নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলায় পুকুর খননের যেন হিড়িক পড়ে গেছে। জেলাজুড়ে অভিযান চললেও অভিযান নেই চারঘাট উপজেলায়। ফলে এ উপজেলায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অনেকটা নির্বিঘ্নে পুকুর খনন চলছে। এতে করে যেমন কৃষি জমি হারাতে হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। নির্বিচারে কৃষি জমিতে পুকুর খননের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। পুকুর খনন করে পাওয়া মাটি বিক্রি হচ্ছে উপজেলার ইটভাটায়।এই মাটি পরিবহনের সময় নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাটঘটছে ছোট কাটো দূর্ঘটনা।
রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় উপর্যুপরি পুকুর খননের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরপরও চারঘাট উপজেলায় পুকুর খননের বন্ধ নেই। অন্য জায়গায় যেখানে হয়তো প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে না, সেখানে দিনের বেলায় প্রকাশ্যেই চলছে পুকুর খনন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া, চারঘাট সদর, ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। তবে অধিকাংশ পুকুর খননকারীরা বিভিন্ন জমির মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লীজ নিয়ে এসব পুকুর খনন করছেন। আর নষ্ট করা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান। ধ্বংস করা হচ্ছে ধানসহ তিন ফসলীর জমির। এতে সাময়িক ভাবে জমির মালিকরা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়ছেন পুকুর খননকারী জমির আশে পাশে থাকা বাগান মালিক ও ফসলী জমির মালিকরা। তাদের দাবি, এভাবে যত্রতত্র ভাবে পুকুর খননের ফলে জলাবদ্ধতাসহ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমছে কৃষি জমির পরিমান।
গত রবিবার উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের, উমরগাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন সাখাওয়াত হোসেন নামের এক ব্যাক্তি। তিনি নিমপাড়া গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে। প্রতি বছরই তিনি জমি লিজ নিয়ে নতুন নতুন পুকুর খনন করেন বলে জানা যায়।
পুকুর খননের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন,’আমি পুকুরটি খননের জন্য মর্ডান সুপার ইট ভাটার মালিক মাইনুল হক কে লিজ দিয়েছি। ভাটার মালিকই স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করছে, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আমি শুধু পুকুরটি বুঝে পেলেই হলো’।
এদিকে নিমপাড়া ইউনিয়নের কামিনী ফকিরপাড়া গ্রামের গেলে সেখানে দেখা যায় জমির মালিক মহব্বত আলী দিনের বেলায় আম বাগান কেটে সাবার করে ফেলছেন। বাগান কেটে সেখানে কাটা হচ্ছে পুকুর। এ ব্যাপারে নিমপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অবগত আছেন বলে দাবী করেছেন মহব্বত আলী।
এছাড়াও একই ইউনিয়নের বালাদিয়াড় গ্রামে হাঁতেমের মোড়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলছে। এছাড়াও মুক্তারপুর সরকার পাড়া গ্রামেও সরদহ হেমন্তের মোড়ের পাশে চলছে পুকুর খনন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খনন সম্পুর্ণ ভাবেই অবৈধ। উপজেলার যে প্রান্তেই পুকুর খননের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। গোপনে কোন জায়গায় পুকুর খনন করা হলেও দ্রæত উপজেলা প্রশাসনকে সংবাদ জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের জনগনকে আহ্বান জানানো হয়েছে।