একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন, সুজন

আভা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, এ নির্বাচন অনিয়মের খনি, যা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে; যা কোনোক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ৭৫টি আসনে ৫৮৭টি কেন্দ্রের সব বৈধ ভোট একটি প্রতীকে পড়েছে। এর মধ্যে ৫৮৬টিতে সব ভোট পেয়েছে নৌকা প্রতীক ও একটিতে পেয়েছে ধানের শীষ প্রতীক।

‘এ নির্বাচনে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধানে অস্বাভাবিকতা রয়েছে। অনেক কেন্দ্রে অস্বাভাবিহারে বাতিল ভোট পড়েছে। ব্যালট পেপার ও ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ করা কেন্দ্রগুলোতে ভোটপড়ার হারে পার্থক্য রয়েছে।’

নির্বাচনের ফলাফলের এসব তথ্য তুলে ধরে সুজন নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলর গঠন করার দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমান কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচন আয়োজন না করারও কথা বলেছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেছেন, ফলাফল প্রকাশে নির্বাচন কমিশন জালিয়াতি করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন পুরোপুরি যদি ভেঙে যায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এর আগে এ নির্বাচনকে ঘিরে নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।

তিনি জানান, ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার ৪০ হাজার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। আর ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১২৭টি কেন্দ্রে, ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ২০৪ কেন্দ্রে, ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে ৩৫৮ কেন্দ্রে এবং ৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে।

অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে এক হাজার ৪১৮টি ভোটকেন্দ্রে। ৯০-৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ৬ হাজার ৪৮৪টি কেন্দ্রে, ৮০-৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১৫ হাজার ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে এবং ৭০-৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৩টি কেন্দ্রে।

ভোটের জন্য নির্ধারিত সময়ে শতভাগ ভোটপড়া সম্ভব কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক হারে ভোট পড়াকে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ মনে করেন। অনেকের মতে নির্বাচনের দিনের ভোটের চিত্রের সাথে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রাম-১০ আসনের কথা তুলে ধরেছে সুজন। ওই আসনে গণ-সংহতি আন্দোলনের সৈয়দ মারুফ হাসান রুমী কোন ভোট পাননি। অর্থাৎ তিনি শূন্য ভোট পেয়েছেন। এমনটাই জানিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার। কিন্তু কয়েকদিন আগে প্রকাশিত কেন্দ্র-ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তিনি ২৪৩ ভোট পেয়েছেন।

দিলীপ কুমার জানান, গোপালগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের ৩৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৩৯টি কেন্দ্রের প্রদত্ত (৬১.৭৫ শতাংশ) সকল ভোট নৌকায় পড়েছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই তথ্যগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে অনিয়মের খনি বলতে পারি। আমরা মনে করি, চরম অনিয়ম হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলেন থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ থাকবে, তিনি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করে এই অনিয়মের অভিযোগগুলো তদন্ত করে… যারা এর জন্য দায়ী বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন পুরোপুরি যদি ভেঙ্গে যায় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা বদলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচন ব্যবস্থা যদি ভেঙ্গে যায়, অশান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল হয়, তখন আমরা কেউ নিরাপদ থাকব কিনা, এই প্রশ্ন রইল।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইভিএম ও ব্যালটে ভোট নেয়া আসনগুলোতে ভোটের শতকরা হারে কেন এত তফাৎ হলো? ইভিএম কেন্দ্রে কী রাতে ভোট কাটা সম্ভব হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার দাবি রইলো।

নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে ইসির এখন করণীয় নেই সিইসি কে এম নূরুল হুদার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাহলে এটা দেখার দায়িত্ব কার? কাদেরকে এসব দেখার সাংবিধানিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? ট্রাইব্যুনালে মামলার আগে তারা (ইসি) কেন ব্যবস্থা নেয়নি?

উচ্চ আদালতের একটি রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলে সেটি তদন্ত করে কমিশন চাইলে সে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। কিন্তু তারা কী তা করেছেন?

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আজ যে তথ্য প্রকাশ করা হলো এগুলো সুজনের তথ্য না, কোনো রাজনৈতিক দলের তথ্যও না। এটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রদত্ত তথ্য।

তিনি বলেন, বিদেশী বিভিন্ন অর্গানাইজেশন টিআইবি থেকে শুরু করে অন্যান্য সংগঠন যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে নেগেটিভ রিপোর্ট করে, তখন মন্ত্রীদের অনেকে বলে যে, তাদের তথ্যের উৎস সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ আছে। তবে এইটার ব্যাপারে তো সরকার বলতে পারবে না যে, উৎস সম্পর্কে সন্দেহ আছে।

জাতীয় নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টি ৭০ এর দশকের নির্বাচনে একমাত্র পার্টি হয়েও কোনো কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পায়নি। আমরা মনে হয় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টিকেও ছাড়িয়ে গেছি। এখন এই ফলাফল দেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এটা পাগল ছাড়া কেউ দাবি করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, যেসব কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, ওই এলাকার কোনো ভোটার কী মারা যায়নি। যে সকল কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, সেখানে যে জালিয়াতি হয়েছে তা প্রমাণ করতে হলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এই ফলাফল দেখানো যথেষ্ট বলে মনে করেন এ সিনিয়র আইনজীবী।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক নির্বাচন। এই কারচুপির নির্বাচন আয়োজনের বিচার না হওয়া এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে আর কোনো নির্বাচন না হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের আর কোনো নির্বাচন আয়োজনের নৈতিক অধিকার নেই। কারচুপির নির্বাচনের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের অবনতি ঘটেছে।

কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, অতীতে বাংলাদেশে অনেক অস্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে, গোঁজামিলের নির্বাচন হয়েছে। এবারে নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে তারা একেবারে ‘সোজামিলে’ চলে গেছে। সোজামিল মানে শতভাগ ভোট। এই সোজামিলের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তিনি বলেন, সিইসিকে অন্য কোনো ব্যাপারে না হলেও, রোজ হাশরের দিন এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এত সহজে কেউ তাকে ক্ষমা করবে না, আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।

যুগান্তর

Next Post

রাবি ছাত্রলীগ নেতার নামে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের।

মঙ্গল জুলাই ৯ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৭ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও লিচু চুরির মামলা দায়ের করা হয়েছে। নগরীর হেতেমখা এলাকার আব্দুল্লাহ ইবনে মনোয়ার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে রাজশাহীর সি এম এম আদালতে গত ১৫ মে এই মামলা দায়ের করেন। আগামী ১৬ জুলাই আসামীদের আদালতে […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links