আমি চাদর গায়ে দিয়ে টুঙ্গিপাড়া চলে যাব- জাতির পিতা শেখ মুজিব

আমি চাদর গায়ে দিয়ে টুঙ্গিপাড়া চলে যাব- জাতির পিতা শেখ মুজিব

আমি চাদর গায়ে দিয়ে টুঙ্গিপাড়া চলে যাব

১৯৭৪ সালের ২৪ শে জুলাই নুরুল ইসলাম ঠান্ডু ভাই  (রাকসু ভি পি  বর্তমান আওয়ামীলীগ জাতীয় কমিটির সদস‍্য) ও মির্জা আনিসুর রহমান, (ভি পি এস এম হল,) ও আমি,  নওগা হতে নির্বাচিত সংসদ সদস‍্য পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক প্রায়ত আব্দুল জলিল ভাইয়ের বাসায় যাই।জলিল ভাইয়ের সাথে গনভবনে আসি।গনভবন গেটে আমাদের জন‍্য অপেক্ষারত ছিলেন মন্নুজান হল ছাত্রীসংসদ ভি পি ও সংসদ সদস‍্য লাইজু আপা ও নাটোর হতে নির্বাচিত সংসদ সদস‍্য সাইফুল ইসলাম।  আমাদের সাথে যুক্ত হন।উদ্দ‍্যেশ‍্য রাজশাহী বিশ্ববিদ‍্যালয়ের পক্ষ হতে বঙ্গবন্ধুর সাথে সৌজন‍্য সাক্ষাৎকার।

গনভবনে ঢুকে জলিল ভাই বঙ্গবন্ধুর কক্ষে ঢুকতেই তিনি উঠে আসলেন বললেন,” চল লনে বসি “আমরা ওনার সাথে পূর্ব পাশে লনে এসে বসলাম। কর্মচারিগন লনে চেয়ার এনে দিল বঙ্গবন্ধু মাঝ চেয়ার টায় বসলেন। আমাদের সাথে যুক্ত হলেন তথ‍্যমন্ত্রী কোরবান আলী,বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচীব  শ্রদ্ধেয় তোফায়েল আহমেদ ভাই বঙ্গবন্ধুর সাথেই ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সাথে কুশল বিনিময় শেষে তিনি আমাদের দেশের তৎকালিন পরিস্থিতির উপর কিছু বললেন এবং ঐ দিন মওলানা ভাষানী,মশিহূর রহমান যাদু মিয়া ও আতাউর রহমান খান দের পল্টন এ সরকার বিরোধী বিক্ষোব সমাবেশ বিষয় ও জানালেন। বললেন ঃ মুনসুর ভাইকে (তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী)বলেছি রাজাকারটাকে,(যাদু মিয়াকে) লাল দালানে রেখে আসতে।(যাদু মিয়া রাজাকার ছিলেন পরবর্তীতে জিয়া জেল থেকে ছেড়ে তাকে সিনিয়র মন্ত্রী বানাইয়াছিলেন)মওলানা ভাষানীও আতাউর রহমান খানকে সম্মানের সাথে বাড়ী পৌছে দিতে।

কথা গুল শেষ হতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এম মুনসুর আলী এসে হাজির হলেন। ওনাকে দেখেই বঙ্গবন্ধু আমাদের বসতে বলে তাৎক্ষনিক উঠে গেলেন এবং কিছুক্ষন একটু দুরে দাড়িয়ে ওনার সাথে কথা বলে আবার এসে চেয়ারে বসলেন।আমরা উৎসুক‍্যের সাথে কিছু শোনার অপেক্ষায় ছিলাম,গম্ভীর হয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন “রাজাকারটাকে (মশিউর রহমান)লালদালানে, আতাউর রহমান খান কে নিজ বাসায়,মওলানা ভাষানী কে সসম্মানে সন্তষ,টাঙ্গাইল ওনার বাড়ীতে,পাঠায়ে দেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন এবং বললেন দেশে যা শুরু হয়েছে তাতে আমার আর ক্ষমতায় থাকা হবেনা ( উল্লেখ‍্য তখন ছাত্রলীগে স্নায়ূযুদ্ধ,  বিভাজন, জাসদ সৃষ্টি, আওয়ামী লীগে ভুল বোঝা বুঝি, মোশতাক গ্রুপ সক্রিয়, তাজউদ্দিন আহমেদ ওসমানী,আবু সাইয়িদ চ‍ৌধুরী সহ বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ দিনের অতি বিশ্বস্ত বন্ধু নেতাদের  দুরত্ব সৃষ্টি ও মোশতাকের  ফায়দা হাসিলের ষড়যন্ত্র।দুর্ভিক্ষ,আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সব মিলিয়ে অবস্থা ভাল ছিলনা)সংসদ সদস‍্য লাইজু আপা বললেন এ সিংহাসন শুধু আপনার, ইষৎ হেসে বঙ্গবন্ধু বললেন “বাংলার সিংহাসন নাহি রবে খালি। বঙ্গ থাকবে, বন্ধু থাকবেনা। জাতি থাকবে পিতা থাকবেনা। আমার যদি সিংহাসনে থাকতে হয় তা হলে জাতির পিতা আমার থাকা হবেনা।” ঠান্ডু ভাই বললেন তবু ও আপনার ই এই সিংহাসন বঙ্গবন্ধু হেসে দিয়ে আমাকে ইঙ্গিত করে বললেন “আব্দুর রহমান তুই ত আইনের ছাত্র বলতাে জাতীর পিতা না থাকলে সে জাতি কি হয়”? বলেই খুভ গম্ভীর হয়ে গেলেন এবং বলে উঠলেন,”সবাই যা

 শুরু করেছে আমি চাদর গায়ে দিয়ে টুঙ্গীপাড়া চলে যাব।”

 রাজনীতির নানা মেরুকরনের মধ‍্য দিয়ে দেশ ১৯৭৫ -এ জানুয়ারী বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৫ ই আগষ্ট গোপালগঞ্জ সংলগ্ন মানিকদাহ গ্রামে এমদাদুল হক চৌধুরী বর্তমান জেলাপরিষদ চেয়ারম‍্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহেবের বাড়ীতে ছিলাম। সকাল ৬ টার দিকে একটি বাচ্চা ছেলে খবর দিল শেখ মুজিব কে হত‍্যার খবর হচ্ছে রেডিওতে। আমি ও চৌধুরী সাহেব লাফিয়ে উঠলাম রেডিও

খুললাম খবর শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম কানে বেজে উঠল গনভবনে বঙ্গবন্ধুর উচ্চারিত ভবিশ‍্যত বানী “বাংলার সিংহাসন নাহি রবে খালি, বঙ্গ থাকবে,বন্ধু থাকবে না। জাতি থাকবে,পিতা থাকবে না” “আমি চাদর গায় দিয়ে টুঙ্গিপাড়া চলে যাব,”_

১০ টার দিকে আমি ও চৌধুরী সাহেব শহরে আসি। শহর জনপদ স্তব্ধ ছিল।শুধু মাত্র তৎকালীন বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম খান মিরাজের নেতৃত্তে ছাত্রদের প্রতিরোধ পুলিশের বাধায় পড়ে,এ ছাড়া কোথা ও কোন পাখির ডাক,জনপদে কোলাহল ছিল না,বাতাসে ছিল না কোন স্পন্দন। গভীর উৎকন্ঠায় ১৫ আগষ্ট শেষ হল। পরদিন সকাল ১০টার দিকে হেলিকপ্টার টি দেখা গেল টুঙ্গীপাড়ার আকাশে আমার পরম শ্রদ্ধেয়, বাংলা মায়ের সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ সন্তান,বাংলার মহানায়ক,স্বাধীন বাংলার স্থপতি, জাতির জনক চাদর গায় দিয়ে টুঙ্গিপাড়া আসলেন।

১৯৭৮ সালের ১৫ ই আগষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর বাল‍্য বন্ধু প্রাক্তন মন্ত্রী মোল্লাজালালউদ্দিন আহমেদ, এডভোকেট মাহবুব আলী আলী,  গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা রইস মিয়া  এমদাদুল হক চৌধুরী (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম‍্যান) আক্তারউদ্দিন মিয়া সাবেক সংসদ সদস‍্য আর ও কিছু নেতা কর্মী সহ টুঙ্গিপাড়া যাই এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর অনাড়ম্বর কবর জিয়ারত করি। অশ্রুতে ভরে ওঠে চক্ষু।মনে হয় মহা বীর আলেকজান্ডার বলছে “সেলুকাস বিচিত্র এই দেশ”মনে পড়ে বাংলারস্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার  মৃত‍্যুর সময়ের শেষ কথাটি   “হায়রে অভাগা দেশ”।

“মিছিলের পুরোভাগে ছিলে

পথের ইশারা রেখে,

তুমি গেছ চলি।

আজ ও হাটি সেই পথ ধরে,

তোমার ভাষায় তাই

আজ ও কথা বলি”

জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু!!!

মুন্সী আব্দুর রহমান (এডভোকেট ) সাবেক ভি পি,এস এম হল ও আহবায়ক ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ‍্যালয় ১৯৭২।

 

Next Post

রাজশাহী মহানগরীতে ১৫০ পিচ ইয়াবাসহ আটক-১

বুধ আগস্ট ১৮ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহী মহানগরীতে ১৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ১ ব্যক্তিকে আটক করেছে আরএমপি’র বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামী হলো রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার জয়পুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিন নিরার ছেলে মোঃ দুলু (৩৪)। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, এসআই মোঃ গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে আরএমপি’র বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links