উন্নয়ন হচ্ছে ঋণের টাকায়। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে লোকসান বাড়বে।

আভা ডেস্ক : ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকসান ছিল প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা এবং যাত্রী সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৭৮ লাখ। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) লোকসানের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে বলে ধারণা। অথচ আগের অর্থবছরের চেয়ে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সোয়া কোটি অর্থাৎ ৯ কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে রেল।

সেবার মান বৃদ্ধি ও মহাসড়কে যানজটের কারণে যাত্রীরা ট্রেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ট্রেন ও বগির সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে সেবার মানও। তার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লোকসান। উন্নয়নের নামে বাড়তি ব্যয়ও লোকসানের অন্যতম কারণ বলে ধারণা অনেকের।

উন্নত দেশে রেলপথ নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে যেখানে গড় ব্যয় ৩১ কোটি টাকা সেখানে বাংলাদেশে ২৫০ কোটি টাকা! প্রতিবেশী ভারতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ১২ কোটি টাকা। লোকসানের লাগাম টানতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ২০১৩ সালে ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কোনোটাই আলোর মুখ দেখেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে লোকসান মোকাবেলা করে বছরে হাজার কোটি টাকার উপরে আয় হওয়ার কথা।

তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একে লোকসান বলতে নারাজ। তারা বলছে, রেল সেবাখাত। আয়-ব্যয় মুখ্য বিষয় নয়। তাছাড়া রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজের ব্যয় রেলওয়ে থেকেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধও রেলওয়ে থেকে করা হয়। এসব ব্যয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে করার কথা থাকলে করতে হচ্ছে রেলওয়েকে।

প্রতি বছর প্রায় ৯শ’ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে। এখন প্রতিদিন ৮৮টি আন্তঃনগর ট্রেন, ১২৬টি লোকাল ট্রেন, ১৩২টি মেইল এক্সপ্রেস ও ডেমু ট্রেন এবং ৪টি আন্তঃদেশীয় ট্রেনসহ ৩৫০টি ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৭০টি কোচ এবং ইঞ্জিন আমদানির মাধ্যমে ইতিমধ্যে ১১৬টি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে।আগামী ৩ বছরে আরও ৭শ’ যাত্রী কোচ ও দেড়শ’ ইঞ্জিন আমদানির প্রকল্প চলমান রয়েছে।

এ নিয়ে কথা হয় রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, রেলওয়েতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে, বাড়ছে সেবার মান। বাড়ছে আয়ও। কিন্তু আয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে। রেল প্রকৃতপক্ষে সেবাখাত, সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। যাত্রী কম বা বেশি যাই হোক ট্রেন চালাতেই হয়। টিকিট বিক্রি করে লোকসান কমানো সম্ভব নয়। পিপিপির মাধ্যমে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক দফতর বলছে, আয় বাড়াতে গত ৫ বছরে দুই দফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আয় বাড়লেও বাড়ছে ব্যয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেলের ১ হাজার ৩০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা আয় হলেও ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরেও ব্যয় বেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। টিকিট বিক্রি করে লোকসান কমানো সম্ভব নয় জানিয়ে বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের হাজার হাজার একর জায়গা বেদখলে চলে গেছে, খালি পড়ে আছে। এসব জমি উদ্ধার ও খালি জায়গা পরিকল্পিতভাবে পিপিপির মাধ্যমে শপিং মল, হাসপাতাল, পাঁচ তাঁরকা হোটেলসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হলে আয় বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে অবকাঠামো দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, স্বল্পমূল্যে ট্রেন চালাতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয়ও কমবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর প্রস্তাবিত ব্যয় ঠিক করা হয়েছে ৯৫৮ কোটি টাকা।

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ‘ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন নির্মাণ’ প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শেষ হয়েছে। শুধু নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী লাইনে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালানো গেলে রেলের লোকসান শব্দটিই থাকবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, লাগাতার লোকসানের পরও রেলওয়ের খালি জায়গা বাণিজ্যিক কাজে লাগানো হচ্ছে না। তিনি জানান, উন্নয়ন হচ্ছে ঋণের টাকায়। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে লোকসান বাড়বে। তাছাড়া বাংলাদেশে রেলপথ নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।

উন্নত দেশগুলোতে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের গড় ব্যয় ৩১ কোটি টাকা হলেও বাংলাদেশে ২৫০ কোটি টাকা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ছে ১৩৯ কোটি টাকা। অপরদিকে ভারতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ১২ কোটি টাকা। পাকিস্তানে ১৫ কোটি এবং চীনে ১২-১৩ কোটি টাকা।
যুগান্তর

Next Post

পুলিশের সামনেই তাদের দেদারসে মার দিচ্ছে- দেখা গেল টিভি ক্যামেরায়।

শনি জুলাই ২১ , ২০১৮
ava desk : গণভবনে অনুষ্ঠিত চারবারের আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে, ‘দেশের কল্যাণে যা-কিছু প্রয়োজন তাই করবো।’ তার এ কথাটার মধ্যে বিরোধী দলের ও সমালোচনাকারীদের প্রতি একটা বেশ বড়রকম হুমকি রয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে কর্তৃত্ববাদী একদলীয় শাসন কায়েমের ইঙ্গিত (অবশ্যই বাকশালমার্কা দৃষ্টিভঙ্গি)। […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links