নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভোরের আভায় প্রকাশিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা ডিবির এস আই জাহিদের আটক বানিজ্যের ১ম পর্ব । এর ধারাবাহিকতায় আজ ১৯ আগস্ট প্রকাশিত হচ্ছে ২য় পর্ব । তবে ধারাবাহিকভাবে থাকছে ৭ম পর্ব পর্যন্ত । তিনটি ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত ১ম পর্ব নিয়েই নড়েচড়ে বসেন এই এস আই আবু আব্দুল্লাহ জাহিদ । নিজের সোর্স ও দালাল দ্বারা ফেইসবুকে সংবাদের প্রতিবাদ দেওয়ায় জাহিদ । প্রতিবাদকারীরা প্রত্যাক্ষ পরোক্ষভাবে জাহিদের অপকর্মের সাথে বলেই এলাকার সুধী সমাজ মনে করছে । দেশে আলোচিত ওসি প্রদীপের ঘটনার উত্তরসুরি হিসাবেই কাজ করছে এস আই জাহিদ । যার কারণে স্থানীয় সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশে ভয় পায় । এছাড়াও কিছু সাংবাদিককে তিনি সুবিধা দিয়ে নিজের পক্ষে করে রেখেছেন। তারপরও যদি কেউ তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে তাহলে তার পরিনতি ভয়াবহ করে তুলে এস আই জাহিদ ।
দীর্ঘ ৪ বছর ধরে কর্মরত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশে, গড়ে তুলেছেন মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সক্ষতা । মাদক ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে নিরিহ মানুষকে ফাঁসাতে তার জুড়ি নেই ।
যাই হোক, ৪ বছরে তার অনেক কিছু অর্জন থাকলেও ঘুষ, দুর্নীতি ও গ্রেফতার বানিজ্যেও পিছিয়ে নেই তিনি।
১ম পর্বের পর আটক বানিজ্য – ৪
গত ৩ আগস্ট এস আই জাহিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন তেলকুপি এলাকায় রিফুজি পাড়া থেকে মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে রিপন নামের একজনকে আটক করেন। আটক রিপনকে ৬০ হাজার টাকায় ছেড়ে দেন । টাকা লেনদেন করেন জিন্নাত ওরফে জিন্নু মেম্বারের মারফতে । একই দিন আরও এক ব্যাক্তিকে আটক করে্ন তিন শত বোতল ফেন্সিডিলসহ। কিন্তু উক্ত ব্যাক্তি ও আটক ফেন্সিডিল জমা হয়নি জেলা ডিবি অফিসে । ঘটনার পরপর দীর্ঘ সময় নিখোঁজ আছেন সেই আটক ব্যাক্তি । তবে ফেন্সিডিলগুলো বিক্রি করেছে অন্য এক তার সহযোগী মাদক ব্যবসায়ীর নিকট ।
আটক বানিজ্য – ৫
গত ১৪ আগস্ট আড়াই থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তার নিজস্ব টিম নিয়ে অভিযানে যান ইসমাইল হোসেনের বাড়ি । ইসমাইল আজমতপুর মোন্নাটোলা এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে । তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে গিয়ে পাশ্ববর্তী সাইদুরের বাড়ি নিয়ে যায় । সাইদুরের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে কোন কিছু না পেয়ে এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি সৃষ্ট হয় । এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদুরের স্ত্রীসহ তার যুবতি মেয়েকে মহিলা পুলিশ ছাড়াই তাদের গায়ে হাতদিয়ে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে । সাইদুরের বাসা থেকে ফিরে এর ১ ঘন্টার ব্যবধানে ইসমাইল এর বাড়িতে গিয়ে বাড়ীর ভিতর কাউকে না ঢুকতে দিয়ে এসআই জাহিদ অস্ত্র উদ্ধার দেখায়, প্রথমে তাকে বাসায় থেকে ডেকে নিয়ে গেলেও সেখানে তার বাসায় চারজন পুলিশ সাদা পোশাকে রেখে যায় । যে চারজন ইসমাইলের অনুপস্থিতিতে তার ঘরে ঢুকে পরবর্তীতে তারা দরজায় বসে থাকে । এরপর এস আই জাহিদ আসলে তার ঘর থেকে অস্ত্র উদ্ধার দেখায় । তখন এটা সাজানো নাটক বলে ইসমাইল এর মা সহ অনেকেই প্রতিবাদ করায় ইসমাইলের মা সহ ইসমাইলের ৪ বছরের ছোট ভাইকেসহ জোর পুর্বক তুলে নিয়ে যান এসআই জাহিদ।
পরের দিন ইসমাইলকে অস্ত্র সহ চালান দিলেও অজ্ঞাত কারনে ৩ দিন ধরে ইসমাইলের মা ও ইসমাইলের আপন ছোট ভাই ৪ বছরের শিশু বাচ্চাকে গুম করে রেখে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইসমাইলের মা ও ইসমাইলের আপন ছোট ভাইকে মুক্তি দেন।
এদিকে সাইদুর, সাইদুরের স্ত্রী ও যুবতি মেয়েকে মেন্টালী টর্চার করে তাদের কাছ থেকেও ৩দিন আটক রেখে ১ লাখ টাকা নিয়ে তাদের মুক্তি দেন।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিন ঘটনা স্থলে গেলে সাংবাদিকদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান – সাইদুর ও ইসমাইলের পরিবারের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা ওসি প্রদীপ ও ইন্সপেক্টর লিয়াকতের কর্মকান্ডের শামিল।এখন আতংকে ওলাকার কেউই মুখ খুলতে চাইছে না। তার অপকর্মের সঙ্গীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত কাউকে না কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে দুইদিন তিনদিন পযর্ন্ত গুম রেখে অর্থ হাতিয়ে নেন এস আই জাহিদ ।
আটক বানিজ্য-৬
চাঁপাইনবাগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে গিয়ে শিবির ও জামায়াত তকমা দিয়ে ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে সেই যাত্রায় মুক্তি পায় সেই ব্যবসায়ী । নাম না প্রকাশে অনেচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিনিয়ত এস আই জাহিদের আতংকে আছি, টাকার প্রয়োজনে সে যে কোন কিছুই করতে পারে । যাকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে অর্থ দাবি তার নিত্যনৈমিক ব্যাপার ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা গোপনে সাধারন মানুষদের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবে এস আই জাহিদদের নানা অপকর্মের ভয়াবহ গল্পকথা । তার ভয়াবহতায় কেউ এখন মুখ খুলছে না, যদিও দুই একজন প্রতিবাদকারী প্রতিবাদ করে তাদের অবস্থান হয় জেলা । মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে জুড়ি নেই এস আই জাহিদের ।
স্থায়ীনরা বলেন ওসি প্রদীপের এই উত্তরসুরির অতিসত্ত্বর তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা না নিলে হয়ত ভবিষ্যতে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে পারেন এই এস আই । উদ্ধর্তন মহলের উচিত হবে এই মুহুত্ব্বে গোপনে তার বিষয়ে তদন্ত করা ।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালেও মাদক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিলেট জেলার কানাইঘাট এলাকাবাসী এই এসআই জাহিদের কুকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন পর্যন্ত করেন। যে সংবাদ দৈনিক যুগান্তর,দৈনিক জনতাসহ সিলিটের বেশ কিছু দৈনিকে ঐ সংবাদ প্রকাশ হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে এস আই জাহিদের মোবাইলে ফোন দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় ।