হবে। আগামী ১৭ই জুলাই গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।

Next Post

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে

সোম জুলাই ১৫ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে বহিরাগত এক যুবকের বিরুদ্ধে। ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ওই যুবক গত দুই দিন ধরে দশ হাজার টাকা দাবি করে আসছে বলে জানা গেছে। গতকাল রবিবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। অভিযোগকারী […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links