ঈশ্বরদীর পাকশীতে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এখানকার বড় বাণিজ্য।

আভা ডেস্ক : ঈশ্বরদীর পাকশীতে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এখানকার বড় বাণিজ্য। অভিযোগ আছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মন্ত্রী পরিবারের প্রভাবশালী মহলের অলিখিত সমর্থন ও ইন্ধন রয়েছে। এ কাজে কে কিভাবে সহায়তা করেন তার সবই এলাকাবাসী জানে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না। অথচ এখান থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীভাঙনের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মার দু’পারের বহু মানুষ। বিশেষ করে হুমকির মুখে পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্দিষ্ট দূরত্বের কাছাকাছি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় এই ঐতিহাসিক ব্রিজ হুমকির মুখে পড়বে। আর ব্রিজের এত কাছাকাছি এলাকায় বালুমহাল ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এলাকাবাসী জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পদ্মা নদী দখল ও বাঁধ দিয়ে বালু বাণিজ্য করছেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস। পদ্মা পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বালুর বিশাল পাহাড়। আর পাহাড়সম বালুর স্তূপে ঢাকা পড়ে গেছে নান্দনিক জোড়া সেতু অর্থাৎ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। এই বালুমহাল থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এসব বালুর ট্রাক থেকে আবার দিনে লাখ টাকার চাঁদাও তোলা হচ্ছে। এ কাজটিও করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েক প্রভাবশালী নেতাকর্মী। অভিযোগ রয়েছে, পরিবারের ছত্রছায়ায় থেকে অবাধে বালু বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি। আর প্রতি মাসে এখান থেকে পাওয়া মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা ভাগাভাগি হয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধাপে। সূত্র জানায়, গত বছর চাঁদা না দেয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালু সরবরাহ করার কাজে ভূমিমন্ত্রীর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরিফ তমালের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবলীগ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বাধা দেয়। এর প্রতিবাদে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেন। ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মন্ত্রী ও দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হওয়ায় সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সে সময় স্থানীয় প্রশাসন পদ্মা নদী থেকে সব ধরনের বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। সপ্তাহ খানেক বন্ধ থাকার পর পাকশীতে পদ্মা নদীর বালুর ব্যবসা আগের মতোই পুরোদমে শুরু হয় এবং এখনও তা চলছে। মন্ত্রী পরিবারের ছত্রছায়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক বিশ্বাসের একচ্ছত্র আধিপত্যে পদ্মা নদীতে বালুর বিশাল মজুদ গড়ে তুলে প্রতিদিন তা বিক্রি করা হচ্ছে। ক্ষমতার দাপটে নদীর স্বাভাবিক গতিরোধ ও বাঁধ দিয়ে পাহাড়সম বালুর মজুদ করে বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন প্রভাবশালীরা। বালু উত্তোলনকারী ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর এই বিশাল এলাকা লিজ না নিয়ে আগে সেখানে বালুর ব্যবসা পরিচালনা করতেন ভূমিমন্ত্রীর জামাতা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু। সে সময় মিন্টুর অন্যতম সহযোগী ছিলেন পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বিশ্বাস। পাকশী ইউপি নির্বাচনের আগে বালু ব্যবসা পরিচালনার জন্য মিন্টুসহ কয়েকজন দলীয় নেতার মধ্যে সমন্বয় ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এনামুল একাই তার বাহিনী দিয়ে এখানকার সবক’টি বালুমহাল ও বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, কোনো লিজ নেই, দলীয় প্রভাবে জবরদখল করেই বালুর ব্যবসা পরিচালনা করছেন পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাসগং। তারা জানান, শতবর্ষী ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর খুব কাছ থেকে বালু উত্তোলন করায় এই ব্রিজ দুটির জন্য হুমকি ও প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বালু উত্তোলন থেমে নেই। বালুর স্তুূপ বড় হতে হতে এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, বালুর বিশাল বিশাল স্তূপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর নান্দনিক দৃশ্য।

বালু ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর চারটি ঘাটে গড়ে প্রায় এক হাজার ট্রাক বালু বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১০ লাখ টাকার বালু এসব ঘাট থেকে বিক্রি হয়। জানা যায়, ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন এসব ঘাট ও বালুমহাল থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। সরেজমিন পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকার বালুমহালে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে ঘাটে ট্রাক-ট্রাক্টর আসছে, বালু বোঝাই করে চাঁদার টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছে বালু। বালুঘাটের একজন ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, এখানে এনামুলের নেতৃত্বে ছয়জন পার্টনার ছয়টি বালুর স্তূপ করে ম্যানেজার নিয়োগ করে বালু বিক্রি করছেন। বালুমহালের প্রধান নেতৃত্বদানকারী পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বিশ্বাস দাবি করেন, আমি এর সঙ্গে নেই। স্থানীয় ৮-১০ জন এর সঙ্গে জড়িত। তারা রেলের জমি লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করেন। তিনি আরও দাবি করেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে বালু স্তূপ করা হলেও এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। এ বালু কুষ্টিয়া, তালবাড়িয়া, আলাইপুর, পাবনাসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে নৌকাযোগে এনে নৌকার সঙ্গে ড্রেজিং মেশিন লাগিয়ে বালুর মজুদ করার পর এখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে বালু।

এ ব্যাপারে পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাসকে যুগান্তর থেকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
যুগান্তর

Next Post

জনতা ব্যাংকের দুটি শাখায় হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।

বুধ জুলাই ২৫ , ২০১৮
ava desk : জনতা ব্যাংকের দুটি শাখায় হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় ১১টি প্রতিষ্ঠান এ জালিয়াতি করেছে। এর মধ্যে জনতা ভবন কর্পোরেট শাখায় ৬৫৫ কোটি এবং স্থানীয় কার্যালয় শাখায় ২৬৬ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। এমনকি খেলাপি থাকাবস্থায় এ তালিকা থেকে ফের […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links