কেরালার বন্যায় ‘অখ্যাত নায়ক’ যারা

আভা ডেস্ক : গলা ডুবে যাওয়া পানিতে কলার ভেলায় নিজেকে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ভেসে ছিলেন কেরালার নারী দিব্বা জি। ভয়াল বন্যায় তাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পরে প্রতিবেশীর দোতলা বাড়ির ছাদে ক্যাম্প করে দুদিন ছিলেন। পরিবারের সবাই ছিলেন সঙ্গে।

এর পর একটা মাছের নৌকা চোখে পড়ে তাদের। সেটিতে করেই এক সময় নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছান তারা। গত সপ্তাহে কেরালার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিংগানুর এলাকা। ৩২ বছর বয়সী দিব্বা সেখানকার বাসিন্দা।

তিনি বলেন, আমরা দেখলাম একটা মাছের নৌকা আমাদের দিকে আসছে। তখন সবাই মিলে জোরে চিৎকার করতে লাগলাম। মাঝি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসলেন। সবাইকে একটি ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দিলেন।

গেল একশ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছেন কেরালার অধিবাসীরা। এতে শত শত লোকের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। আর লাখ লাখ লোক অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

উদ্ধার অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে হাজার সেনা, নৌ ও জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যকে (এনডিআরএফ)।

উদ্ধার কর্মকর্তা ও বন্যার্তরা বলছেন, কেরালার বন্যায় ত্রাণ কাজের অখ্যাত নায়ক হচ্ছেন মৎস্যজীবী ও স্থানীয় মাঝি-মাল্লারা। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে তারা লাখ লাখ আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করেছেন। এমনকি অনেক দূরবর্তী এলাকায়ও উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগেই তারা সেখানে গিয়েছেন।

চিংগানুর এলাকায় উদ্ধার কাজ করছিলেন নৌকা-চালক স্টিফেন ফিলিথট্টাম। তিনি বলেন, যখন বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করছিলাম, তখন কান্নায় তাদের চোখ ভিজে গেছে। তারা ঈশ^রকে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি আমাদের সঙ্গে আচরণ করেছেন।

তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়ার পর আটকেপড়া এসব মানুষ আমাদের পা ছুঁয়ে বলেছেন, কোনোদিন তারা আমাদের ভুলতে পারবেন না।

কেরালার অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু কোচি থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে মালাপ্পারাম জেলা। সেখান থেকে মোহাম্মদ আনশীদসহ তার পরিবারকে উদ্ধার করেছেন মৎস্যজীবীরা। তিনি বলেন, এসব মানুষদের কাছে তিনি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।

গলা সমান পানিতে নেমে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করেন এসব মৎস্যজীবীরা। নৌকায় উঠতে নারীদের সাহায্য করতে নিজেদের পিঠও পেতে দিয়েছেন তারা। আনশীদ এমন ঘটনারও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।

তিনি বলেন, আমি ওইদিনটি কোনোদিন ভুলতে পারব না। তারা বহু লোককে সহায়তা করেছেন।

সন্ধ্যা নেমে আসলে ঘন অন্ধকারে নিরাপত্তা শঙ্কায় যখন এনডিআরএফ কর্মীরা উদ্ধার মিশন স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন, স্থানীয় মৎস্যজীবীরা তখন ল্যাম্প ও গ্রামীণ যন্ত্রপাতি নিয়ে রাতভর উদ্ধার কাজ চালিয়ে গেছেন।

FILE PHOTO: A supply truck transporting boats to flooded areas moves through a water-logged road in Aluva, southern state of Kerala, India, August 18, 2018. REUTERS/Sivaram V/File photo

ট্রাকে করে বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে-রয়টার্স

চিংগানুর ত্রাণশিবিরে ১৫ আগস্ট রাতের ভয়াল বন্যার বিবরণ দিয়েছেন বহু ভুক্তভোগী। সেই রাতে কুড়ি বছর বয়সী তরুণী ¯েœহাকেও মৎস্যজীবীরা উদ্ধার করেছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর হাঁটু সমান পানি বাড়ছিল। চেয়ার-টেবিলের ওপর দাঁড়িয়েও কাজ হচ্ছিল না।

পর্যটন এলাকা বলে কেরালার বেশ খ্যাতি রয়েছে। এটিকে ঈশ^রের নিজের দেশ বলে ডাকা হয়। ভারতের সেরা রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি কেরালা। সুদৃশ্য হৃদ, খাল ও লেকের টানে পর্যটকরা ছুটে যান সেখানে। রাজ্যটির বিশাল উপকূলীয় এলাকা রয়েছে।

এসব কারণে সেখানে হাজার হাজার মৎস্যজীবী ও নৌকা চালক রয়েছেন। নৌকাই হচ্ছে তাদের উপার্জনের উপায়। সেই তারাই এ বন্যায় উদ্ধারকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সেনা, নৌ ও উদ্ধারকর্মীরা যা পারেননি, তারা তার চেয়েও বেশি করে দেখিয়েছেন।

এক কথায় ভয়াল বন্যাল মধ্যে উদ্ধার অভিযানে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তারা।

ভারতের পর্যটনমন্ত্রী কে. জে আলফোনসের বাড়িও কেরালায়। তিনি বলেন, এই মৎস্যজীবীরা আমাদের নায়ক। প্রায় ছয়শ নৌকা নিয়ে তারা উদ্ধার কাজে নেমেছেন।

রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পিনাইয়ারা বিজায়ন বলেন, উদ্ধার কাজে অংশ নেয়ায় রাজ্যের পক্ষ থেকে মাঝিদের সম্মান জানানো হবে। তাদের নগদ অর্থ দেয়া হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত নৌকা মেরামত করে দেয়া হবে।

উদ্ধার কাজে রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের যাজক সিজিন জোস অন্টনি ১৩০টি নৌকা ও পাঁচশ মৎস্যজীবীকে সংগঠিত করতে সহায়তা করেন।

তিনি বলেন, যখন মৎস্যজীবীরা উদ্ধার কাজে যোগ দিতে এগিয়ে এসেছেন, আমরা তা সরকারকে জানিয়েছি। এর পর যেখানে যেখানে দরকার, সেখানে সেখানে নৌকা ও মাঝিদের সরকার পাঠিয়েছে।

আরো পাঁচজনকে সঙ্গে নিয়ে এরনাকুলাম জেলার মৎস্যজীবী সিজি ডেনসি উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছেন। মাত্র পাঁচদিনে তারা সহস্রাধিক লোককে উদ্ধার করেছেন।

ডেনসি বলেন, তারা যেসব এলাকায় উদ্ধার কাজ চালিয়েছেন, সেসব জায়গায় সেনা, নৌ ও এনআরডিএফ সদস্যরাও পৌঁছাতে পারেননি। এলাকাটির সঙ্গে পরিচিত স্থানীয়রা তাদের সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরো যোগ করেন, কিছু কিছু ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছাতে সরু জলাবদ্ধ লেন দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে।

ডেনসি বলেন, আমরা সমাজের উচ্চ পদ মর্যাদার কেউ না। নিচু শ্রেনির মানুষ। কিন্তু যারা বন্যায় আটকা পড়েছিলেন, তারা সবাই বিত্তশালী। তারা যখন হাতজোড় করে প্রাণে রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন, তখন আমাদের খুব খারাপ লেগেছে। যা ছিল হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

Next Post

বিএনপির সাথে সংলাপে বসা যায় না।

বুধ আগস্ট ২২ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : যারা গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছে, তাদের সঙ্গে সংলাপ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার বিকালে তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links