আভা ডেস্কঃ ঋণ জালিয়াতির মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ (এসকে সিনহা) ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। রোববার দুদুকের দেয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিদের গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি একেএম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এছাড়া তদন্তাধীন অবস্থায় আসামি মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি সিনহা দুই বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। আসামিদের মধ্যে কেবল বাবুল চিশতী অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। তদন্তে ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া বাবুল চিশতীকে চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঋণ জালিয়াতির এই মামলায় এখনও তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি বলে আদালত তার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। রীতি অনুযায়ী তা এখন হাজতি পরোয়ানা হিসেবে গণ্য হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের নামে ৪ কোটি টাকা এসকে সিনহার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগে ১০ জুলাই মামলাটি করা হয়। এতে এসকে সিনহাসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এছাড়া ডিসেম্বরের শুরুর দিকে এ মামলায় সম্পৃক্ত একজনের তিনটি ব্যাংক হিসাবের মোট ৭৮ লাখ টাকা ফ্রিজের আদেশও দেন আদালত।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ভুয়া ঋণের নামে ৪ কোটি টাকা অপরাধলব্ধ আয়, যা ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অস্বাভাবিকভাবে নগদে, চেক বা পে-অর্ডারে অন্য হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। আসামিরা ওই অর্থ নিজেদের ভোগদখল ও তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপনের মাধ্যমে পাচার বা পাচারের প্রচেষ্টায় সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত হন।
চার্জশিটে আরও বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার নামে মঞ্জুরকৃত ঋণের ৪ কোটি টাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সুপ্রিমকোর্ট সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে জমা হয়। সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৪৪৩৫৪৩৪০০৪৪৭৫-এ জমা হওয়ার পর ওই টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর করে উত্তোলন করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করতে এ ধরনের অপরাধ করেন। তারা প্রথমে অবৈধ ঋণের ৪ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। এরপর নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করেন। অর্জিত অপরাধলব্ধ আয় ও অর্থ উত্তোলন, রূপান্তর ও নিজ আত্মীয়র হিসাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। এতে আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে তিনটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামি মো. শাহাজাহানের ব্যাংক হিসাব থেকে দুই কোটি এবং আসামি নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার ব্যাংক হিসাব থেকে দুই কোটি টাকা সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর দুটি চেকমূলে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার টাকা ও ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং শঙ্খজিত সিংহের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর হয়। ওই অ্যাকাউন্ট থেকে শঙ্খজিত সিংহ একক স্বাক্ষরে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে পুরো টাকা অন্যত্র স্থানান্তর করেন। আদালত শুনানি নিয়ে শঙ্খজিত সিংহের ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ডিইপিজেড শাখায় করা তিনটি হিসাব (একটি সঞ্চয়ী ও দুটি আমানত হিসাব) ফ্রিজের আদেশ দেন। হিসাবগুলোয় যথাক্রমে ১৮ লাখ, ৫০ লাখ ও ১০ লাখ টাকা রক্ষিত আছে।
যুগান্তর