এশিয়ান গেমসের ‘মহাসমুদ্রে’ ছোট্ট আলিকা নভেরি কেমন ‘সাঁতার’ কাটল?

আভা ডেস্ক : ১৮ তম এশিয়ান গেমসের আয়োজক ইন্দোনেশিয়া দলে জায়গা পেয়েছে আলিকা নভেরি। ১৮ আগস্ট গেমস শুরুর দিন বয়স ছিল ৯ বছর ১৩৬ দিন!

এশিয়ান গেমসের ‘মহাসমুদ্রে’ ছোট্ট আলিকা নভেরি কেমন ‘সাঁতার’ কাটল? মাত্র ৯ বছরের একটি মেয়ে কীই-বা আর ‘সাঁতার’ কাটবে! তার তো কিছু বুঝে ওঠারই বয়স হয়নি। কিন্তু অবাক কাণ্ড, সেই আলিকাই কিনা ১৮তম এশিয়ান গেমসের আয়োজক ইন্দোনেশিয়া দলে জায়গা পেয়েছে। এটিই তো একটা ইতিহাস। এর চেয়েও বড় ইতিহাস, আলিকা এই জাকার্তা এশিয়াডেই সর্বকনিষ্ঠ ক্রীড়াবিদ। ১৮ আগস্ট গেমস শুরুর দিন বয়স ছিল ৯ বছর ১৩৬ দিন!

মজার ব্যাপার, এই গেমসে এমন একজন আছেন, যাঁর বয়স শুনলে অবাক হবেন। যিনি এই আলিকার বাবার বাবার বয়সীই। ফিলিপাইনের ব্রিজ খেলোয়াড় কং তে ইয়ান। বয়স মাত্র ৮৫!

সে যা-ই হোক, ছোট্ট আলিকা কেমন করে সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। কিন্তু চর্মচক্ষে তা দেখার সৌভাগ্য খুব বেশি লোকের হয়নি। কারণ তার ইভেন্টটি হয়েছে জাকার্তা থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে, পালেমবাং শহরে। গতকালই শেষ হয়েছে তা। পদক হয়তো পায়নি ২০০৯ সালের ২ এপ্রিল জন্ম নেওয়া ছোট্ট মেয়েটি। কিন্তু না জিতেও সে পদক জিতেছে। এশিয়ান গেমসের মতো বিশাল মঞ্চে এত সাহস নিয়ে স্কেটবোর্ড করা কঠিনই। এটি অনেকটা রোলার স্কেটিংয়ের মতোই। স্কেটযুক্ত বোর্ডে উঁচু-নিচু জায়গায় শারীরিক কসরত করাই এই খেলা।

পরশু পালেমবাংয়ে আলিকার খেলা দেখে গতকাল জাকার্তা ফিরেছেন দেশলিয়ানা মৌলিপাকসি। ছোট্ট এই মেয়েটির জন্যই তাঁর এত দূর যাওয়া। মৌলিপাকসি কাজ করেন ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে, জনসংযোগ কর্মকর্তা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি নিয়ে তাঁর কাজ। এশিয়ান গেমসে বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার যেসব স্কুলের ছেলেমেয়ে গেমসে খেলছে, তাদের বিস্তারিত দেশবাসীকে জানানো। নতুনরা যাতে খেলায় আসতে অনুপ্রাণিত হয়, সেটাই বড় লক্ষ্য।

কাকতালীয়ভাবে মৌলিপাকসির সঙ্গে গতকাল জাকার্তা এশিয়ান গেমসের মূল প্রেস সেন্টারে কথা হচ্ছিল আলিকাকে নিয়ে। আলাপের সূত্রপাত বাংলা ভাষা নিয়ে তাঁর আগ্রহ প্রসঙ্গে। ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও অন্য অনেক দেশের মতো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। এরই আনুষ্ঠানিকতায় থাকতে হয় মৌলিপাকসিকেও।

গল্পে গল্পে কথা এগোয়। জানা গেল, এ বছরই ২২ ফেব্রুয়ারি জাভা ভাষায় জাকার্তায় ইয়ইস বেন নামে একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। জাভা হলো এখানকার আঞ্চলিক ভাষা। পরিচালক যখন জানালেন ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ছবি মুক্তির অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে সম্মান দেখান বাংলা ভাষার প্রতি। কারণ ছবিটা পরিচালক তৈরিই করছেন একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য। যার ৮০ শতাংশ সংলাপই জাভা ভাষায়। ভাষা নিয়ে কথা অসমাপ্ত রেখেই মৌলিপাকসি ফিরে যান আলিকার প্রশংসায়। ‘এইটুকুন একটা মেয়ে। এশিয়ান গেমসে খেলে ফেলল ভাবাই যায় না’-মৌলিপাকসির কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। ‘এই মেয়েটির সাহস দেখে অবাক হয়েছি। আমাদের ১২ বছরের একটি মেয়েও স্কিটবোর্ডে খেলেছে। ব্রোঞ্জ পেয়েছে সে। যেটি আমাদের তরুণদের জন্য উজ্জীবনী মন্ত্র।’

তাঁর কাছ থেকেই নম্বর নিয়ে আলিকার বাবাকে ফোন করা। নভেরি হাদরি ফোনের ও প্রান্তে তাঁর মেয়েকে নিয়ে উদ্বেলিত, ‘আমার ছোট্ট মেয়েটি এশিয়ান গেমসে একটা ইতিহাস গড়েছে। এর চেয়ে বড় আনন্দ নেই। আমরা সবাই খুব খুশি। পদক পায়নি তো কী হয়েছে!’

একটি কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী নভেরি হাদরি থাকেন জাকার্তায়। দুই কন্যার বড়জনের বয়স ১৫। তা ছোট্ট আলিকাকে কীভাবে স্কিটবোর্ড খেলায় এনেছেন? ভদ্রলোক বলতে থাকেন, ‘আলিকার বয়স যখন ৭, এক চাচাতো বোন স্কিটবোর্ড নিয়ে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। সেটাকে খেলনা হিসেবে খেলতে থাকে আলিকা এবং মজাও পেয়ে যায়। এরপর বায়না ধরে ওকেও একটা কিনে দিতে। কিনে দেওয়ার পর সে এত উন্নতি করেছে যে, এশিয়ান গেমসে ইন্দোনেশিয়া জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেছে। আমরাও এতে অবাক হয়েছি।’

আলিকা এমন বড় মঞ্চে স্বাভাবিকভাবেই স্নায়ুচাপটা সামাল দিতে পারেনি। খেলেছে মেয়েদের স্ট্রিট ইভেন্টে। ৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তার র‍্যাঙ্কিং ছিল ৬। পেয়েছে ১৩.৩ পয়েন্ট। প্রথম হওয়া ফিলিপাইনের মারজেলি দিদালের (৩০.৪) সঙ্গে ব্যবধান অবশ্য অনেক। আলিকা পরিবার ও বন্ধুদের সামনে এত বড় প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়ে কিছুটা ভয়ে ভয়েই ছিল। ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে মনের আনন্দে জাকার্তার স্কুলে যাওয়ার কথা যখন, আলিকাকে মেলাতে হয়েছে স্কিটবোর্ডে পয়েন্টের জটিল হিসাব-নিকাশ!

নিজের খেলা শেষ করে সে বলেছিল, ‘আমি নিশানা হারিয়ে ফেলেছিলাম। স্নায়ুচাপে ভুগেছি। তবে আমি খুব খুশি। এশিয়ান গেমসের মতো বড় আসরে প্রতিযোগিতা করতে পারলাম।’ বাবা নভেরি হাদরি বলছেন, কখনো তাঁরা চাপ দেননি মেয়েকে। সে যতটা পেরেছে সেটিই অনেক। সত্যিই তাই। মাত্র তো আলিকার শুরু। এভাবেই ছোট থেকে দেশে দেশে গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মানের অ্যাথলেট। ওরা ছুটে চলে বহুদূর, বহুদূর!
প্রথমআলো

Next Post

‘থর’ অভিনেতা ক্রিস হেমসওর্থ অভিনয় করতে যাচ্ছেন ‘ঢাকা’ নামের একটি নতুন ছবিতে।

শনি সেপ্টে. ১ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : ‘থর’ অভিনেতা ক্রিস হেমসওর্থ অভিনয় করতে যাচ্ছেন ‘ঢাকা’ নামের একটি নতুন ছবিতে। এ বছরের নভেম্বরে ভারতে শুরু হতে যাচ্ছে ছবিটির শুটিং। তবে ছবিটি তৈরি হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের জন্য। ব্যবসাসফল ছবি ‘অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়ার’-এর দুই পরিচালক জো রুশো ও অ্যান্থনি রুশো ‘ঢাকা’ ছবিটি প্রযোজনা করছেন। আর এ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links