খাদ্যে পরনির্ভরশীলতা কাটাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

আভা ডেস্কঃ নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নিজেরা উৎপাদন করে পরনির্ভরশীলতা কাটাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জমির উর্বরতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহমারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিনির্ভর খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাপ্তি নিয়েও সংকট দেখা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এতে প্রকৃতি যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার সকালে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২২’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন না হলে তা টেকসই হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ন্যাচার বেইজড সল্যুশনের দিকে ধাবিত হতে হবে।’

এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে, সেই আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এর ওপর আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

‘যার ফলে আজকে আমাদের যে সমস্ত খাদ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর যেমন আনতে ভাড়া অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, অত্যধিক ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জমি উর্বর এবং আমাদের মানুষ আছে। আমাদের নিজের ফসল নিজে ফলাতে হবে। আমাদের নিজের খাদ্য নিজে গ্রহণ করতে হবে। যেসব জিনিস আমাদের প্রয়োজন তা আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব। আমাদের প্রকৃতি পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে, পাশাপাশি আমরা পরনির্ভরশীলতাও কাটিয়ে উঠতে পারব। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কাজ করতে হবে।’

১৯৯৬ সালে দেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১১ ভাগ থাকলেও এখন তা ২২ ভাগে উন্নীত হয়েছে বলে জানান প্রধাননমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কাজেই আমি আশা করি, প্রত্যেকে, এখানে যারা উপস্থিত আছেন আপনারাও যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে, নিজের গ্রামে যান, অন্তত তিনটা করে গাছ লাগান। সেই গাছ একসময় বিক্রি করলে আপনি পয়সাও পাবেন। আবার প্রকৃতিও রক্ষা পাবে। ফলও খেতে পারবেন। ফলে সেই কাজটি করবেন এটাই আমি চাই।’

দেশের মানুষের উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করতে উন্নয়ন করতেই হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন করা না হলে সেটি কখনও টেকসই হয় না। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের ইতোমধ্যে ন্যাচার বেইজড সল্যুশনের দিকে ধাবিত হতে হবে। যাতে করে যেকোনো প্রতিষ্ঠান যা-ই তৈরি হোক না কেন, আমাদের তো করতেই হবে ডেভেলপমেন্ট, কিন্তু সেটা যেন ন্যাচার বেইজড সল্যুশন হয়, এই নীতিটা মেনে চলা হয়। এর দিকে লক্ষ্য রাখা একান্তভাবে দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিই, প্রতিটা উন্নয়ন প্রকল্পে কিন্তু একটা কন্ডিশন থাকে। কোথাও যদি বৃক্ষ নিধন হয়, তার থেকে পাঁচ গুণ বৃক্ষ সেখানে লাগানো হবে। এবং সেটা কিন্তু মানা হয়।

‘আমাদের উন্নয়ন করতে হবে, আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, তারা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, তাদের জীবনমান যাতে উন্নত হয়, সেটা আমাদের করতেই হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্রকল্পের সঙ্গে এটা কিন্তু নিশ্চিত থাকে যেখানে কোনোরকম গাছ কাটতে হয়, তাহলে সমপরিমাণ বা তার থেকে অধিক গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ যাতে সংরক্ষণ হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে আমরা প্রত্যেকটা পরিকল্পনা হাতে নিই।’

কৃষিজমি ও বন রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষিজমি রক্ষা করা বা বনায়ন রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যেই যাতে যত্রতত্র শিল্প-কলকারখানা গড়ে না ওঠে সে জন্য আমরা সমগ্র বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি।’

প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানোন্নয়নে সরকার বিভিন্ন সময়ে দেশের ১৩টি এলাকাকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার’ খসড়া প্রণয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পথিকৃৎ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ২৬-এ অভিযোজনের জন্য অগ্রাধিকারমূলক অর্থায়ন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে উন্নত দেশগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নেয়ার জোরালো দাবিও আমরা উত্থাপন করেছি।’

এ সময় মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যখন জায়গা দিলাম, তার পরিবেশটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এটা বাস্তব। যে কারণে আমি ভাসানচরে, আমাদের অনেক চরাঞ্চল আছে, এগুলোকে উন্নত করা এবং চরে বসতি স্থাপন করার সে ব্যবস্থা নিয়েছি।’

সুন্দরবনের প্রায় ১০০ খাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আহ্বান করব বাকি খালগুলোও যেন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।’

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২০-২০২১, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০-২০২১, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০১৯-২০২০ তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। বিতরণ করা হয় সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সবার বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

Next Post

ভিকি-কৃতি সেরা

রবি জুন ৫ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফিল্ম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস (আইফা)-এ এবার সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ভিকি কৌশল ও কৃতি শ্যানন। সরদার উধম ও মিমি এই দুই সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আইফা পুরস্কার পান তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে লুডো ও মিমি এই দুই সিনেমার […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links