কুড়িগ্রামে মেধাবী এক শিক্ষার্থী শিকল বন্দি, সে মানসিক প্রতিবন্ধী ।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বুরুজের পাড় গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী মানসিক প্রতিবন্ধী ফাহিমা। তিন মাস ধরে শিকলবন্দি হয়ে আছেন তিনি। ফাহিমা বুরুজেরপাড় গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের মেয়ে।

ফাহিমা মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন। এক সময় সবার সঙ্গে হেসে-খেলেই মেতে থাকতেন। সবার মতো যেতেন স্কুলে।  বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গেই ২০০২ সালে অংশ নেন এসএসসি পরীক্ষায়। ফলাফলও ভালো করেন। হঠাৎ বাবা নুরুজ্জামান পার‌্যালাইসিসে আক্রান্ত হন। শুরু হয় সংসারে অভাব। তখন সংসার বাঁচাতে ফাহিমা পাড়ি জমান ঢাকায়। চাকরি পান গার্মেন্টসে। কিন্তু পড়ালেখার আগ্রহ তাকে সবসময় টানত। তারপর ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে। ফাইনাল পরীক্ষায়ও অংশ নেন।  পরীক্ষার মধ্যেই তাকে কোনো কারণে বহিষ্কার করা হয়। তখন থেকেই ভেঙে পড়েন ফাহিমা। একদিন গভীর রাতে কী যেন ভেবে হঠাৎ চিৎকার করে উঠেন ফাহিমা। তখনই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির ভেতরে খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকলে বাঁধা ফাহিমা। শিকলের শেষ অংশে ঝুলছে তালা। পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই  সারাদিনের সঙ্গী ফাহিমার। শিকলের আঘাতে এখন পা ক্ষত হয়ে গেছে। সারাদিন ঝড়-রোদ-বৃষ্টি যাই হোক- সারাদিন শিকলবন্দিই থাকতে হয় ফাহিমাকে। ঘুমানোর সময়ও পায়ে শিকল থাকে তার। মা বাসায় না থাকলে সারাদিন বাসায় বা যেখানে বেঁধে রেখে যাওয়া হয় সেখানেই শুয়ে বসে থাকতে হয়।

ফাহিমার মা রাবেয়া বেগম জানান, তার মেয়েটি এখন মানসিক প্রতিবন্ধী। সবসময় কথা বলতেই থাকে। নিজেই নিজের হাত পা কামড়ায়, শরীর থেকে জামা কাপড় খুলে ফেলে দেয়। সুযোগ পেলেই বাসা থেকে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন আগেও সে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায়। সবাইকে মারতে যায়। তাই তাকে শিকলে বন্দি করে  রাখা হয়। অর্থের অভাব থাকলেও পরিবার থেকে অনেক চেষ্টা চলছে চিকিৎসার।

স্থানীয় মানসিক চিকিৎসক আমজাদেও কাছে এক বছর চিকিৎসা করানো হয়। পরে টাকা না থাকায় পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠায় ফাহিমাকে। সেখানেও টাকার অভাবে তাকে রাখতে পারেননি। আবার তাকে ফেরত নিয়ে আসা হয়। এখন অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ।

নদীগর্ভে বিলীন সর্বহারা পরিবার কাঁচকোল বুরুজের পাড়গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে খড়ের বেড়া বেষ্টিত ছোট্ট একটা টিনের চালায় বসবাস ফাহিমার। আট বোনের সংসার ফাহিমার। ছোট বেলায় ফাহিমা বাবাকে হারায় পরিবার থেকে। তখন থেকে মা রাবেয়া বেগম মেয়েদের নিয়ে চরম অর্থকষ্টে  পড়েন। ফাহিমার বড় বোনেরা অভাবের কারণে খেতে পারেন না তিন বেলা। ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ফাহিমার বোনেরা চলে যায় ঢাকাতে। সেখানে গার্মেন্টসে চাকরি করে। এতে যা টাকা আসে তাতেই তারা খেয়ে পরে জীবন চালায়। কিছু টাকা বাড়ি পাঠায়। কোনো মতেই সেই টাকা সঞ্চয় করে রাবেয়া বেগম একে একে ছয় মেয়ের বিয়ে দেন। পরে সংসার থেকে সবাই যখন চলে যায়, তখন থমকে যায় তার সংসার। এখন ফাহিমার সংসার চলে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের সামান্য বিধবা ভাতা ও নিজের নামে আসা প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে।

ফাহিমার ছোট বোন ফেরদৌসী বেগম জানান, ফাহিমা আপা খুব মেধাবী ছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষায় তাকে বহিষ্কার করার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখন থেকেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাহিমা আগের মতো আর নাই। সবসময় আবোল-তাবোল বলে থাকে। যেকোন সময় যে কাউকে আঘাত করার চেষ্টা করে। তাই তাকে শিকলে বন্দি করে রাখেন তার মা।

ফাহিমার মা মনে করেন, সমাজের বিত্তবান বা সরকারি সহযোগিতা পেলে তাকে উন্নত  চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

Next Post

রাজধানীতে দুই নারী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ।

বুধ ফেব্রু. ২৬ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ রাজধানীর মহাখালি সেতুভবনের সামনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বনানী থানার এসআই আফজাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে নিহত দুই নারীর পরিচয় জানান। তিনি বলেন, ‘নিহত একজনের কাছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। তার নাম […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links