জনতা ব্যাংকের দুটি শাখায় হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।

ava desk : জনতা ব্যাংকের দুটি শাখায় হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় ১১টি প্রতিষ্ঠান এ জালিয়াতি করেছে। এর মধ্যে জনতা ভবন কর্পোরেট শাখায় ৬৫৫ কোটি এবং স্থানীয় কার্যালয় শাখায় ২৬৬ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। এমনকি খেলাপি থাকাবস্থায় এ তালিকা থেকে ফের নতুন ঋণ দেয়া হয়। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত জামানতও নেই। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জামানতের পরিমাণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বেশি দেখানোর মাধ্যমেও গ্রাহককে বেশি ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন শাখার কর্মকর্তারা।

আলোচিত দুই শাখায় ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক স্থিতির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এসব জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এ দুঃসংবাদ তো ব্যাংকটির নতুন দুটি শাখার। নিঃসন্দেহে এটি উদ্বেগজনক। তিনি জানান, এর আগে এ ধরনের অপরাধে সংশ্লিষ্ট শাখার বৈদেশিক বাণিজ্যের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। কিন্তু এতে সমাধান হয়নি। তিনি মনে করেন, এভাবে ব্যাংককে শাস্তি দিয়ে লাভ হবে না। যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনতা ভবন কর্পোরেট শাখায় উইন্ডো ড্রেসিং (ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে) ৯০ কোটি টাকা বেশি মুনাফা দেখানো হয়েছে। খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণের সুদ আদায়ে ব্যর্থ হয়েও তারা অনাদায়ী সুদকে আদায় হিসেবে দেখিয়েছে। অর্থাৎ ২০১৬ সালে আয় হতে পারে ভেবে ২০১৫ সালেই তা আয় হিসেবে দেখানো হয়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির মুখে পরে তা এন্ট্রি রিভার্স বা ফেরত আনা হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৫ সালে ব্যাংকের আয় কমে গেছে ৯০ কোটি টাকা।

শাখার পুনঃতফসিলকৃত কিছু ঋণের কিস্তি নিয়মিত আদায় না হওয়া সত্ত্বেও আরোপিত অনাদায়ী সুদ আয় খাতে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল এ ধরনের ৭৮ কোটি টাকা শনাক্ত করে তা ফেরত দিতে বাধ্য করেছে। ফলে এ আয়ও তাদের হিসাব থকে বাদ দিতে হয়েছে। এর বাইরে শাখাটি মেসার্স পবন টেক্সটাইল মিলসকে অনিয়মের মাধ্যমে বেশকিছু ঋণ সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১২ সালের সীমাতিরিক্ত ১৯ কোটি টাকার রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ঋণ দেয়া হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিবিরুদ্ধ। এ তহবিল থেকে সীমার বেশি ঋণ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। গ্রাহকের ইডিএফের আওতায় ৬৬ কোটি টাকার ঋণপত্রের দায় সমন্বয়ে করা ফোর্সড লোনকে অযৌক্তিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনর্ভরণযোগ্য পিএডি (পেমেন্ট অ্যাগেইনস্ট ডকুমেন্ট) হিসেবে দেখানো হয়। এ ছাড়া খেলাপি গ্রাহককে নতুন করে ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি লঙ্ঘন করেছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ৩৬ কোটি টাকার এলসি সীমা নবায়ন করা হয়েছে। পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিলযোগ্য হলেও শাখা তা করেনি।

এ ছাড়া শাখাটি মেসার্স এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল মিলসকে অনিয়ম করে অনেক ঋণ সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে তথ্য গোপন করে গ্রাহকের পক্ষে ৩৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ক্রয় এবং সে খেলাপি গ্রাহককে আবার বিধিবহির্ভূতভাবে নতুন করে প্রায় ১১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। শর্ত লঙ্ঘন করে একই গ্রাহককে ৬৫ কোটি টাকার এলটিআর ও সীমাতিরিক্ত পিএডি ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়। একইভাবে গ্রাহককে পণ্য ছাড়করণের সুযোগ করে দেয়া হয়। এলটিআর মেয়াদ উত্তীর্ণ ও খেলাপি থাকা সত্ত্বেও গ্রাহককে আরও ৫টি এলটিআর ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। অর্থাৎ খেলাপি গ্রাহককে নতুন ঋণ দেয়া হয়েছে। আদায় অনিশ্চিত খেলাপি থাকার পরও তড়িঘড়ি করে গ্রাহকের ১৭০ কোটি টাকা ঋণ অবলোপনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

শাখাটি মেসার্স এ্যালাইড ফার্মাসিউটিক্যালকে অনিয়মের মাধ্যমে দিয়েছে অনেক ঋণ। গ্রাহক থেকে ১৫ শতাংশ কম্প্রোমাইজ অ্যামাউন্ট গ্রহণ না করেই নতুন করে সিসি (হাইপো) ঋণসীমা ১০ কোটি এবং এলসিসীমা ৮ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই গ্রাহক থেকে প্রযোজ্য হারে ডাউন পেমেন্ট না নিয়ে ২০ কোটি টাকা তৃতীয়বার পুনঃতফসিল এবং মেয়াদি ঋণে রূপান্তরিত সিসি (হাইপো) ঋণ ৮ কোটি টাকা দ্বিতীয়বার পুনঃতফসিলের অনুমোদন দেয়া ছিল নিয়মের লঙ্ঘন। একইভাবে মেসার্স জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড ও মেসার্স জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড কেমিক্যাল ডিভাইসেসকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিপুল অঙ্কের ঋণ সুবিধা দিয়েছে জনতা ভবন কর্পোরেট শাখা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশদ পরিদর্শনে আরও দেখা যায়, জনতা ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় শাখায়ও উইন্ডো ড্রেসিং করে ৭৩ কোটি টাকার জালিয়াতি করা হয়। এতে দেখা গেছে, মেসার্স আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড, মেসার্স সিক্স সিজনস লিমিটেড এবং মেসার্স ফিনকোলি অ্যাপারেলসের পুনঃতফসিলকৃত ঋণে আরোপিত অনাদায়ী সুদ প্রায় ১৬ কোটি টাকা ২০১৬ সালে আদায় হবে ভেবে ২০১৫ সালে আয় দেখানো হয়। একইভাবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিতুন ফেব্রিক্সের ২৮ কোটি এবং মেসার্স বেক্সিমকো লিমিটেডের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আয় খাতে নেয়া হয়। যা সম্পূর্ণভাবে জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মেসার্স লিতুন ফেব্রিক্সের বিভিন্ন ঋণ হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, শাখাটি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে অকাতরে ঋণ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হওয়ার পরও বারবার নন-ফান্ডেড ঋণ দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে ২১ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে প্রায় ২৪ কোটি টাকা বর্তমানে ফান্ডেড ঋণে পরিণত হয়েছে। এরপর আবার ২০১৫ সালে ৪০ কোটি টাকার চলতি মূলধন এবং প্রায় ৩৪ কোটি টাকার বিএমআরই ঋণ মঞ্জুর করা হয়। এভাবে ঋণ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কৈফিয়ত তলব করে। কিন্তু তাতে কোনো সন্তোষজনক জবাব ছিল না। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুছ ছালাম আজাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।
jugantor

Next Post

জেলা প্রশাসকদের প্রধানমন্ত্রীর ২৩ নির্দেশনা, ‘নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে যদি কেউ বাধা দেয়, সরাসরি আমাকে জানাবেন ।

বুধ জুলাই ২৫ , ২০১৮
ava desk : চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ নির্দেশ ছাড়া আরও ২২টি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে যদি […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links