গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না, সমন্বয় করা হচ্ছে, প্রতিমন্ত্রী

আভা ডেস্কঃ গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না, সমন্বয় করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও সমন্বয় অব্যাহত থাকবে। কারণ সরকার ভতুর্কি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অবশ্য ব্যবসায়ীরা যদি রাতে শিল্প চালু রাখতে চায় তাহলে বিশেষ ট্যারিফের ব্যাপারের চিন্তা-ভাবনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলের ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান।

‘জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ: শিল্পখাতে এর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর। সেমিনারে শিল্প উদ্যোক্তা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

নসরুল হামিদ বলেন, ২০১০ সালের সরকার জ্বালানি খাতে একটি মাস্টার প্লান করে, যাতে ২০২১ ও ২০৪১ সালের গ্যাসের চাহিদা নিরূপন করা হয়। জাইকা এতে সহযোগিতা করে। কোন জ্বালানি দিয়ে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে তার বিস্তারিত রয়েছে।

ক্যাপটিভ পাওয়ারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, যেই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে একটি ক্যাপটিভ জেনারেট ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, সেই একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার প্লান্টে টার্বাইনে ব্যবহার করলে ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ দেবে। এ কারণে ক্যাপটিভকে নিরুৎসাহিত করতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এখন ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গ্যাস কূপ খনন সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। একটি গ্যাস কূপ খনন করতে ৯-১৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। গ্যাস ওঠানো, ডিস্ট্রিবিউশন হিসেব তা অনেক সময় লাভজনক হয় না। যেমন পূর্বাচলে গ্যাস কূপ পেয়েও সেটা খনন করা হয়নি, কারণ খরচ বেশি। তারপরও ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা আছে। অনেকে বলেন, দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। এটাও সত্য নয়। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে ৬টি ব্লক কনকোফিলিপসকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমে যাওয়ায় তারা চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সোচ্চার। কিন্তু গভীর সমুদ্রে গ্যাস পেলেও তা আনতে ৮ বছর সময় লাগবে।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে-সেখানে বিনিয়োগ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ চাইলে দেয়া হবে না। বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। সেখানে গ্যাস-বিদ্যুতের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাইলে বিদ্যমান শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানান্তর করে ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতে ১২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিল বকেয়া আছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা শুরু করলে এক হাজার শিল্প কারখানায় গ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, রাতে গ্যাস-বিদ্যুতের চাপ কম থাকে। এ সময় শিল্প চালু রাখলে বিশেষ ট্যারিফ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, পেট্রোবাংলা এবং অন্যান্য গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ১০২ শতাংশ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে শিল্পখাতে ১৩২ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯৬ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২০৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত মূল্যবৃদ্ধির হার কার্যকর হলে শিল্পখাতের উৎপাদন খরচ বাড়বে।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সার, বস্ত্র, ডেনিম, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, স্টিল খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হবে। শিল্পের স্বার্থে স্বল্পমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে এলএনজি’র মূল্য নির্ধারণের ওপর গবেষণা পরিচালনা, আমদানিকৃত এলএনজি’র ওপর নির্ভরতা কমানো, সিস্টেম লস কমানো এবং ৩-৫ বছর মেয়াদী জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেন তিনি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ড. এম ফওজুল কবির খান।

তিনি বলেন, প্রস্তাব অনুযায়ী গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৯৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি টেক্সটাইল, সিমেন্ট ও স্টিল খাতে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ০৬ শতাংশ, ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, এলপিজি ব্যবহারকে উৎসাহিত করা এবং পিক ও অফপিক সময়ে আলাদা ট্যারিফ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন।

যুগান্তর

Next Post

উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বশিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতি এপ্রিল ১১ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বশিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ মোহাম্মদ আহমেদ ইবনে আউফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।দেশটির দারফুর অঞ্চলে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানে প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ৩০ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links