অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নাব্যতা হারিয়ে মৃত্যুর মুখে রাজশাহীর বারনই নদী

মাজহারুল ইসলাম চপল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ  অব্যবস্থাপনা ও নাব্যতা হারিয়ে ধংসের পথে  রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বারনই নদী। তার উপর শহরের বর্জ্য ও দুষিত পানি নদীটিকে আরও অস্বাস্থ্যকর করে ফেলছে।

রাজশাহীর ৯ টি নদীর মধ্যে এই নদীটিও অন্যতম একটি। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ  দিয়ে বয়ে গেছে দেশের একটি বড় নদী পদ্মা। অবশ্য পদ্মার সঙ্গে তার কোনো তুলনা করা যায় না, কারণ হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে পদ্মার উৎপত্তি হয়েছে। আর বারনইয়ের উৎপত্তি হয়েছে নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের একটি বিল থেকে। তানোর উপজেলার মধ্য দিয়ে শিবনদী নাম ধারণ করে পবা উপজেলার বাগধানী এলাকায় এসে সে বারনই নাম ধারণ করেছে। নদীটি রাজশাহী থেকে নাটোরের আত্রাই নদে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য বড়জোর ৫০ কিলোমিটার, আর গড় প্রস্থ প্রায় ১০০ মিটার হতে পারে। এই নদীটিতে বারো মাস পানি থাকে বলে এই নদীর নাম হয়েছে বারনই। এই নদী সম্পর্কে ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ-ভারতের মুখ্য পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উইলিয়াম উইলসন হান্টার তাঁর স্টাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল গ্রন্থে বলেছেন, রাজশাহীর যে কয়টি নদীর নাব্যতা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নাব্য হচ্ছে বারনই। এই নদীপথেই বাংলার সুবাদার ইসলাম খান ১৬০৮ সালে নওগাঁয় এসেছিলেন।

অথচ শহরের সারাদিনের বর্জ্য এই নদী দিয়ে নামানোর কারনে নদীটিকে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় এই পানিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে , কিন্তু এই বর্জ্যগুলো পুড়িয়ে ফেলার কথা। এ জন্য নদীটিতে টিকতে পারছে না কোনো মাছ। আস্তে আস্তে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদীটি। এতে বেকার হয়ে পড়ছে শত শত জেলে। সরকারিভাবে ও  স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা বেশ কয়েকবার মাছ ছাড়লেও কিছুক্ষণের মধ্যেই মরে ভেসে ওঠে। আর এর খেশারত দিতে হচ্ছে এই নদীতে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো জেলে। শুধু জেলেই নয় এর খেশারত দিতে হচ্ছে এই নদীর পানি ব্যবহার করা হাজার হাজার মানুষকে। যার ঠিকানা হচ্ছে ক্লিনিক ও হাসপাতালে। এছাড়াও নদীর কোল ঘেঁসে রয়েছে কয়েকশত গ্রাম, যারা কিনা নদীর পানিতে ছোটবেলা থেকে গোসল করে বড় হয়েছে, চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তারা নদীতে গোসল না করলে থাকতেও পারে না। বর্তমানে তাদের গোসলের পরিবেশ থাকছেনা। এতে  চুলকানি সহ বিভিন্ন চর্ম রোগে ভুগতে হচ্ছে। এমনকি গন্ধযুক্ত পানি তারা মুখেও নিতে পারছেনা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যেই সাংবাদিকদের বলা হয়, তারা তাদের বর্জ্য পানি শোধন করে নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করবে। এসব কথা মঝে মধ্যেই পত্র-পত্রিকায় ছাপাও হয়। খুশির ব্যাপার! কয়েক বছর আগে নদীটার ভাটিতে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। শুকনা মৌসুমে বাতাস দিয়ে এই ড্যামের পেট ফোলানো হয়। তখন পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। নদীটা একটা বদ্ধ খালে পরিণত হয়। এতে আটকে যায় যত সব বর্জ্য। বর্তমানে সেটাও আর কাজ করেনা। শহরের দুষিত পানি ও বর্জ্য চলে যাচ্ছে সেই বারনই নদীতে।  আর হুমকির মুখে পড়ছে লাখো মানুষ।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পানিতে কলিফর্ম, সালমোনেলা ও সিগেলা জাতীয় ভয়ংকর সব ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়া, আমাশয়, ক্রিমিসহ যাবতীয় পেটের পীড়ার জীবাণু বহন করে।ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলার হাত থেকে বাঁচার জন্য সারা পৃথিবীতে সুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের এই অবস্থা। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

এবিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিছন্ন বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন ( ডলার ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, আমাদের রাজশাহীতে যে সকল নদী আছে এর মধ্যে বারনই নদীটিরই নাব্যতা আছে, বাকী নদীগুলো নামে মাত্র। আমাদের শহরে তুলনামূলক কল-কারখানা কম থাকায় দুষিত পানি ও  বর্জ্য কম হয়। তাছাড়া শহর থেকে নদীটি প্রায় দশ থেকে বার কি.মি. দুরে।  শহর থেকে এই দুষিত পানি এরেশানের মাধ্যমে এই পানির সাথে থাকা ভয়ানক ব্যকটেরিয়া গুলো থাকে সেগুলো অনেকটায় মারা যায়। তবে শহরের যে বর্জ্য নদীতে যায় এর জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শোধনাগারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই শোধনাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। আর নদীর নাব্যতার বিষয়ে, এটি পানি উন্নয়নের বোর্ডের কাজ। এটি তারা দেখবে।

Next Post

রাজশাহীতে চুরি যাওয়া টিটিসির মালামাল উদ্ধার

মঙ্গল মার্চ ২৩ , ২০২১
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(টিটিসি), কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশের তল্লাশী অভিযানে সিংহভাগ মালামাল উদ্ধার হয়। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক এর মাধ্যমে জানা যায়, গত ২০ মার্চ ২০২১ তারিখ বিকেল ০৫.০০ টায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সের ইনচার্জ প্রশিক্ষণ শেষে ৩০৭ নম্বর কক্ষ বন্ধ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links