এ ঈদকে ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

Ava Desk : জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস আগে কোরবানির ঈদ। তাই এ ঈদকে ঘিরে চাঙ্গা হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রির জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। কোরবানির মূল আকর্ষণ ১ কোটি ১৬ লাখ পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আর সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে পশু আসতে শুরু করেছে।

এছাড়া চামড়া, মসলা, দা, বঁটি, পরিবহন, পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বাড়ছে টাকার প্রবাহও। আসতে শুরু করেছে রেমিটেন্স (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)।

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই ইতিমধ্যে বোনাস পেয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কোরবানির গরু কিনতে এলাকায় টাকা পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের কাছেও পাঠাচ্ছেন টাকা। সব মিলে কোরবানি ঘিরে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে।

তবে এর নেতিবাচক দিকও আছে। কারণ বাজারে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দুই ঈদেই বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়।

শহর থেকে গ্রামমুখী হয় টাকা। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক দিক হল, বণ্টন ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন হয়। এতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই টাকা পৌঁছে যায়। আর নেতিবাচক দিক হল, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।

২২ আগস্ট দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এ হিসাবে কোরবানির বাকি মাত্র ১০ দিন। এ ঈদে পশু জবাইকে কেন্দ্র করেই উৎযাপিত হয় মূল উৎসব। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ দুই কোটি ৩৫ লাখ। ছাগল ও ভেড়া দুই কোটি ৫৫ লাখ।

এ বছর কোরবানির উপযোগী ১ কোটি ১৬ লাখ পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭১ লাখ ছাগল ও ভেড়া। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ পশু। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, কোনো কারণে ভারত থেকে গরু আমদানি না হলেও এ বছর পশুর সংকট হবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিজিবির হিসাব অনুসারে, প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। সরকারি হিসাবে ২০১৩ সালে ভারত থেকে গরু আসে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার। ২০১৪ সালে এসেছে ২০ লাখ ৩২ হাজার। ২০১৫ সালে ২২ লাখ।

তবে সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে এবার আসার পরিমাণ কিছুটা কমবে।

এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে গরুর মাংস রফতানি বেড়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ভারতের মাংস রফতানি ৩ দশকিক ৪২ গুন বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশটি দশমিক ৬০৯ মিলিয়ন টন মাংস রফতানি করে। ২০১৪ সালে তা বেড়ে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়। মাংস উৎপাদনে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে দিয়েছে ভারত।

পশু কোম্পানির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতে চামড়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিবছর দেশে দেড় কোটিরও বেশি পশুর চামড়া পাওয়া যায়। এর বড় অংশই আসে কোরবানির পশু থেকে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের মূল বাজার ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাজারসহ এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়।

জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ মেট্রিক টন। রসুনের চাহিদা ৫ লাখ মেট্রিক টন, আদা ৩ লাখ টন। এর উল্লেখযোগ্য অংশই কোরবানিতে ব্যবহার হয়। গরম মসলা বিশেষ করে এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা, তেজপাতারও উল্লেখযোগ্য অংশ কোরবানিতে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে ২০১৪-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এলাচি, ৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন দারুচিনি, ১৭০ মেট্রিক টন লবঙ্গ এবং ৩৭০ মেট্রিক টন জিরা আমদানি হয়। কোরবানির বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হবে এসব পণ্যের। কোরবানির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হল কামার আইটেম। ছুরি, বঁটি, দা, চাপাতি, কুড়াল, রামদা ছাড়া কোরবানিই সম্ভব নয়। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোরবানিতে পণ্যটির বাজার এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পুরান কামার নিখিল কর্মকার যুগান্তরকে বলেন, ঈদ আসার ৩-৪ মাস আগে থেকে তারা সাধ্যমতো বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেন। ঈদের আগে তাদের এতই ব্যস্ত থাকতে হয় যে, কথা বলার সময় থাকে না।

এবারের ঈদ সামনে রেখে টাকার প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে। ঈদকে সামনে রেখে গত বছর প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল ১৩১ কোটি ডলার। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, এ বছর রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এক সমীক্ষায় বলা হয়, ঈদে পরিবহন খাতে অতিরিক্ত যাচ্ছে ৬০০ কোটি টাকা। এ উৎসবে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব খাতে নিয়মিত প্রবাহের বাইরে অতিরিক্ত যোগ হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

এর বাইরে আরও কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ড অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সাড়ে ২০ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্ভাব্য বোনাস বাবদ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। দেশব্যাপী ৬০ লাখ দোকান কর্মচারীর বোনাস ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭০ লাখ শ্রমিকের সম্ভাব্য বোনাস ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থ ঈদ অর্থনীতিতে বাড়তি যোগ হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঈদকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটায় শহর ও গ্রামে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সিপিডির এ গবেষক আরও বলেন, ঈদের অর্থনীতির আকার যা-ই হোক না কেন, দেশের ভেতরে এর মূল্য সংযোজন কতটুকু সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেক পণ্যই এ উপলক্ষে আমদানি হয়ে আসে। তিনি বলেন, মানুষের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের চাহিদায়ও বৈচিত্র্য এসেছে।

Jugantor

Next Post

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পাকিস্তানের সংসদে ভোটাভুটি হওয়ার দিন আজ।

শুক্র আগস্ট ১৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পাকিস্তানের সংসদে ভোটাভুটি হওয়ার দিন আজ। এরই মধ্যে পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান ও বিরোধীদলীয় জোট পিএমএলএনের সভাপতি শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানই নিশ্চিত। কারণ পিটিআইবিরোধী জোট গড়লেও শেষ পর্যন্ত শাহবাজকে সমর্থন দিচ্ছে না বেনজির ভুট্টোর […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links