আবরার হত্যায় রাজশাহীর দুই শিক্ষার্থী রবিন ও অনিক জড়িত।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে যাঁদের নামে মামলা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রাজশাহীর দুই শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের প্রচার ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার এবং ছাত্রলীগকর্মী মেহেদী হাসান রবিন। এঁদের মধ্যে অনিক গত সোমবারই গ্রেপ্তার হয়েছে। আর রবিনকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে এই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি শোনার পর থেকেই মুশড়ে পড়েছেন। হতবাক হয়েছেন তাদের বাবা-মা। তাঁরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না, এত মেধাবী ছেলেরাও আরেকজন মেধাবী ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার মতো লোমহর্ষক ঘটনার সঙ্গে জড়িত হতে পারেন।

 

পরিবারের ধারণা কোনো অসৎ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েই হয়তো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন অনিক ও রবিন। তবে ঘটনাটির তাঁরা সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচার দাবি করেছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিক সরকারের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বড়ইকুড়ি গ্রামে। অনিক ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক আনোয়ার হোসেনের ছেলে। আনোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তবে ব্যবসার প্রয়োজনে তিনি পরিবার নিয়ে মোহনপুর উপজেলা সদরের বড়ইকুড়ি গ্রামে থাকেন। অনিকরা দুই ভাই। এর মধ্যে অনিক ছোট। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের কাপড়ের দোকান রয়েছে।

 

আছে পেট্রল পাম্প, এবং সারের ব্যবসা। ব্যবসার অর্জিত অর্থ দিয়েই দুই ছেলেকে পড়া-লেখা করান আনোয়ার হোসেন। অনেক সহজ-সরল প্রকৃতির আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে অনিক নিয়েই ছিল বড় স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ভেস্তে যেতে বসেছে অনিক একই শিক্ষা পতিষ্ঠানের আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে।

পাশাপাশি আনোয়ার হোসেনের পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। যেন মুশড়ে পড়েছেন অনিকের বাবা-মা। অনেকটা অসুস্থও হয়ে পড়েছেন আনোয়ার হোসেন।

 

গতকাল অনিকের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ছেলেকে নিয়ে ছিল আমার অনেক আশা-ভরসা। আজ সব ধুলোই মাটি হতে চলেছে। আমি ভাবতেও পারি না এমন মেধাবী একটা ছেলে আরেকজন মেধাবীকে হত্যা করবে। তার তো কোনো অভাব ছিল না। আমি তাকে কোনো অভাব বুঝতে দেয়নি। কিন্তু কেন সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লো? আবার কেনই বা আরেকজনকে হত্যা করতে গেলো? হয়তো সঙ্গদোষে এমন কাণ্ডে জড়িত হতে পারে। কাজেই ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করে আমি বিচার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

 

বাবা আনোয়া হোসেন আরো বলেন, ‘অনিক মোহনপুর সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়েছিল। সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করে ডুয়েটে ভর্তি হয়। কোন সাবজেক্টে পড়ে বলত পারব না। সে রাজনীতি করত এটাও জানি না। কিন্তু মাস দুয়েক আগে আমি শুনেছিলাম সে ক্যাপ্টেন হয়েছে। কিন্তু কিসের ক্যাপ্টেন হয়েছে বলতে পারব না। ওই কথা শোনার পরেই আমি তাকে বোকা-ঝোকা করেছিলাম। কেন তুই এসব করতে গেছিস। পড়তে গেছিস পড়বি। অন্য কোনো কিছুতে জড়িত হতে হবে না।’

 

 

অন্যদিকে রবিনের বাড়ি হলো, রাজশাহী মহানগরী কাটাখালি থানার কাপাশিয়া পূর্ব পাড়ায়। এই গ্রামটি পড়েছে পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভা এলাকার মধ্যে। রবিনের বাবা মাকসুদ আলী পুঠিয়া উপজেলার ভড়ুয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তাঁর একমাত্র সন্তান হলেন রবিন। রবিন বাবার স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করে রাজশাহী সরকারি নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। এরপর ডুয়েটে ভর্তি হয়। আর মাত্র সাত মাস পরেই রবিন পাশ করে বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে রবিনের পরিবারেও নেমে এসেছে হতাশার ছাপ।

বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা রশিদা বেগম যেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

 

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুনছি আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কেন সে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হবে? আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না সে এমন একটি ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবে। তাকে তো আমরা পড়া-শোনা করে ইঞ্জিনিয়ার করতে পাঠিয়েছে ঢাকায়। কিন্তু সে হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে কখনোই ভাবতে পারিনি। তবে ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি।’

Next Post

রাজশাহীতে আবরার হত্যা প্রতিবাদে ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের বাধা।

বৃহস্পতি অক্টো. ১০ , ২০১৯
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহীতে ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের বাধা।  আজ বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর ভূবন মোহন পার্ক এলাকার বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানায়, বুয়েট আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links