নাটোর প্রতিনিধি : ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগন যাকে পছন্দ করে এবং জনমত যার পক্ষে আছে- এমন নেতা মনোনয়ন পাবেন। জনপ্রিয়তা যাচাই করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। সকলের আমলনামা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। ছয়মাস পর পর রিপোর্ট জমা হচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচটা রিপোর্ট জমা হয়েছে।’
উত্তরবঙ্গের নয় জেলায় রেল সফরের অংশ হিসেবে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার দুপুরে নাটোর রেল স্টেশনে পথসভায় এসব কথা বলেছেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক ধারার রাজনীতি করে। আর বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির কারণে ভোট কমে যাচ্ছে। আগুন সন্ত্রাস, লুটপাট আর দূর্নীতিতে দেশকে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করার কারণে জনগন বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি এমন কোন কাজ করেনি যে, জনগন তাদের ভোট দেবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত দশ বছরে বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি। আগামী দু’মাসেও আন্দোলন করতে পারবেনা। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসেনা। খালেদা জিয়ার বিচার হচ্ছে আইন ও আদালতের মাধ্যমে। বিচার কাজে সরকারের করার কিছু নেই। আজ চেয়েছিলাম পথসভা, হয়ে গেল জনসভা। জননেত্রী শেখ হাসিনা আসলে হয়ে যেত জনসমুদ্র।’
নাটোরবাসীর উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা বিএনপির করা এমন কোন কাজ দেখাতে পারবেন, যা দেখিয়ে বিএনপি আপনাদের কাছে ভোট চাইবে?’ ৮০ র দশকে রেল সফরে নাটোরে আসার পথে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করা হয়েছে। বিএনপির ক্যাডার বাহিনী তাকে স্টেশনে নামতে দেননি। কিন্তু আজ সে অবস্থা নেই। জনগন তাদের প্রত্যাখান করেছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপির সভাপতিত্বে পথসভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল এমপি, এডভোকেট আবুল কালাম এমপি বক্তব্য রাখেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈশ্বরদী মুলাডুলিতে আওয়ামী লীগের পথসভায় এ সব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী। ট্রেন যোগে উত্তরাঞ্চল সফরের দ্বিতীয় পথসভা ছিল এটি।
ইশ্বরদীতে সেতুমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। মায়েরা এখন এসএমএসে টাকা পাচ্ছে, বাবারা নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাগজে নাম লিখুন ছিঁড়ে যাবে, পাথরে নাম লিখুন খসে যাবে, আপনারা জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম হৃদয়ে লিখে রাখুন; তবেই সেই নাম আজীবন রয়ে যাবে।’
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি। এ সময় জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী ও আহমদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে টাঙ্গাইল রেলস্টেশনে প্রথম পথসভা করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিলে শতভাগ উন্নয়ন ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাবেন। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলে কোন্দল সৃষ্টি করবেন না। ঘরের ভিতর ঘর তৈরী করবেন না। এ্যাকশন শুরু হয়েছে, শেখ হাসিনার এ্যাকশন ডাইরেক্ট এ্যাকশন। যারা দলে কোন্দল করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে শনিবার সকাল ৮টায় নীলফামারীগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ চাপেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নেতাকর্মীদের চাঙা এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরতে উত্তরাঞ্চল সফরে বের হন তিনি।
কমলাপুর স্টেশন থেকে রওনা হওয়ার আগে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই যাত্রা আমাদের নির্বাচনী যাত্রা। এই যাত্রা আমাদের অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই সফর।’
তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। প্রস্তুতি সেভাবেই নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা থাকলে তা নিরসন করা হবে। আমাদের এই যাত্রা তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা করবে।’
এই সফরের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা থেকে নীলফামারী যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়ার শান্তাহার, জয়পুরহাট, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, দিনাজপুরের বিরামপুর, ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর ও নীলফামারীর সৈয়দপুর স্টেশনে পথসভা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে এই ট্রেনের যাত্রাবিরতি ৩ থেকে ৪ মিনিট হলেও পথসভা উপলক্ষে নীলসাগর এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি হবে ১০ মিনিট। এই যাত্রা বিরতিতেই ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।
ওবায়দুল কাদের জানান, ‘এই ট্রেন যাত্রার মতো নৌ ও সড়ক পথেও অচিরেই তাদের সফর হবে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর লঞ্চ যোগে নির্বাচনী সফর করব আমরা। এরপর বাই রোডে আমাদের চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ যাওয়ার কথা রয়েছে।’
‘তৃণমূলের মানুষ যাতে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের রাজনীতির বিষয়ে বিষয়ে সচেতন হয়, সে বিষয়ে দলের এই সাংগঠিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে,’ আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রেন সফরে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ দপ্তর বিপ্লব বড়ুয়া।