ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি, রাজশাহী গরীব অসহায়ের সাথে।

ঘড়িতে সময় বেলা ১১ টা বেজে ৪০মিনিট। স্থান রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন। প্লাটফর্মে অপেক্ষারত অসংখ্য মানুষ। শিশুরাও উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারী ও অন্যান্যদের মনে প্রশ্ন েএতোগুলো হতদরিদ্র মানুষ আসলে কি উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে? কি করতে যাচ্ছে তারা? কোথায় যাবে তারা?না কোন ট্রেনের জন্য না। আর কিছুক্ষণ পরেই তাদের মুখে একটু আনন্দের হাসি ফুটবে এই আশায়। এদিক ওদিক পদচারণা আর একে অপরের সাথে কথা বলছে তারা। কে কোথায় থাকে…কি করে…এসব কথার মাঝেই চলছিল সময়। পৌনে বারোটা হঠাৎ করেই এক শিশুর দৌড়। গিয়ে পৌছালো কিছু তরুন তরুনীর কাছে। জড়িয়ে ধরে তাদের ঈদের শুভেচ্ছা জানালো। এবার উপহার পাবার পালা।

টুকরো হাসি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যাদের অপেক্ষায় বেস ছিল হত দরিদ্র মানুষগুলো। সংগঠনের তরুন তরুনীদের দেখে মুখে হাসি চলে আসে সবার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সব দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য ঈদের বিশেষ খাবার ও হাতে পোশাকের রঙ্গিন ব্যাগগুলো নিয়ে নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।
সবাইকে একসাথে নিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়।

এই ঈদে হত দরিদ্র ও পথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাবে টুকরো হাসি পরিবার। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৬০ জন হতদরিদ্র এবং পথশিশুদের সাথে কথা বলে রেলওয়ে স্টেশনে আসতে বলেন তারা। কারণ বেশিরভাগই ওই এলাকায় থাকেন। কথা ছিল এবারের ঈদটি তাদের সাথে কাটবে। এসব মানুষদের নতুন পোশাক আর একবেলা ভাল খাবার তুলে দেবে সংগঠনটি। যেই কথা সেই কাজ। নিজেদের জমানো অর্থ আর পরিচিতদের আর্থিক সহযোগীতায় সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হয়ে এমন ব্যাতিক্রমধর্মী আয়োজন করে। হতদরিদ্র এসব মানুষ যারা কখনও ভাল খাবার খেতে পারে না তাদের জন্য নিজেরদের বাসা থেকে পোলাও, মাংস, সেমাই, নুডলস রান্না করে নিয়ে যাওয়া হয়। সাথে ছিল সংগঠনের নামের একটি কেক। যা পথশিশুদের নিয়ে কাটা হয়।

উৎসাহী ছিল অনেকেই, তবে ইচ্ছেটা ছিল তার চেয়ে বেশি। প্রায় ৭০ জন হতদরিদ্র মানুষকে খাবার পরিবেশন করা হয়। আর কিছু পথ শিশুদের নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়। সকলে আবেগআপ্লুত হয়ে মায়াবি দৃষ্টিতে যখন তাকিয়ে ছিলেন টুকরো হাসি পরিবার তখন ব্যস্ত সকলের গায়ে হাত বুলাতে। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল ঈদের দিনটিতে। টুকরো হাসি পরিবারের এমন কর্মকাণ্ডে চোখে পানি এনে দিয়েছিল রাজশাহী রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। কারণ ইচ্ছে থাকলেও সবাই সেটা করতে পারেনা। তাই মনেরে ইচ্ছেগুলো যখন অন্য কেউ কাজে রুপ দেয় তখন আবেগী না হয়ে পারা যায় না।
আশে পাশের অনকে দরিদ্র এসে অংশ নেয় তাদের সাথে

টুকরো হাসির পরিবারের পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্মকর্তা,কর্মচারী, গার্ড সবাইকে সেমাই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এবার খুশি হয়ে তারা সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। প্রয়োজনে যেকোন সহযোগীতার আশ্বাস দেন।

টুকরো হাসির পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সদস্য,বাবলি, বিশাল, রাতুল, সুমন, রিদু, জোনায়েদ, কাফি, সাফি, চাঁদনী, গোপাল, আবীর, তানভীর, রাফি, মোমিনুল। এসব মানুষদের পাশে দাড়ানোর অক্লান্ত প্রচেষ্টা যাদের সবসময় মাথার ডগায় থাকে। ঈদের দিনেও তাই পরিবার পরিজন ফেলে দরিদ্র মানুষের জন্য পরিশ্রম করে গেছেন। যাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র,“এক টুকরো হাসি”।

সংগঠনের সভাপতি সাজিয়া সুলতানা মিম বলেন, এবারে ঈদের ব্যাতিক্রমী কিছু করার চিন্তা ছিল। আমরা অনেক মানুষকে নিজেদের সাধ্যমতো ঈদ উপহার দিতে পেরেছি। আর ঈদের দিনটিও তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এসব মানুষেরা খুব একটা ভাল খাবার পায়না। আমাদের জানা মতে ঈদের দিনেও সেমাই পায় না। আমরা ‍কিছু মানুষকে তাদের ইচ্ছেটার বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, এসব কিছুর জন্য আমার প্রথমেই আমার মা আর বোনকে অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই। ঈদের দিনের সব কাজের পরেও তারা অনেক কষ্ট করে আমাদের জন্য ভোর থেকেই রান্নার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এরপর ধন্যবাদ আমার সংগঠনের সদস্যদের যারা ঈদের সব আনন্দ ফেলে এই সংগঠনকে ভালবেসে এই মানুষগুলোর পাশে দাড়িয়েছে। যাদের ছাড়া এসব কিছু হতো না।
শিশুদের নিয়ে টুকরো হাসির কেক কাটা হয়

ঈদ ভালবাসার, ভাতৃত্বের,সৌহার্দের। ঈদের প্রকৃত আনন্দ অন্যের মুখে হাসি ফোটানো। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগাভাগি করতে এমন ব্যাতিক্রমী আয়োজনে টুকরো হাসি পরিবার প্রতিবারই কোন না কোন আয়োজন করে থাকে। আগামিতেও এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংগঠনের সদস্যরা।

Next Post

বাঁধ ভেংগে মৌলভী বাজার শহরে পানি।

রবি জুন ১৭ , ২০১৮
শেষাবধি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়নি মৌলভীবাজার শহর। গতকাল শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় শহরের বারইকোণাতে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রায় ৩০ ফুট স্থান ভেঙে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমাঞ্চল প্লাবিত করে। রাতের বেলা আকস্মিক এই ভাঙনের ফলে কয়েক শ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। ঘরের মূল্যবান মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে পড়েছে। […]

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links