আভা ডেস্কঃ সম্মানের ভয়ে ও অভিমানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি রাজশাহীতে এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বাবা-মার প্রতি অভিমান, প্রেমে ব্যর্থতা, শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, আত্মসম্মান ও উদাসীনতার কারণেই ঘটছে আত্মহত্যার মত ঘটনা। এই অনকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে সাবধান থাকতে হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থরা যেনো আত্মহত্যার মত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে সেই বিষয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে পরিবার থেকে। রাজশাহীতে গত একমাসে ৮ জন স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। কেউ বাবা-মার উপরে অভিমানে, কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে। আবার কেউ আত্মসম্মানের ভয়ে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ এপ্রিল বাঘায় দুই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করে। একজন উপজেলার খায়ের হাট গ্রামের সাইফুল মন্ডলের মেয়ে ও স্থানীয় কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী তৃশা খাতুন (১৭)। অপরজন উপজেলার হরিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে ও স্কুল পড়ুয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তি আক্তার (১৪)। শয়ন কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে উড়নায় তৃশা ও বিষপানে মুক্তি আত্মহত্যা করে। পুলিশ বলছে, পড়তে বসতে বলায় অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তারা।
তার দু’দিন পরে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জন্মদিন নিয়ে মা-বোনদের সঙ্গে মনমালিন্য হওয়ায় প্রিয়াঙ্কা সাহা নামে রাবির নাট্যকলা বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
অন্যদিকে, গত ২৭ এপ্রিল রাবি সাবেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোকলেসুর রহমানের ছেলে মাহফুজুর রহমান অয়ন (২৫) সিলিং এর সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ জানতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া গতত ১৬ মে রাবি ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাকসুদার আক্তার স্মৃতি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল সে।
একই দিনে বাঘায় মায়ের উপর অভিমানে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। উপজেলার পীরগাছা গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফার স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী মৌসুমি (১৪) তেথুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। পুলিশ জানায়, বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আবদুল ওয়াহাব জানান, পড়ার জন্য মা বকাবকি করে- তাই আত্মহত্যা করেছে।
ওই দিনে গোদাড়াগীতে লজ্জা ও অভিমানে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্র জসিম। এর আগে জসিমকে গ্রাম্য সালিশে জুতা পেটা করা হয়। ওই স্কুল ছাত্র উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের শাহাব্দিপুর গ্রামেরয় মজিবুরের ছেলে ও পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।
জসিমের বড় ভাই রাশিদুল জানান, পরিবারে চার ভাই বোনের মধ্যে সব ছোট জসিম। কারো সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। তবে আমার ছোট ভাই গতকাল তারাবির নামাজের সময় তার সহপাঠী বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে আটকিয়ে রেখে বাড়িতে খবর দেই। পরে জসিমের বাবা আসলে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজন গ্রাম্য সালিশের রায়ে জসিমকে তার বাবা ২০ জুতা পেটা করে। সেই রাত থেকে থেকেই জসিম নিখোঁজ ছিলো। একদিন পরে পাশের এলাকার একটি ডোবার উপর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (১৪) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিলপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নান মেয়ে বর্ষা দুপুরে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমাতে যায়। কিন্তু বিকেল হয়ে গেলেও ঘুম থেকে না ওঠায় পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা খুলে বর্ষার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করে।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন জানান, সুমাইয়া আক্তার বর্ষার বাবা তার মেয়ে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে-এমন অভিযোগে মামলা করেন।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, প্রত্যেক পরিবার থেকে সন্তানদের প্রতি একটি সমর্থনমূলক ভূমিকা থাকা দরকার। আমরা সন্তানদের উপর অনেক কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি, যা তাদের ধারণ ক্ষমতার উর্ধে। সন্তানরা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পেরে হতাশায় ভোগে।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক বিকাশের সুযোগ কমে আসছে। কাঁধে এক গাদা বইপত্র নিয়ে দৌড়াতেই তাদের সময় শেষ। শুধু পড়ালেখাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে তাদেরকে অন্যান্য কো কারিকুলার এক্টিভিটিসে অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বাবা মাকে সন্তানের মনের অবস্থা বুঝতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমে আসবে।
সিল্কসিটি