অসুস্থ বাবাকে বাচাঁতে মেয়ে আকুতি, পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার কিশোরপুর গ্রামের মেয়ে আইরিন খাতুন। বাবা আব্দুল মালেক পেশায় মুদি দোকানি। কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত মাকে নিয়ে বাবা-মেয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পার করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। এবার আক্রান্ত হয়েছেন বাবা। যিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।

মায়ের চিকিৎসাকালীন রামেক হাসপাতালে সপ্তাহজুড়ে মেয়ে আইরিন দেখেছেন স্বজন হারানো আর্তনাদ। সেই ভয় থেকেই করোনাক্রান্ত ও নানা রোগে অসুস্থ বাবাকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের নিকট আকুতি তার।

এদিকে মায়ের চিকিৎসায় বাবার সকল সঞ্চয় শেষ করেছেন আইরিন। সুস্থ ও শঙ্কামুক্ত হওয়ায় ২০ জুন মাকে নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। কিন্তু কিছুদিন পরই পরিবারের একমাত্র ভরসা বাবা করোনা আক্রান্ত হন। আবারও রামেক হাসপাতালে আসতে হয়েছে আইরিনকে। ষাটোর্ধ বাবাকে নিয়ে তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে নতুন শঙ্কায়। রামেক করোনা ইউনিটের এক নম্বর ওয়ার্ডের ২৭ নম্বর বেডে আইসিইউ’র অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন আইরিন।

ইতোমধ্যে অসুস্থ বাবাকে আইসিইউসহ প্রায় ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ইনজেকশন কিনতে বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা প্রায় নিঃস্ব। কোনো উপায়ান্তর না দেখে হতাশ হয়ে পড়ে তার পরিবার।

পরিবারের অচলাবস্থা ও আর্থিক সঙ্কটের বিষয়ে আইরিন খাতুন জানান, গ্রামে বাড়ির সামনে বাবার ছোট্ট একটি মুদি দোকান আছে। সেখান থেকে বাবা পরিবারের ভরণপোষণ মিটিয়ে তাদের দুই ভাইবোনকে পড়াশোনা করান। তিনি এলাকার তেরকান্দিয়া কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে আছেন। তার ছোট ভাই এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাদের আপন বলতে মা-বাবা ছাড়া আর কেউ নেই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আইরিন জানান, বাবা তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মায়ের অসুস্থতার সময় তিনি বাবার সঙ্গে হাসপাতালের এই ওয়ার্ড থেকে ওই ওয়ার্ড, বিভিন্ন ফার্মেসিতে গিয়েছেন। এখন সেই বাবা অসুস্থ। বড় মেয়ে হিসেবে তাকে সবকিছু করতে হচ্ছে। চিকিৎসক আইসিইউতে নিতে বলেছেন। কিন্তু আইসিইউতে জায়গা না থাকায় এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে চিকিৎসক একটি ইনজেকশন নিতে বলেছেন যার দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো টাকাই আর নেই। মায়ের চিকিৎসায় বাবার সব সঞ্চয় শেষ হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের মানুষের সহায়তায় বাবার চিকিৎসা চলছিল, সে অর্থও শেষ। পরিবারে বাবা একমাত্র ভরসা। তাকে বাঁচাতে প্রয়োজনে ভিক্ষা করতে হলেও করব।’

আইরিন বলেন, ‘এক গণমাধ্যমকর্মীর পরামর্শে জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্যের আবেদন করি। এরই প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। অসুস্থ বাবাকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল জলিল স্যার আন্তরিকতার সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মঞ্জুর করেছেন আমার আবেদন। আমাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি বাবার খোঁজ-খবর নিয়ে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমি স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।’

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাহায্যের আবেদন নিয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইরিন খাতুন। খোঁজ নিয়ে সে সময়ই আনুষ্ঠানিকভাবে নগদ ৬০ হাজার টাকার সহায়তা দেন জেলা প্রশাসক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শরিফুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (এনডিসি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতারসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।

আব্দুল জলিল বলেন, করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন- যেন কোনো মানুষ অভুক্ত না থাকে, চিকিৎসার অভাবে কেউ যেন মারা না যায়। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে জেলা প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।

 

Next Post

সর্বাত্মক লকডাউনে কী করা যাবে, কী যাবে না

বুধ জুন ৩০ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুধবার সকালে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  নির্দেশনাগুলো হলো— ১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ […]

এই রকম আরও খবর

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links