কথায় কথায় হাত চলে রামেক হাসপাতালের এক টেকনোলজিস্টের!

আবুল কালাম আজাদ ঃরাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (রেডিওগ্রাফি) বিরুদ্ধে অভিযোগে শেষ নেই। এর ওপর বাড়তি উপদ্রুব হলো কথায় কথায় হাত চলে তার। মানে যাকে তাকে ধরে মারপিট করেন এই দাপুটে টেকনোলজিস্ট। তার নাম মোয়াজ্জেম হোসেন।

রোগির স্বজন এবং তার সহকর্মীদের অভিযোগ, টেকনোলজিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেনের আচরণ সব সময় মারমুখী।

তবে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, কাউকে মারেন না। অনেক রোগীর চাপ থাকার কারণে ‘অনাকাঙ্খিত’ কিছু ঘটনা ঘটে যায়।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, মোয়াজ্জেম সব সময় মারধর করেন এমনটি নয়। দুর্ব্যবহার আর গালাগালির কারণে কখনও কখনও মারধরের শিকারও হন। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে গত ১৩ মার্চ। রামেক হাসপাতালেরই একজন নারী কর্মচারী মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে এক্স-রে করাতে গেলে তাকে ‘গলাধাক্কা’ দিয়ে বের করে দেন মোয়াজ্জেম। ওই নারী তখন তার সহকর্মীদের নিয়ে গিয়ে মোয়াজ্জেমকে ‘শিক্ষা দেন’।

সহকর্মীরা জানান, মোয়াজ্জেমের নানা অপকর্মের কারণে তারা অতিষ্ঠ। টাকা ধার দিলেও ফেরত দেন না। চাইলে গালিগালাজ করেন। এক্স-রে করার সময় আদায় করেন অতিরিক্ত টাকা। এই টাকা না দিলেই রোগির স্বজনদের গালিগালাজ করেন। মারধর করেন। এসব কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি পার পেয়ে যান। আবার অভিযোগ হলে মোয়াজ্জেমই গিয়ে অভিযোগকারীর হাত-পা ধরে অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়ে নেন।

সূত্র জানায়, মোয়াজ্জেমের বাড়ি রাজশাহী নগরীর দাশপুকুর এলাকায়। তাই হাসপাতালে তার খুব দাপট। কয়েক বছর আগে এক্স-রে করার সময় নড়াচড়া করলে মোয়াজ্জেম চড় মেরে তার নাক ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে। কয়েক মাস আগে রাজশাহী আদালতের একজন পেশকারের সঙ্গে মারমুখি আচরণ করেন তিনি। এ নিয়ে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত চলাকালে মোয়াজ্জেম ওই পেশকারের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়ে নেন।

এছাড়া মোয়াজ্জেম হোসেনের হাতে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভের আঙ্গলু ভাঙার রেকর্ড আছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে পুলিশের একজন সদস্যের সঙ্গেও তার হাতহাতির ঘটনা ঘটেছে। রোগিদের কাছ থেকে এমন টাকা আদায়ের ঘটনায় মোয়াজ্জেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলামের কাছে মাফ চেয়ে পার পান। কিন্তু এখনও মোয়াজ্জেমের কাছে প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সহকর্মীরা। এদের মধ্যে এমএলএসএস আজাহার আলীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন মোয়াজ্জেম। সহকর্মী হুমায়ুন কবির ও আরেক এমএলএসএস আবদুল জলিলও মারধরের শিকার হয়েছিলেন তার হাতে। এছাড়া সহকর্মী আমিরুল ইসলাম তিব্বত, আবদুস শুকুর, মো. শামসুদ্দিন, তরুণ কুমার, হাসান আলী, নার্স মৌসুমি খাতুন ও রাবেয়া খাতুনসহ অনেকের সঙ্গেই মারমুখি আচরণ করেছেন মাদকসেবী এই টেকনোলজিস্ট। এসব ঘটনায় তারা অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের প্রধান ডা. হাফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে এক্স-রে বিভাগের ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা বলেন, মোয়াজ্জেমকে নিয়ে ছোটখাটো ঘটনা লেগেই থাকে। আমাদের সেগুলো সমাধান করে দিতে হয়। পাঁচ-ছয় মাস আগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হলেও শেষ পর্যন্ত তদন্ত হয়নি।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ সোহেল বলেন, একজন পেশকারকে মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। তবে মোয়াজ্জেম আবার ওই পেশকারের কাছে মাফ চেয়ে বিষয়টির সমাধান করে নেন। ফলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনোলজিস্ট মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমাদেও কাছে প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসে। এক্স-রে করাতে আগে সিরিয়াল পেতে অনেকেই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ঝামেলা হয়। তবে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, হাসপাতালে পরিবেশ নষ্ট করবেন সেটা হতে দেয়া হবে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। তিনি বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালের একজন কর্মচারির সঙ্গেই দুর্ব্যবহারের কারণে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয়েছে। সেটা তদন্তেও একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Next Post

এক মহিলার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এক ছিনতাইকারি।

বুধ মার্চ ২০ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে দিনে-দুপুরে মেহেনিগার (৫৮) নামে এক মহিলার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট অভিনব কায়দায় ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এক ছিনতাইকারি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বেইলী ব্রিজের উপড়ে ঘটে এ ঘটনা। জানা যায়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরনিগার তার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links