গোদাগাড়ি প্রতিনিধিঃ বাড়ি ঘর দিয়ে ভরপুর । বসবাস করে ২০-২৫ টি পরিবার । তৈরী হয়েছে ছোট বড় বৃদ্ধা বনিতা সহ ১৫০-২০০ লোকের বাস করা ছোট একটি গ্রাম । গ্রামে ঢোকার কোন রাস্তা নেই । রাস্তা ছাড়াই এই গ্রামে মানুষগুলো বসবাস করে প্রায় ১ যুগ থেকে । ঘটনাটি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি থানাধীন ৬ নং মাটিকাটা ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রাম ।
অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, গত প্রায় একযুগ আগে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে হাজারও মানুষ।ভাঙ্গন কবলিত অসহায় মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে যে যেদিকে পেরেছে ঠাঁই নিয়েছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে। সে সময়ের ভাঙ্গন কবলিত কিছু অংশের মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে জায়গা করে দেওয়া হয়েছিলো শ্রীপুর মৌজার ফসলি মাঠের অর্পিত জায়গার উপর। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়া হলেও দেওয়া হয়নি তাদের যাওয়া আসার রাস্তা। এটি বর্তমানে একটি গ্রাম বা পাড়া তৈরি হয়েছে।এই গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তাই হচ্ছে ফসলি জমির আইল।যা বৃষ্টি কাঁদার দিনে কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়। বর্তমানে এই কষ্টমাখা রাস্তা টুকুও কেড়ে নিচ্ছে ঐ একই গ্রামের রজব আলী নামের এক ব্যাক্তি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা।
প্রতিকার পায়নি অভিযোগ দিয়েও । গ্রামের মানুষগুলো রাস্তা না পেয়ে যে আইল দিয়ে হেটে নিজ বাসায় এতদিন যেত সেই রাস্তায় নামের আইলটাতেও তারা কাটা দিয়ে রেখেছে । কাটার মধ্যদিয়েই তাদের যেতে হয় অতি কষ্টে । ছোট ছোট বাচ্ছারাও স্কুলে যায় ঐ রাস্তা নামের কাদা ও কাটাভরা আইল দিয়েই । গ্রামে প্রায় ২৫-৩০ জনের মত প্রাইমারী স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা আছে । তারা বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বেড় হলেই কাদা মাখা আইলে কাটার খোঁচা খেয়ে তাদের বেড় হতে হয় । এই কাটাগুলো বিছিয়ে বাধাগ্রস্থ করছে রজব আলী সহ কয়েকজন জমির মালিক । তারা মুলত গ্রামটিকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে।
গ্রামের সাদ্দাম নামের একজন কিশোর বলেন, রজব আলী রাস্তা বন্ধ করতে আইলের উপর ঘর তৈরী করছে, অথচ আরও কিছু ভাল মানুষ এখানে আছে, যারা রাস্তা করার জন্য নিজেদের জমি ছেড়ে দিচ্ছে । অর্ধেক রাস্তা তৈরী হয়েছে, এখন বাধা শুধুই রজব আলী ।
গ্রামের এই দু আড়াই শত মানুষ অভিযোগ দিয়েছে ইউএনও গোদাগাড়ি, ও জেলা প্রশাসক রাজশাহী। তবুও কোন অদৃশ্য শক্তির কারনে প্রতিকার পাচ্ছে না গ্রামটি ।
কথা হয় গোদাগাড়ি পৌর শাখার যুবলীগের সহ সভাপতি নাজমুল হকের সাথে । তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে কয়েকটি লোকের কারণেই গ্রামটি কোন রাস্তা পাচ্ছে না । এর মধ্যে রজব আলী প্রধান । গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ২০০-২৫০ জন মানুষ । তারা কেউ বড় লোক না, দিনমজুর ।সরকার নদী ভাঙ্গন এলাকার কিছু লোককে অর্পিত জায়গায় বাড়ি করে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে । সেই সুবাদে এই গ্রামটি দীর্ঘ এ যুগ থেকে এখানে আছে ।
অভিযোগ পেয়ে ঘটনার সত্যতা জানার জন্য সরেজমিনে যায় মিডিয়াকর্মীরা, সেখানেও এলাকাবাসির উপর মারমুখি হয়ে তেড়ে আসে রজব আলী ও তার লোকজন। তবে মিডিয়াকর্মীদের সাথে খারাপ আচার না করলেও প্রতিপক্ষে গ্রামবাসিদের উপর চড়াও হয়ে উঠেন রজব আলী ও তার ছেলে । শান্ত করে মিডিয়াকর্মীরা রজব আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এখানে কোন রাস্তা ছিলনা তাই আমি তাদেরকে কোন রাস্তা দিবো না । গ্রামের লোকজন যদি পারে আমার থেকে রাস্তা নিতে বলেন, রাস্তা দিবো না প্রয়োজনে জিহাদ ঘোষণা করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে আরও কিছু জানতে এলাকাবাসির সাথে কথা বললে বেরিয়ে আসে অনেক তথ্য।এলাকাবাসি বলেন গ্রামের মানুষের রাস্তা বন্ধের জন্য বহুদিন থেকে বিভিন্নভাবে বাধা দিয়ে আসছিল রজব আলী। এমনকি রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখা, জমির আইল কেটে চিকন ও ছোট করে দেওয়া ইত্যাদি।অবশেষে রাস্তা বন্ধের জন্য কোন পরিমান জায়গা না রেখে ঐ জমির উপর পাকা ঘর নির্মান করছে যা সম্পুর্ন নিয়ম বর্হিভুত।আর এসকল দৃশ্যের চিত্র মিডিয়াকর্মীর চোখে সত্যতা মিলেছে। গ্রামবাসি আরও অভিযোগ করে বলেন, আজ যে জায়গায় ঘর নির্মান করছে সে জমিটা তার নয়। সে অন্যের জমি জবর দখল করে ঘর নির্মান করছে। অবৈধভাবে ঘর নির্মান ও রাস্তা বন্ধ করছে মর্মে গত ১০ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে জানান এলাকাবাসি।
এই বিষয়ে ঐ এলাকার জনপ্রতিনিধি ৯ নং ইউ পি সদস্য সুজা উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, এই রজব আলী মানুষটা ভালনা। তার বিষয়ে কিছু বলতে গেলে সে (রজব আলী) আজেবাজে কথা বলে। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি সমাধান করার কিন্তু সে কারো কথাই মানেনা ও শোনেনা।তবে আমিও চাই এই গ্রামের মানুষগুলো ভুমিহীন এদরে চলাচলের রাস্তা হোক।
তবে এই বিষয়ে গোদাগাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ খাইরুল ইসলামকে মুঠোফোনে জানানো হলে তিনি বলেন, আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি বিষয়টি দেখবো। এরপর ঘটনাস্থল থেকে মিডিয়াকর্মীরা চলে আসে। কিন্তু কিছুক্ষন পরে এলকাবাসি গোদাগাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে থানা অভিযোগ নিচ্ছেনা বলে এলাকাবাসি জানায়।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ির উপজেলা ইউএনও সরকারী নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে অভিযোগ দিয়ে থাকলে তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।