নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে এক অসহায় নারী শ্রমিককে ফাঁসাতে স্বামী স্ত্রী সেজে ভুয়া ব্যাংক হিসাব খোলেন মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজের ব্যবসায়ী উদ্দ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবি ও তার স্বামী লিটন। তাদের অভিনব প্রতারণার শিকার ঐ নারীর নাম আলিয়া। আলিয়া রাজশাহী নগরীর মতিহার থানাধীন ডাশমারী এলাকার ইসাহাক আলীর মেয়ে ও প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবির স্বামী লিটনের স্ত্রী। সে তার স্বামী লিটন ও প্রভাষক মাহবুবার বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেন। সেই মামলায় জেল হাজতে ঠাঁই হয় লিটনের। তিন মাস হাজত বাস করে বাড়িতে এসে আলিয়াকে ফাঁসাতে লিটন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিলে অভিনব ফাঁদ তৈরী করেন। তাদের পূর্ব পরিচিত রাজশাহী সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখার তৎকালীন ম্যানেজার কাজী আসিফা শারমিনের যোগসাজশ করে আলিয়ার নামে একটি ভুয়া হিসাব খোলেন তারা। তাঁর নামে চেক বহি নিয়ে তাতে রীতিমত ৬ লাখ টাকা উঠিয়ে নিজেদের কাছে রাখেন। পরবর্তীতে গভীর চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আলেয়ার কাছে ৬লাখ টাকা পাবেন বলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে প্রতারক চক্র।
৯ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুর ১২টায় ভুক্তভোগী আলিয়া এমন অভিযোগ করেন গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট।
এদিকে প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবি ভুক্তভোগী নারী আলিয়াকে তাঁর মুঠোফোনে কল করে তার ভাই পুলিশ সুপার এমন পরিচয় দিয়ে বলেন তার ভাইকে দিয়ে আলেয়াকে ক্রসফায়ার করার হুমকি দেয়। এরকম একটি অডিও কল রেকর্ড গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসে পৌছেছে। প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবি অভিও কল রেকর্ডে ডা বলেছেন তা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো তিনি বলেন, আমার ভাই এসপি, বহু মানুষকে তিনি ক্রস ফায়ারে মেরেছে। তোকেও মাদক মামলা গ্রেফতার দেখিয়ে ক্রস ফায়ার দিবে।
আলিয়া খাতুন জানান, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জেলার নওহাটা বাজার এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে ওবায়দুর রহমান লিটনের সঙ্গে তার বিয়ে হলে তার স্বামী ও প্রভাষক স্ত্রী যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তিনি যৌতুকের জন্য শারিরীক ও মানষিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেন। এঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত লিটনকে গ্রেপ্তার করে। লিটন আলেয়ার আগে আরো দুজনকে বিয়ে করে। জেল হাজত থেকে বেরিয়ে সে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহবুবা খাতুন ছবিকে সঙ্গে নিয়ে আলিয়াকে এসিড নিক্ষেপ, ব্যাংক চেক বা ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়ে অন্তত ৬ মাস জেল খাটানোর হুমকি দেয়। আলিয়া খাতুন বলেন, হুমকির ঘটনার পরদিনই আরএমপির মতিহার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি।এরপর গত ১০ জানুয়ারি আমার কাছে ইদ্রিস আলী নামে অচেনা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি লিগ্যাল নোটিশ আসে।
নোটিশে বলা হয়েছে, আমি ইদ্রিস আলী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ধার নিয়েছি। টাকা পরিশোধের নিমিত্তে ব্যাংক চেক প্রদান করি। প্রথমত কোনো ব্যাংকে আমার কোন অ্যাকাউন্টই বা হিসাব নেই। তাহলে চেক দিলাম কোথা থেকে। আশ্চর্য বিষয় হলো ইদ্রিস আলী নামে কোন ব্যক্তিকে আমি কোনদিন দেখিনি চেনাতো দূরের কথা!
লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর আমি আকাশ থেকে পড়েছি এবং হতবাক হয়েছি। এমনটাও সম্ভব গ্রাহক ব্যাংকে গেল না আর তার নামে হিসাবও খুলে দিল ব্যাংক ম্যানেজার। দেশে কি আইন কানুন নেই নাকি।
বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আমার চাচাতো বোন নদী আক্তার রুনাকে জানাই। তাকে নিয়ে নোটিশে উল্লেখিত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহীর সেনানিবাস শাখায় যাই।
আলিয়ার ভাষ্য, ব্যাংকে গিয়ে ‘মোছা. আলো খাতুন’ নামে আইডি কার্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে তারা জানতে পারেন। তবে সেটি তার সঠিক নাম নয়। আগের আইডি কার্ডে এ নাম থাকলেও তার সঠিক নাম ‘মোছা. আলিয়া খাতুন’। জন্মনিবন্ধন কার্ডে এটিই দেয়া আছে এবং ভুল আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদনও করেছেন। তবে আগের আইডি কার্ড তার স্বামী ছাড়া কারো কাছে নেই। তার সাবেক স্বামী লিটন ও স্ত্রী মাহবুবা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যাংক হিসাব খুলে এভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য ব্ল্যাকমেইল করছে। বিষয়টির সমাধান না করে ব্যাংক কর্মকর্তারা আলিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তার চাচাতো বোন নদী আক্তারকে মারতে উদ্যত হন।
আলিয়া খাতুনের চাচাতো বোন নদী আক্তার বলেন, পারিবারিক ঝামেলা মিটিয়ে নিলে সবকিছু সমাধান হবে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাদের জানান। থানায় গিয়েও পুলিশি সহায়তা পাইনি আমরা। এখন শিশুপুত্র নিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন আলিয়া। তারা ব্যাংক কর্মকর্তা, লিটন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নদী আক্তার আরো বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার শারমিন এই ঘটনার প্রধান। তিনি ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি ভুল হয়েছে বলেও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং সেই স্বীকারোক্তির ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তের স্বার্থে তদন্ত টিম গত ৯ ফেব্রুয়ারী সোনালী ব্যাংক রাজশাহী সেনানিবাস শাখায় ভুক্তভোগীদের ডাকেন এবং তারা তদন্ত টিমের সাথে কথাও বলেন।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহীর সেনানিবাস শাখার ম্যানেজার এ বি এম ইকবাল হোসেন বলেন, কীভাবে এমনটা হয়েছে তা আমি জানি না। ঘটনাটি আমি যোগদানের আগের। হেড অফিস থেকে এরকম একটি ঘটনার তদন্ত চলছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।
উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংক রাজশাহী জিএম অফিসের পক্ষ থেকে এজিএম মোর্শেদ ইমাম’কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন জিএম অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সেকেন্দার হোসেন এবং প্রিন্সিপাল অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হাবিল উদ্দিন।
গত বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সোনালী ব্যাংক সেনানিবাস শাখায় তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান এজিএম মোর্শেদ ইমাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে আমরা কিছু বলতে পারবো না।
অভিযুক্ত ব্যাংক ম্যানেজার কাজী আফিফা শারমিন’কে মুঠোফোনে বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অফিসিয়াল প্রসিডিউর, জানতে হলে অফিসে আসতে হবে।
এবিষয়ে জানতে প্রভাষক মাহবুবা খাতুন ছবির মুঠোফোনে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি কলটি কেটে দেন। পরবর্তীতে তাকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, প্রতিবেদক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা কালে তথ্য সংগ্রহ ও কথা বলার পর বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে প্রতিবেদকে নিউজ করলে মামলা জড়ানোর হুমকিসহ ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
সোম ফেব্রু. ১৪ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার চেয়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছী গ্রামের সোবহান আলীর মেয়ে আরেছা বেগম (৪৫) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার দোষীদের শাস্তিও চেয়েছেন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরেছা বলেন, মৌগাছী নন্দনহাট এলাকার মৃত খোরশেদ আলমের […]
এই রকম আরও খবর
-
২৬ এপ্রিল, ২০২১, ৮:০৩ অপরাহ্ন
-
২৪ মে, ২০২২, ৮:৩৯ অপরাহ্ন
-
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৪২ অপরাহ্ন
-
১৯ জুন, ২০১৯, ৯:৫১ অপরাহ্ন
-
১৩ জুন, ২০২৩, ২:০৮ অপরাহ্ন
-
১০ মে, ২০২১, ২:৫৯ অপরাহ্ন