আভা ডেস্কঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, সাংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অন্তত ৮০ ভাগ অনুসন্ধান হয়। ক্যাসিনোকাণ্ডে যত অভিযোগ আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে নিয়েছি। তার ভিত্তিতে ১৫০ থেকে ২০০ জনের তালিকা করে তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে।
বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি দমনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য দেন- দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব দিলওয়ার বখত প্রমুখ। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও আইসিসিটি) একেএম সোহেল। দুর্নীতি দমন কমিশন ও রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) যৌথভাবে কর্মশালার আয়োজন করে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা দুর্নীতির তথ্য পেলেই অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রকাশ করবেন। এমনকি দুদকের ভুলত্রুটি নিয়েও জনগণকে জানাতে পারেন। আমাদের সিদ্ধান্তে কোনো নিরীহ লোক যেন কষ্ট না পায় সেদিকেও নজর দিতে হবে। কারণ এতে আমাদেরও কষ্ট হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কারও দ্বারা প্রভাবিত নই। কেউ আমাদের নির্দেশনাও দেন না। আমরা কারও চাপে পড়ে বা ভয় পেয়ে কোনো কাজ করি না।’
দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের ইংরেজি নববর্ষ ও মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। নতুন বছরে দুর্নীতি কমিয়ে আনাই হবে মুজিববর্ষের উত্তম কাজ।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্বাস করে। এমনকি শিশুরা সংবাদপত্র থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাই দেশের প্রতি সংবাদপত্রের বড় দায়িত্ব রয়েছে। কোনো সংবাদ যেন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন না করে সেই দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। শুধু সংবাদপত্র নয়, সবার কর্মপ্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম থাকা উচিত দেশ। এর পর আপনি, আমি, আমরা সবাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কে বড় কে ছোট এমন কিছু বিবেচনা না করে নির্মোহভাবে পথ চলছে দুদক। বিগত চার বছরে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা পিছপা হইনি। দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি, এ সময়ে কারও দ্বারা প্রভাবিত হইনি, যা করেছি নিজের বিবেক-বিবেচনা বোধ থেকে করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো দোষ-ত্রুটি খুঁজে পান তা নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করবেন। জনগণকে জানাবেন। কারণ দুদক জনগণের প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিক ছাড়া দুদকের অস্তিত্ব দৃশ্যমান নয়। আপনারা আমাদের শত্র“ নয়, বরং সহযোগী বা সহযাত্রী। আমাদের সমালোচনা করা হলেও আমরা আপনাদের শত্রু ভাবি না। বরং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ইতিবাচকভাবে সমালোচনাকে গ্রহণ করি।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ক্যাসিনো কাণ্ড নিয়ে অনেক কথা হয়। ক্যাসিনো ব্যবসা কিন্তু দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। তবে ক্যাসিনো ব্যবসা করে যে বা যারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, সেটা দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ। ঠিক এ কারণেই আমরা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এসব তথ্যেরও সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে সংবাদপত্র, অন্য কোনো সংস্থা নয়। আমরা এই কর্মপ্রক্রিয়া থামাব না। এটা চলবে। দুর্নীতিবাজদের যতক্ষণ না পর্যন্ত আইনের আওতায় আনতে পারছি, ততক্ষণ আমার নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের তাড়া করব।’
ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘কিছু করতে পারেন না বলে সাংবাদিকতা করছেন, সেই দিন আর নেই। এখন সাংবাদিকরা অনেক মেধাবী। দুদক নিয়ে সাংবাদিকদের আগ্রহ বা রিপোর্ট আমাদের মুগ্ধ করে। আমি মনে করি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সরকার লাভবান হয়। রাষ্ট্র উপকৃত হয়।’
অপর কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকরা নানাভাবে দুদককে সহায়তা করছেন। ভালো রিপোর্ট করছেন। তাদের রিপোর্ট আমরা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করি।’ কর্মশালায় ৪০ সাংবাদিক অংশ নেন।
এতে অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, দুদকের মহাপরিচালক একেএম সোহেল, পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ও শেখ মুহাম্মদ ফানাফিল্ল্যাহ। উপস্থিত ছিলেন দুদক বিটে সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনেস্ট করাপশন (র্যাক)-এর সাবেক সভাপতি মিজান মালিক, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাত, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, আবুল কাশেম, র্যাকের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক সফিক শাহীন প্রমুখ।