কুড়িগ্রামে গবাদী খাদ্য সংকটে বিপাকে বন্যা দুর্গতরা

রুহুল আমিন রুকু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র গো-খাদ্য সংকট। যেটুকু মিলছে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে গৃহস্থদের। জেলার বাইরে থেকে খড় নিয়ে আসায় পরিবহন খরচসহ দাম বেশি থাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে সহযোগিতা দেবার আশ্বাস প্রাণিসম্পদ বিভাগের। কুড়িগ্রামে ভারী বর্ষণ আর মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬দফায় বন্যায় পানির কারণে জেলার কৃষি জমি এবং নিম্নাঞ্চল চারণ ভূমি ডুবে রয়েছে। এতে করে গো-চারণ ভূমি পানির নিচে ডুবে থাকায় ঘাস-খড় নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে পানি স্থায়ী হওয়ায় জেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। পানি কমতে শুরু করলেও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে চরাঞ্চলের মানুষ।

নিম্ন আয়ের মানুষজন নিজেদের খাবারের পাশাপাশি তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন প্রধান সম্পদ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ভারী বৃষ্টিপাত আর বন্যার পানি স্থিতি থাকায় চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের চারণ ভূমি এবং বাড়িতে সঞ্চিত গবাদি পশুর খাবার সম্পুর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পরবর্তী এ সময়টাতে চরাঞ্চলের কর্মহীন মানুষজন নিজেদের খাবার সংগ্রহ দুষ্কর সেখানে গো-খাদ্যের সংকটে দিশেহারা দিন কাটছে। বন্যার আগে জেলায় একশ খড়ের আটির দাম ছিল ২০০হতে ৩০০ টাকা আর বর্তমানে সেখানে প্রায় ৮/৯ গুণ বেশি চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে খড়। অনেকেই সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় ধারদেনা কিংবা গবাদি পশু বিক্রি করে খাদ্য কিনছে। খড়ের দাম বেশি হওয়ায় স্বামর্থ্য না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়েই গরু-মহিষের খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বাঁশ-গাছের পাতাসহ কচুরিপানা। এতে করে গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ফলে গাভির দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

এবারের বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার প্রায় ৫শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সরকারি হিসেব মতে জেলায় গরু-৮লাখ ৪৭হাজার ১৪৬টি,মহিষ-৩হাজার ৪৯৫টি,ছাগল-৪লাখ ১২হাজার ৪৮৫টি, ভেড়া-১লাখ ৬হাজার ২৩৩টি এবং ঘোড়া-২হাজার ৪৯৯টি রয়েছে। এরমধ্যে বন্যা কবলিত হয়েছে গরু-৬০হাজার ১৬টি,মহিষ-৭৩২টি,ছাগল-৩৮হাজার ৮১৪টি, ভেড়া-৬হাজার ১০৭টি, মুরগি-১লাখ ৬০ হাজার ৩৭টি এবং হাঁস-৪৮হাজার ৭৭৩টি গবাদি পশু। আর চারণ ভূমি ১হাজার ১১৬একর এবং ১৯৩টন খড়, কাঁচা ঘাস ৪৯৫ টন নষ্ট হয়েছে। খড় সংকটে রংপুর,রাজশাহী,পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁও সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে খড় কিনে এনে বিক্রি করছেন। সেসব জায়গাতেও খড়ের সংকট থাকায় দাম বেশি এবং শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া বাজারে বেশি মূল্য বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জনপ্রতিনিধিও জানালেন মানুষের দুর্ভোগের কথা। দীর্ঘদিনের বন্যা আর করোনায় কর্মহীন থাকায় সংসারের একমাত্র ভরসা গৃহপালিত পশু খাদ্যের সংকটে মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতার দাবী জানান সাধারণদের।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হাই সরকার বলেন,ইতোমধ্যে বন্যা চলাকালিন সময় জেলায় ১২লাখ টাকার পশু খাদ্য এবং জাতিসংঘের এফএও-র পক্ষ হতে সদরে-৯৩১টি এবং চিলমারী উপজেলায়-২হাজার ৯১৯টি পরিবারকে ৭৫ কেজি করে পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়। এছাড়াও প্রাণী সম্পদ বিভাগ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান।

Next Post

গোদাগাড়ীতে বিষ পানে আদিবাসী কিশোরীর আত্নহত্যা ।

বৃহস্পতি অক্টো. ৮ , ২০২০
গোদাগাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পারিবারিক কলহের জেরে বিপি হেমরম নামের এক আদিবাসী কিশোরীর বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মৃত কিশোরী বিপি হেমরম (১৪) উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাউটিয়া এলাকার সরেন হেমরমের মেয়ে। মা বাবা না থাকায় বিপি হেমরম ও […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links