জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেওয়া ১০৪ প্রার্থী চাকুরীতে যোগ দিতে পারছেন না ।

আভা ডেস্কঃ সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পেয়েও ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) মুক্তিযোদ্ধা কোটার ১০৪ প্রার্থী চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত উপকমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা আমলে নেয়নি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের তথ্য-উপাত্ত ৬ ও ৮ জানুয়ারি আবারও যাচাই-বাছাই (শুনানি) হবে। দ্বিতীয়বারের মতো জামুকায় হাজির করতে হবে তথ্য-প্রমাণাদি ও যুদ্ধকালীন সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধাদের। তারপরই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর জামুকা কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার যে তালিকা করা হয়েছে তাতে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেকের নাম নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত প্রার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, উপকমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে আরও অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে জামুকা। তাই ৬ ও ৮ জানুয়ারি আবারও শুনানি নেয়া হবে। তারপর তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে ভুক্তভোগীরা বলেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা অভিভাবকরা সবাই গেজেটভুক্ত, সরকারের দেয়া সম্মানী ভাতা ও সব ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত। এমনকি পিএসসির নির্ধারিত মুক্তিযোদ্ধা কোটার সব ধরনের শর্ত পূরণ করেই তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের সঙ্গে উত্তীর্ণ অন্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগদান করেছেন।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পাওয়ায় তাদের নিয়োগের গেজেট জারি করছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে ১ অক্টোবর জামুকার সদস্য মোতাহার হোসেন এমপিকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের উপকমিটি করা হয়।

কমিটির অন্যরা হলেন- জামুকার সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার এমপি ও মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক। উপকমিটি ২২ অক্টোবর ও ২৪ নভেম্বর পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত ১২৪ জনের মুক্তিযোদ্ধা অভিভাবকের সাক্ষাৎকার নেয় এবং তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

প্রতিবেদনে সব প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হয়। এরপরও ১০ ডিসেম্বর জামুকার ৬৬তম সভায় প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে পুনরায় যাচাইয়ের জন্য ৬ ও ৮ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের তথ্য-প্রমাণাদি ও সাক্ষীদের নিয়ে জামুকায় হাজির হতে বলা হয়েছে। এরপরই ১৯ ডিসেম্বর ১২৪ জনের মধ্যে ১০৪ জন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন।

জামুকার নির্দেশনাকে ভোগান্তি উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, যারা জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তারাই আজ বারবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের উত্তরসূরি আমরা পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও গেজেটভুক্ত হতে না পেরে অনিশ্চয়তায় চরমভাবে মর্মাহত। তাই দ্রুত গেজেটভুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর অভিভাবক যুগান্তরকে বলেন, নিয়মানুযায়ী আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তথ্য-প্রমাণ ও প্রবীণ বয়োবৃদ্ধ সহযোদ্ধাদের হাজির করেছি জামুকায়। এরপর প্রতিবেদন দিয়েছে এ সংক্রান্ত উপকমিটি। তারপরও কেন সেই প্রতিবেদন আমলে নেয়া হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

কেন উপকমিটির প্রতিবেদন আমলে নেয়া হয়নি- জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামুকার একজন সদস্য বলেন, উপকমিটি ঢালাওভাবে সবাইকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। কিন্তু জামুকা কর্তৃক গঠিত উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন থেকে তিন ধরনের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

‘ক’ তালিকা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত তালিকা। ‘খ’ হচ্ছে কমিটির দ্বিধাবিভক্ত মতের ভিত্তিতে করা তালিকা। অর্থাৎ তাদের বিষয়ে উপজেলা কমিটির একটি অংশ সায় দিয়েছে, অপর অংশ বিরোধিতা করেছে। আর ‘গ’ হচ্ছে কমিটির নামঞ্জুর করা তালিকা। পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত ১২৪ জনের মধ্যে কোনো তালিকায় নাম নেই এমন সংখ্যা ৩৪।

জামুকার কোনো প্রতিবেদনে নেই এমন সংখ্যা ২৭। ‘গ’ তালিকায় আছে ৮ জন। প্রশ্ন উঠেছে, কোনো তালিকায় নাম না থাকা ৩৪ জন ও ‘গ’ তালিকার ৮ জনকে কিসের ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ১২৪ জনকেই নিয়োগের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হলে ‘গ’ তালিকাভুক্ত ৮ জন, কোনো তালিকায় নাম না থাকা ৩৪ জন এবং প্রতিবেদন না পাওয়া ২৭ জনসহ সবাইকে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বহাল রাখতে হবে। অর্থাৎ তাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলে স্বীকার করে নেয়ার নামান্তর।

এটি করা হলে এতদিনের যাচাই-বাছাই নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মূলত অধিকতর শুনানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে জামুকা। জামুকার সিদ্ধান্তে হতাশ নিয়োগবঞ্চিত একজন যুগান্তরকে বলেন, আইনি জটিলতায় ১১৬টি উপজেলায় যাচাই-বাছাই হয়নি, ফলে সেখানে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

তার মধ্যে আমিও একজন। অথচ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সবই পাচ্ছেন। তাহলে কেন আমার নিয়োগ আটকে যাবে?

জানা গেছে, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) পিএসসি ৪ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে ৩০ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০ নভেম্বর ৪ হাজার ৪৪৩ জন এবং ৮ ডিসেম্বর ১৬৮ জনসহ ৪ হাজার ৬১১ জনকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু ঝুলে যায় বাকি ১৮১ জনের ভাগ্য। এর মধ্যে ১২৪ জনই মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী, যার ১০৪ জন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

যুগান্তর

 

Next Post

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে বিদেশ ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা

মঙ্গল ডিসে. ২৪ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তান সরকার। অর্থ আত্মসাৎ এবং দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দেশত্যাগের অনুমতি দেয়নি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রশাসন। সোমবার এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৬ বছর বয়সী মরিয়ম নওয়াজ গত বছরের আগস্ট থেকেই দুর্নীতির […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links