জননেতা কর্মবীর ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা’র মৃত্যু বার্ষিকী

আভা ডেস্কঃ উত্তরবঙ্গের বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি নিভৃত পল্লী দাদনচক গ্রাম। এই গ্রামটি দেখলে মনে হবে যেন এপার বাংলার শান্তি নিকেতন। এখানে রয়েছে ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত দাদনচক বেল আফরোজ ইদ্রিশী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারী স্কুল।

১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দাদনচক এইচ.এম উচ্চ বিদ্যালয় ও একটি প্রাইমারী স্কুল। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উত্তর বঙ্গের ৪র্থ প্রাচীন আদিনা ফজলুল হক সরকারী কলেজ। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশের প্রথম দাদনচক ফজলুল হক প্রাইমারী ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও দাদনচক ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল। ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা শুধু এই সব প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে থেমে থাকেননি, তিনি উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোরালো ভুমিকা রাখেন। তিনিই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রথম জেষ্ঠ্য সিনেটর। তার নেতৃত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। লাখে নয় হাজারেও নয়, বর্তমান প্রজন্ম কি এই ক্ষণজন্মা পুরুষ ইদ্রিশ আহমেদ মিঞাকে চেনেন?

তার জন্ম ১৮৯৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামের এক মুসলিম মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯১০ সালে তিনি যখন অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র তখন নিজ উদ্যোগে নিজ গ্রামে নারী শিক্ষার জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা পরবর্তীতে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।

ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা ১৯১৩ সালে প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৫ সালে রাজশাহী কলেজ হইতে প্রথম বিভাগে আই.এ পাশ করেন ও একই কলেজ হতে ১৯১৭ সালে প্রথম শ্রেণী ও ডিষ্টিংসন সহ বি.এ পাশ করেন। তিনি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর চাকরী পরিহার করে জনসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯২৬ সালে দূর্লভপুর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে প্রথম ব্যালটের মাধ্যমে তৎকালীন দক্ষিন মালদা আসন হতে এম.এল.এ নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক উপদেষ্টা মনোনীত হন। দীর্ঘ ৯ বছর অর্থাৎ ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি জন প্রতিনিধি হিসেবে তার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যান। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট এর নৌকার প্রার্থী হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ আসন হইতে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা এবং পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী হিসেবে নির্বাচিত হন।

তিনি একজন নির্ভীক সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বলিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা প্রসারক, জন দরদী সমাজ সংস্কারক, প্রজা আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী জননেতা ও পবিত্র কোরানের মহাশিক্ষা লেখক। ক্ষণজন্মা এই মহান ব্যক্তি ইদ্রিশ আহমেদ মিঞা ১৯৬৬ সালের ৯ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত আদিনা কলেজ চত্বরে সমাহিত হন।

উল্লেখ্য যে, শের-ই-বাংলা এ.কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ইদ্রিশ আহমেদ মিঞার নামে তার প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন স্থাপনা নেই। আমি আশা করি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইদ্রিশ আহমেদ মিঞার কর্মের নিদর্শন স্বরুপ চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত একটি স্থাপনা তার নামে নামকরণ করবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ রইল ক্ষণজন্মা, শিক্ষা প্রসারক, ইদ্রিশ আহমেদ মিঞাকে শ্রদ্ধা জানানোর। তাকে সম্মান জানালে আমরাই সম্মানিত হবো । ইদ্রিশ আহমেদ মিঞার সমাধিতে তার রচিত দুটি লাইন লিখিত আছে।

‘হয়তো পারিনি কিছু, হয়তো পেরেছি। সম্পদে করিনি কিছু, সাহসে করেছি।’

Next Post

রাজশাহীতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন

রবি অক্টো. ৯ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আজ ১২ই রবিউল আওয়াল রোববার (৯ অক্টোবর) মুসলমানদের প্রাণের স্পন্দন হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন। এই শুভ দিনে প্রিয় নবী (সাঃ) দুনিয়ায় আগমন করেন। এদিন উপলক্ষে মুসলমানরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)  এর শুভ জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links