ক্যাসিনোকাণ্ড : দুদকের অনুসন্ধান যুবলীগের আনিস ও মাকসুদের অঢেল সম্পদের সন্ধান ।

আভা ডেস্কঃ ক্যাসিনোসম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সহযোগী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান ও যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমানের অঢেল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। দু’জনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্সের তথ্য মিলেছে। দু’জনের নামে বেনামি সম্পদ ও দেশের বাইরে পাচার হওয়া সম্পদ বের করতে দুদক টিম নানাভাবে কাজ করছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে অন্য দুর্নীতিবাজ নেতাদের সঙ্গে তারা দু’জনও আত্মগোপন করেন। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, দু’জনেরই বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আনিস একসময় যুবলীগ অফিসের স্টাফ ছিলেন। পরে তাকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাকে দিয়ে সম্রাট ও ওমর ফারুক চৌধুরী গোপন সব কাজ করাতেন। কাকে যুবলীগের পদ দেয়া হবে, কাকে বাদ দেয়া হবে সেইসব তালিকা তৈরির কাজ ছিল আনিসের। তিনি এ কাজ করতে গিয়ে টাকার বিনিময়ে সারা দেশে যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে নাম ঢোকানো বা বাদ দেয়ার কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার প্রভাব বাড়তে থাকে। আস্থা অর্জন করেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। এক পর্যায়ে সংগঠনের দফতর সম্পাদকের পদটিও বাগিয়ে নেন। শুরু করেন নিয়োগ, বদলি, দখল, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম। আর এর একটা অংশ তুলে দেন নেতাদের হাতে।

সেই প্রভাবশালী আনিস এখন কোথায় কেউ বলতে পারছেন না। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান মিলেছে। তবে তদন্ত শেষে এই অংক অন্তত ৫০ কোটি টাকা হতে পারে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, কাজী আনিসুর রহমান ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত নিজের নামে ও বেনামে অর্জিত ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার ট্যাক্স ফাইলে দেখিয়েছেন, যা তার আয়বহির্ভূত সম্পদের অংশবিশেষ মাত্র। বেনামি সব সম্পদ তিনি আড়াল করেছেন।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে মার্কেট, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ৭৪, রসুলপুরে ২৪.৫০ শতাংশ জমি, ঢাকার আরকে মিশন রোডে আমিন বিলাস ভবনের পঞ্চম তলায় ১৩শ’ বর্গফুটের আলিশান ফ্ল্যাট ও কার পার্কিং, ঢাকার স্বামীবাগে ৫৪/১ নং রোডে একটি ফ্ল্যাট, ধানমণ্ডির ১০-এ রোডে আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, শুক্রাবাদের শের-ই- বাংলা নগরে ৭ তলা বাড়ি (বাড়ি নং : ৮/২, আরেফিন পার্ক), ধানমণ্ডি ৪ নং সড়কে ১৫/এ নং বাড়িতে ১৪শ’ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে। এসব ফ্ল্যাট ও জমির রেজিস্ট্রেশন মূল্য ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত মূল্য অন্তত ২৫ কোটি টাকা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একইভাবে আনিসের নামে মেসার্স আরেফিন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স মা ফিলিং স্টেশনের শেয়ার মূল্য ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইজবন্ড ৩০ লাখ টাকা ও দুটি গাড়িসহ তার প্রায় ২ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদের সন্ধান মেলে।

এছাড়াও কাজী আনিসুর রহমানের নামে ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট, এফডিআর, এসটিডিসহ বিভিন্ন ফর্মে ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এই টাকা কোন খাত থেকে তিনি অর্জন করেছেন তার কোনো উৎস নেই। এসব সম্পদের সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ উৎস নেই, যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জিত সম্পদ বলে মনে করছে দুদক।

এদিকে ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধেও দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। দুদকের ১১৮ জনের নামের তালিকায় মাকসুদের নাম ৯১ নম্বরে। জানা গেছে, ক্যাসিনো কারবার, জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। ক্যাসিনো কারবারের মূল হোতা ছিলেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তাদের অনেক অবৈধ টাকাও জমা থাকত মাকসুদের কাছে। এ কারণে তাকে ক্যাশিয়ার মাকসুদ বলা হয়।

মাকসুদ যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কৃত্রিমভাবে নিজের পোস্টারে ‘সুপার ইম্পোজের’ মাধ্যমে যুক্ত করে প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলেও জানা যায়। পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও তিনি নিজেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সমানে অপকর্ম করে বেড়াতেন। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সম্রাটের চাঁদাবাজির প্রধান সৈনিক ছিলেন মাকসুদ। তিনি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের টেন্ডার, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতির টাকায় মতিঝিল ও পুরান ঢাকা এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে বেনামি সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও দুদক কর্মকর্তারা ধারণা দেন।

যুগান্তর

Next Post

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে, তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষ ।

শুক্র জানু. ৩ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষ। মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমাকে ‘ইজতেমা’ বলতেই নারাজ সাদবিরোধীরা। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবির বিরোধী অংশ হিসেবে পরিচিত এ অংশটি। অপরদিকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links