গোদাগাড়ির হামিদুজ্জামান পবিত্র কোরআন শরিফ লিখেছিলেন বাঁশের কলম দিয়ে

আভা ডেস্কঃ হামিদুজ্জামান পবিত্র কোরআন শরিফ লিখেছিলেন বাঁশের কলম দিয়ে। এর ওজন প্রায় ৬১ কেজি। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১ হাজার ১০০। হামিদুজ্জামানের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পশ্চিম বামনাইল (ঝিকরাপাড়া) গ্রামে। কোরআন শরিফখানা বর্তমানে ঢাকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত রয়েছে।

হামিদুজ্জামান তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও বিন্যাসকরণ বিভাগের এলডিসি (লোয়ার ডিভিশনাল ক্লার্ক) হিসেবে করাচিতে কর্মরত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ সরকারের চাকরি পান। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে দুই বছর চাকরি করেছেন।

হামিদুজ্জামানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১১ জানুয়ারি। মারা গেছেন ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি। তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে এসএসসি, করাচি থেকে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম পাস করেন। তাঁর দুই ছেলে এ কে এইচ এম মোফাসসিরুজ্জামান (৪৮) ও নওরিনুজ্জামান (৪৬) স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা করে এখন গ্রামে কৃষিকাজ করেন। মেয়ে সাইকা শারমিনের (৩৫) বিয়ে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রাশিয়া বেগম (৬৫) সন্তানদের সঙ্গে থাকেন।

চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৮২ সালে তিনি এই কোরআন শরিফ লেখা শুরু করেন। আট বছরে তিনি ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার কোরআন শরিফ লিখে শেষ করেন। আর্ট পেপারে লিখতেন বাঁশের কড়ি কলম দিয়ে।

গত ২৭ মে সোমবার তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, হামিদুজ্জামানের পরিবারের লোকজন তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র যত্নসহকারে তুলে রেখেছেন। যে কলম দিয়ে তিনি লিখতেন, সেই কলমও পাওয়া গেল ১৬টি। কোরআন শরিফের কয়েকটি পাতা তিনি আলাদা করে লিখেছিলেন। ছেলেরা সেই পাতাগুলো অবিকল সেভাবেই রেখে দিয়েছেন। হামিদুজ্জামান এই কোরআন শরিফের বর্ণনা দিয়ে মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার একটি করে ফটোকপিও রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে যেসব চিঠি পাঠিয়েছেন, সব কটির অনুলিপি রেখে দেওয়া হয়েছে।

নওরিনুজ্জামান বললেন, বাবা লেখার জন্য ব্যবহার করতেন গুডলাক ও ক্যামেল ব্র্যান্ডের কালি। দোয়াতে কলম ডুবিয়ে লিখতেন। লেখার আগে তাঁরা দুই ভাই মিলে দাগ টেনে দিতেন। একবারে ১০ পৃষ্ঠা করে লিখতেন। যখন লিখতে বসতেন, তখন ঘরে কাউকে ঢুকতে দিতেন না। সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত লিখতেন। ১৯৯০ সালে ঢাকার গোপীবাগ লেনের একটি দোকানে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে হাতে লেখা কোরআন শরিফ বাঁধাই করেন। এটি বাঁধাই করতে দুটি গরুর চামড়া ব্যবহার করা হয়েছে। বাঁধাই শেষে কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২৯ ইঞ্চি, প্রস্থ ২৩ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চি। তিনি বলেন, এই কোরআন শরিফ বাঁধাই করতে গিয়ে তাঁরা অনেক কষ্ট করেছেন। বাবার সঙ্গে রাতের পর রাত ওই বাঁধাইয়ের দোকানেই ঘুমিয়েছেন।

হামিদুজ্জামানের বাঁশের কলম ১৯৯২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে তিনি পবিত্র এই গ্রন্থখানি দেখাতে নিয়ে যান। সেই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদনপত্রও দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে তিন অথবা চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে কোরআন শরিফখানার নির্ভুলতা নির্ণয় করা, ঢাকায় এর প্রদর্শনীর আয়োজন করা, যেখানে সব মুসলিম দেশের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানান, মুসলিম দেশগুলোর প্রধান শহরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা এবং প্রদর্শনী শেষে সরকারের পক্ষ থেকে কোরআন শরিফখানা সৌদি আরব অথবা ব্রুনেইয়ের বাদশাহকে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলেন।

হামিদুজ্জামানের ইচ্ছাগুলোর একটি শুধু পূরণ হয়েছে। গ্রন্থখানার নির্ভুলতা নির্ণয় করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়। তাদের একটি কমিটি ২০০৭ সালে কিছু সংশোধনের জন্য হামিদুজ্জামানকে ডাকে। মাত্র তিন দিনেই হামিদুজ্জামান তা সংশোধন করে দেন। তারপর আর এই পবিত্র গ্রন্থখানা হামিদুজ্জামানের ইচ্ছা অনুযায়ী কাউকে উপঢৌকন হিসেবে পাঠানো হয়নি। বাইরে প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁকে ফেরতও দেওয়া হয়নি।

হামিদুজ্জামান স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রদর্শনী বা উপঢৌকন পাঠানো হলে সেখান থেকে অর্থ আসবে। তা দিয়ে তিনি কোরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে একটি ইনস্টিটিউশন গড়ে তুলবেন। তাঁর এ স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে তাঁর হাতের লেখা কোরআন শরিফখানা ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। প্রত্যুত্তরে ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালকের পক্ষে গ্রন্থাগারিক মুহাম্মাদ শামসুল হক লিখেছেন,

‘এখন এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্পত্তি।’

হামিদুজ্জামানের স্ত্রী রাশিয়া বেগম বলেন, ঢাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তিনি কোরআন শরিফখানা দেখতে গিয়ে মর্মাহত হয়েছেন। তাঁর দাবি, পবিত্র এই গ্রন্থখানা অনেকটা অযত্নে রাখা হয়েছে। যদিও পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে, তবু অনেক পৃষ্ঠাই জোড়া লেগে গেছে। পাতাগুলোর উজ্জ্বলতা কমে এসেছে। এভাবে রাখলে পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

সূত্র: প্রথম আলো

Next Post

দেশে ইয়াবা চোরাকারবারের অন্যতম হোতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সাইফুল কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও ধরা ছোয়ার বাহিরে বদি।

শনি জুন ১ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ দেশে ইয়াবা চোরাকারবারের অন্যতম হোতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সাইফুল করিম (৪৫) পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ বন্দরের কাছে নাফ নদের তীরে এ ঘটনা ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ করা ৭৩ জন ইয়াবা কারবারির তালিকায় ২ নম্বরে ছিলেন সাইফুল করিম। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাদকসংক্রান্ত […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links