আভা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে এখন প্রায় সবাই। থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। ক্রমেই বাড়ছে সংক্রমিত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্যবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন ঘরে থাকার।
সেই পরামর্শ মেনে আন্তঃসংগঠনের সিদ্ধান্তে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শুটিং বন্ধ করে সবার মতো ঘরবন্দি জীবনযাপন করছেন অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এরই মধ্যে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নাট্যপরিচালক আদিবাসী মিজান গোপনে শুটিং করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। সেই শোরগোল থামতেই অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিমের বিজ্ঞাপনে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে টেলিপাড়ায় আবারও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে নানারূপ সংবাদ প্রকাশ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শুটিংয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত জানায় টিভি নাটকসংশ্লিষ্ট আন্তঃসংগঠনের নেতারা। সে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ১৭ মে থেকে ছয় শর্তে টেলিভিশন নাটক ও বিজ্ঞাপনসহ সব ধরনের শুটিং থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে এবার আন্তঃসংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুটিংয়ে ফিরতে চান কী না- এমন প্রশ্ন নিয়ে অভিনেতা, নির্মাতা ও প্রযোজকদের মধ্যে কথা হয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। জবাবে তারা কেউই শুটিংয়ে ফিরতে উৎসাহী নন।
চলমান পরিস্থিতিতে শুটিংয়ে ফেরার ব্যাপারে অনেকটা অনীহা নিয়েই অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেছেন, ‘করোনাকালীন আমিও তো শুটিং করছি। সেটা ঘরের মধ্যে, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে। আমি আমার ঘরে কাজ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেগুলার যে ফরমেটে কাজ হয়, সেই কাজে তো অংশগ্রহণ করতে পারব না।
ক্যামেরা ইউনিট, লাইটের ইউনিট, অনেক আর্টিস্ট নিয়ে আউটডোর, জনবহুল জায়গায় শুটিং করা যাবে না। কোনটা করা যাবে, যেটা কোনো একটা গল্প, হয়তো একটা ঘরের মধ্যে থেকে কাজ করা যাবে। তবে সেটা প্রফেশনাল হাউস হলেও সমস্যা।
এ ফরমেটটা পরিবর্তন করে কাজ করতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আগে যেভাবে পুরো ইউনিট নিয়ে কাজ করতাম, সেভাবে করা যাবে না। যতই আমরা বলি না কেন এ নিরাপত্তা বিধানটা ইউনিটে আমরা পাব না।’
এ মুহূর্তে শুটিংয়ে ফিরছেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি আসলে শুটিংয়ে ফিরছি না। আমার কাজ শুরু করতে আরেকটু সময় লাগবে। একটু অবস্থাটা বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নেব। তবে সেটা ঈদের আগে একদমই না। যারা শুটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝে শুনেই নিয়েছেন। আশা করছি, যদি শুটিং হয়ও কোনো ক্ষতি যেন না হয়। কিছু নিরাপত্তা গাইডলাইন দেয়া আছে, সেগুলো মেনে সবাই কাজ করুক। ভালো তো হয়, যদি এ মুহূর্তে আসলে কোনো কাজ না হয়।’
কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিনেতা আবদুন নূর সজল বলেন, ‘কিছুই বলতে পারছি না এখন। যে পরিস্থিতি তাতে করে ধীরে ধীরে সবাইকে কাজে ফিরতে হবে। এ সমস্যাটা যে খুব সহসাই শেষ হবে, সেটা কিন্তু নয়। সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করে যে যার কাজে আসতে হবে। সেটা নাটক বলে নয়, সবক্ষেত্রেই হয়তো তাই। তবে সাবধান ও সচেতন থেকে নিজেকে সুরক্ষা করে কাজ করা উচিত। আমি এখনও কী করব না করব এ নিয়ে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এখনও তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। দেখা যাক সামনে কী হয়।’
শুটিংয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নাকচ করে অভিনেত্রী, নাট্যকার ও নির্মাতা নাজনীন হাসান চুমকী বলেন, ‘আমি শুটিংয়ে ফিরছি না। শুটিংয়ে ফিরতে হলে অনেক বিষয়ে আন্তঃসংগঠনের অনুমতি নিতে হবে। একজন নির্মাতা বা প্রযোজক সেই অনুমতিও যদি নেয় তাহলেও এটার প্রসেসিং অনেক লম্বা। ওই অনুমতি নিতে গেলে প্রায় ১৪/১৫ দিন সময় লাগবে। তাহলে রোববার থেকে ঠিক কীভাবে শুটিং শুরু হবে আমি বুঝতে পারছি না। কয়েকটি চ্যানেল থেকে আমার কাছে ফোন এসেছে। কিন্তু কাজ করার ব্যাপারে আমি এখনও মানসিক অবস্থায় নেই। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখনও আমরা ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য একটু বিপজ্জনক। এখন যারা যাওয়ার তারা যাবেন। কেউ তো আর জোর করে কাজ করাতে পারবেন না। সুতরাং যারা যাবেন তারা যদি নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে পারেন, সুস্থ থাকেন তাহলে তো খুবই ভালো। কিন্তু আমরা কতটা নিয়মমাফিক চলতে পারব সেটাই দেখার বিষয়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক মন্তব্যের জবাবে জাকিয়া বারী মম লিখেছেন, ‘আমি শুটিং করব না এখন। যারা শুটিং করতে চাইছেন তাদের জন্য বলছি, ঈদ মোবারক।’
অভিনেতা ও নির্মাতা শামীম জামান সংগঠনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সবাই এ মুহূর্তে কাজের প্রয়োজন অনুভব করছে। ঘরে বসে খেলে রাজারও গোলা খালি হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় এ পেশার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো বিপাকে পড়েন। সংগঠন সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমিও শুটিংয়ের প্রয়োজন অনুভব করছি। বেশ কয়েকটি কাজ জমে আছে। তবে ঈদের আগে শুটিং করছি না। নিজের কথা না হলেও পরিবারের কথা চিন্তা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ঈদের পর দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং শুরু করব।’
ঈদ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন জানিয়ে নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেন, ‘আমি শুটিংয়ে যাচ্ছি না। আমার বিবেক, বুদ্ধি এখনও ঠিকঠাক আছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে না, এটা কোনো বিবেকবান, বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে এ মুহূর্তে শুটিংয়ে নামার কোনো ডিসিশন বা শুটিং করা। সরকারিভাবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত যে সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছে সেটা পর্যন্ত অন্তত দেখতে চাই। এরপরে যদি দেখি শুটিংয়ে ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তবে শুটিং করলেও করতে পারি। আমি বলতে পারব না যে আমি করবই। এ মুহূর্তে যারা শুটিং করতে নামছেন তাদের বলতে চাই, আপনারা প্লিজ একটু নিজ নিজ পরিবারের কথা মাথায় রাখবেন।’
মানসম্মত কাজ করতে পারবেন না, তাই এখনই কাজে ফিরতে চান না নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এ মুহূর্তে শুটিংয়ে ফিরতে চাচ্ছি না। দেশের অবস্থা আরেকটু দেখি। এখন অবশ্য ভালোর দিকে না। কারণ এখন প্রতিদিন হাজার খানেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এরকম অবস্থায় কীভাবে শুটিং করব বুঝতে পারছি না। আরেকটা বিষয় হল, শুটিং স্পটে আমরা কতটুকু নিরাপদ থাকতে পারব? কারণ একটা শুটিং ইউনিটে তো অনেক মানুষ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কাজটাও ভালো হবে না। আমি সবসময় আসলে কোয়ালিটি মাথায় রেখে কাজ করি। এখন যদি আমি কাজ করি সেটা আসলে শুধু কাজ কিংবা পেটের তাগিদে কাজ করা হবে। সেটা আসলে কোয়ালিটির জন্য কাজ করতে পারব না। হাতে গ্লভস, মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি পরে এত রিজার্ভ থেকে প্রোপারলি কাজটা করতে পারব না। তাই দেখি আসলে কতদিন পর্যন্ত এভাবে থাকা যায়। আমি আরও বেশকিছু সময় অপেক্ষা করব।’