আভা ডেস্কঃ করোনা টিকা নিয়ে গোটা বিশ্বে এখন আপাতত দুটি চিত্র দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে করোনা টিকা এখন সহজলভ্য। এসব দেশের অধিকাংশ নাগরিক টিকার দুই ডোজ নিয়ে ফেলেছেন এবং নিজেদের আপাতত নিরাপদ ভাবতেও শুরু করেছেন। তাদের অনেকের ভাবনা এই করোনার সমস্যা আপাতত আর তাদের নেই। এটা এখন কেবল অন্যদের সমস্যা!
অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলো এখনো করোনা টিকা পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক গুণ বেশি অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত তারা। কিন্তু তাও করোনা টিকা পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা মিলছে না। কূটনৈতিক চেষ্টাও জোরদার করেছে এসব দেশগুলো করোনা টিকা পাওয়ার আশায়। কিন্তু গোটা বিশ্বের মধ্যে স্বার্থপরতার স্পষ্ট বিভাজনের একটা রেখা ঠিকই তৈরি করে দিয়ে গেল করোনাভাইরাস।
এই সত্যটা স্বয়ং স্বীকার করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেডরস আধানম গেব্রিয়াসাস (ভিডিও দেখুন)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আধানম বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের এই সঙ্কটের সময়কে নিজের সমস্যা বলে মনে না করলে আপনি আপনার সর্বোচ্চটা করার জন্য অনুপ্রাণিত হবেন না। আত্মস্বার্থটা সহজাত। তবে আলোকিত আত্মস্বার্থও রয়েছে। অনেক দেশ যেখানে টিকা দেওয়াই শুরুই করেনি, আর সেখানে কিছু দেশ তাদের জনসংখ্যার সিংহভাগকে দুই ডোজ টিকা দিয়ে ফেলেছে। এখন তারা বুস্টার হিসেবে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার পথে। আসলে এর কোনো অর্থ নেই। আমরা যে ভাগাভাগির কথা বলি, সেটা বিনামূল্যে নয়। অধিকাংশ দেশ এর (টিকা ক্রয়) দাম দিতে সক্ষম কিন্তু তাদের কাছে টিকা নেই। আমরা বিশ্বাস করি দ্রুত টিকা উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষমতা বিশ্বের রয়েছে।’
করেনা টিকা উৎপাদন এবং বিলিবন্টন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টিকা উৎপাদনের অধিকাংশ মালিকানা যাদের রয়েছে, তারা উৎপাদন বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তাহলে তা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। সবাই জানে সামর্থ্যটা কাদের আছে। এটা সেসব দেশে আছে যাদের সামর্থ্য আছে, যাদের উৎপাদন সক্ষমতা আছে, যাদের অর্থনৈতিক শক্তি আছে। এটা দ্বি-স্তরের ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে।’
কোভিড-১৯ সমস্যা কোনো সুনির্দিষ্ট দেশের নয়, বরং গোটা বিশ্বের সমস্যা। আর তাই সমাধানের পথটা খুঁজতে হবে সমন্বিত চেষ্টায়।
সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আধানম বলেছেন, ‘উচ্চআয়ের যে দেশগুলো তাদের জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশকে টিকা দিচ্ছে, তারা কোভিড-১৯ মহামারিকে নিজেদের সমস্যা বলে মনে করছে না। এটা বিপজ্জনক। আমি মনে করি না যে, তারা ‘বনের’ বাইরে রয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তারা যখন বলে এই সমস্যা আর আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে না, তার অর্থ দাঁড়ায়, বাকী বিশ্ব উপেক্ষিত এবং ভাইরাসটির জিম্মি নাটককে দীর্ঘায়িত করছে। এক কথায় একে লোভ বলা যায়। আমরা এটা বার বার বলছি এবং আমাদের শোনার মতো কান প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদেরকে বলছি, এটা করা যাবে। আমরা যদি এটা দ্রুত আগ্রাসীভাবে করতে পারি, তাহলে টিকা উৎপাদিত হবে এবং বিশ্বকে উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে। এটা আমাদের হাতে। আমরা শিগগিরই এর সমাপ্তি টানতে পারব, কারণ আমাদের কাছে এখন সরঞ্জাম রয়েছে।’
সরঞ্জাম আছে। সূত্র আছে। সমাধানের উপায়ও আছে। কিন্তু সম্ভবত সবচেয়ে বড় অভাবের নাম সম্মিলিত প্রচেষ্টা! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধানের মন্তব্যের বিশ্লেষণ তো সেটাই জানাচ্ছে।