আভা ডেস্কঃ বগুড়ায় সাবেক দুই ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ইংরেজির প্রভাষক আবদুল মোত্তালিবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক শুক্রবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান সোহাগ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়ার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারি জানান, প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও আবদুল মোত্তালিব ছাত্রীদের সাথে সবসময় অশোভন আচরণ করে থাকেন। তারা সাবেক দুই ছাত্রীকে মোবাইল ফোন এবং ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে উত্ত্যক্ত ও হয়রানি করে আসছিলেন। আবদুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে এর আগে এক ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ উঠে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিয়াম ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে। এতেও তিনি সংশোধন হননি।
গত ২০ জানুয়ারি প্রভাষক মামুন তার বাড়ির সামনে ওই ছাত্রীকে আটকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ছাত্রীর পরিবার এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি সাবেক ডিসি ফয়েজ আহাম্মদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অদৃশ্য কোন শক্তি ঘটনাটি সমঝোতা করতে ছাত্রীর পরিবারকে বাধ্য করেন।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রী তার ফেসবুক আইডিতে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। শিক্ষক ছাত্রীর কাছে ফোনে ক্ষমা চান। পরে শিক্ষক ও ছাত্রীর কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়।
এদিকে আবদুল মোত্তালিব সাবেক এক ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত আসছিলেন। তিনি গত ২৬ আগস্ট বুধবার ছাত্রীকে তার ফেসবুক আইডি থেকে অশালীন মন্তব্য করেন। ছাত্রী এসব ভাইরাল করেন।শিক্ষক মোত্তালিব ওই পোস্ট সরিয়ে নিতে ছাত্রীকে ফোনে হুমকি দেন।
দুই শিক্ষকের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে অন্য শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অভিযোগটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক অবহিত হলে শুক্রবার রাতে দুই প্রভাষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
অন্য দু’সদস্য হলেন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ও বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. মুস্তাফিজুর রহমান। তবে অধ্যক্ষকে তদন্ত কমিটিতে রাখায় অনেক অভিভাবক হতাশ হয়েছেন। তারা মন্তব্য করেন, অধ্যক্ষের অবহেলা বা প্রশ্রয়ে শিক্ষকরা সন্তানতুল্য ছাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জেলা প্রশাসক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। নির্দিষ্ট বেঁধে দেয়া না হলেও শিগগিরই তারা রিপোর্ট দিবেন।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রীরা বলেছেন, সমাজ ও পরিবারের বাধারমুখে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারের পরিবর্তে সমঝোতা হয়ে যায়। ফলে তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানে এমন অনৈতিক ঘটনা বেড়েই চলেছে। তারা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দুই প্রভাষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ছাত্রীর সঙ্গে তার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। যা তার পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবদুল মোত্তালিব এ প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, তার ফেসবুক আইডি বার বার হ্যাক হয়। তবে ছাত্রীকে ফোন করা প্রসঙ্গে তিনি নিরব থাকেন।