চতুর্থ শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী কে গণধর্ষণ, অতঃপর ৫ লক্ষ টাকায় রফাদফার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে।

আভা ডেস্ক : নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার (ওসি) বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা পাঁচ লাখ টাকায় রফাদফা করার অভিযোগ উঠেছে।

পিতৃহীন প্রবাসী মায়ের মেয়েটি পুলিশ ও প্রভাবশালীদের চাপে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভয়ে তটস্থ পুরো পরিবার। পুলিশের সহায়তায় ধর্ষণের ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে চরাঞ্চলজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।

রোববার (২ সেপ্টেম্বর) মেঘনা নদীর দড়ি নবীপুর এলাকার স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর নদীতে ফেলে দেয়। পরে সাতরিয়ে গভীর রাতে বিবস্ত্র অবস্থায় বাড়ি ফেরে সে। নির্যাতিত মেয়েটির বাড়ি সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে। সে স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।

সরেজমিনে চম্পকনগর গিয়ে নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবা মৃত্যুর পর স্কুলছাত্রী চম্পকনগরের মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতো। রোববার সন্ধ্যায় সে পার্শ্ববর্তী কালাই গোবিন্দপুর বাজারে কসমেটিক্স কিনতে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কালাই গোবিন্দপুর নওয়াব আলী স্কুলের পাশ থেকে একই গ্রামের সাদ্দাম মিয়া (২৫), সজিব (২২) ও ফরহাদ (২৩) ওই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নৌকায় করে মেঘনা নদীর মাঝ খানে নিয়ে যায়। সেখানে নৌকায় তারা পালাক্রমে তাকে গণধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর আসামিরা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় নদীতে ফেলে দেয়। পরে কালাই গোবিন্দ্রপুরের ইমানের বাড়িতে গিয়ে মেয়েটি আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা ও বাড়ির স্বজনরা গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

এদিকে ধর্ষকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য কামাল মেম্বার, আলি নূর ও ফজলুকে নিয়ে নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার ও ধর্ষকদের মধ্যে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এরই প্রেক্ষিতে আয়োজিত গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককে দেড় লাখ টাকা করে মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় কোনো মামলা না করার জন্য নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু কথামতো জরিমানার টাকা না দেওয়ায় বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নরসিংদী সদর থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবার। কিন্তু বিধিবাম পুলিশও অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে উল্টো পাঁচ লাখ টাকায় ঘটনাটি সমঝোতা করে দেন।

গণধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা পুলিশের হস্তক্ষেপে ধামাচাপা দেওয়ার খবরে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনা সমঝোতা হওয়ায় পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ভয়ে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি নির্যাতিত স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনরা। ওই সময় নির্যাতিত স্কুলছাত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাকে বাধা দেন মামা ইয়াছিন।

ইয়াছিন সাংবাদিকদের বলেন, যা হয়েছিল তা গ্রাম্য মাতব্বর ও পুলিশ সমাধান করে দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছেন এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দ্রুত সরে পড়েন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রাম্য সালিশের বিচারক ইউপি সদস্য মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মেয়েটি আমাদেরকে জানিয়েছে একে একে তিন জন ধর্ষণ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা অভিযুক্ত তিন জনকে দেড় লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিলাম। কিন্তু তারা জরিমানার টাকা না দেওয়ায় মেয়েটির পরিবার থানায় যায়। সেখানে ওসি সাহেব বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। তাই থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

পুলিশের অপর একটি সূত্রে জানা যায়, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান পাঁচ লাখ টাকায় গণধর্ষণের ঘটনাটি সমঝোতা করেন। এর মধ্যে নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। আর বাকি টাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহারিয়ার আলম ও থানা পুলিশের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়।

এদিকে সাংবাদিকরা সরব হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যায় পুলিশ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় ওই স্কুলছাত্রীর নানির দায়ের করে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে বাধ্য হয়।

জানতে চাইলে নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে সত্য, কিন্তু পুলিশ সমঝোতা করেছে এটা সত্য নয়। আমরা নির্যাতিতার পরিবারকে বুঝিয়ে অভিযোগ নিতে বিলম্ব হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছি। তাছাড়া বিষয়টি ওসি (তদন্ত) সালাউদ্দিন ডিল করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’

টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘টাকা নিলে মামলা নিলাম কি ভাবে’?

পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা কেউ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেটা যদি পুলিশও হয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলানিউজ

Next Post

লাইন ধরে মাদক বিক্রি, যেন মাদকের হাট

শুক্র সেপ্টে. ৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : পড়ন্ত বিকেল। রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি গলিপথ। পথচারীর আনাগোনাও কম। যাত্রীবিহীন রিকশার সারি। গলিপথের পাশে এক তরুণের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন রিকশা চালকেরা। দু’একজন পথচারীও তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন। তরুণের কাছে কী যেন নিয়ে কোমরে গুঁজছেন তারা। এরপর দ্রুতই চলে যাচ্ছেন, তারাই বলছেন নেও নেও, দ্রুত পালাও…। নির্জন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links