আভা ডেস্ক : অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া পাকিস্তানে বাংলাদেশের মতো হওয়ার আকুতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দেশ এখন সারা বিশ্বেই উন্নয়নের মডেল। এই দেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ের কথাও বলেন তিনি।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গোয়েন্দা প্রতিবেদন বই আকারে প্রকাশের অনুষ্ঠানে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তুলে ধরেন। ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’নামে এই বইটিতে ১৯৪৮ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দা প্রতিবেদন স্থান পেয়েছে। হাক্কানি পাবলিশার্সের এই বইটির দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান আমলের আন্দোলন সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, বইটি প্রকাশের পটভূমি বর্ণনা করার শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েও কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে পাকিস্তানকে আমরা যুদ্ধ করে পরাজিত করেছিলাম, আজকে পাকিস্তানের অনেক অনেক বুদ্ধিজীবী বলছেন, ‘আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও’। অর্থাৎ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে গেছে এবং এগিয়ে যাবে।’
‘জাতির পিতার এত আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না, লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা বৃথা যেতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারি। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব ২০২১ সালে। আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করব ঘোষণা দিয়েছি। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী করব ‘
‘আমরা শত বছরের প্রোগ্রাম দিয়েছি। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে, উন্নত হবে সে পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যেন বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে।’
পাকিস্তানকে বাংলাদেশের মতো গড়ে তুলতে দেশটির সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি আকুতি জানিয়েছেন পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জায়গাম খান।
পাকিস্তানকে সুইডেন মডেলে গড়ে তোলা হবে, ইমরান খানেরে এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর দেশটির ক্যাপিটাল টিভির টকশোতে অংশ নিয়ে জায়গাম খানে এ আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের থেকে বের হয়ে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, তখন দুই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কোনো তুলনাই হতো না। এমনিতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে নয় মাসের যুদ্ধে একেবারে বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। কিন্তু অমিত শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের কাছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আদর্শ হয়ে উঠছে।
গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক উন্নয়ন সূচকে পাকিস্তানকে এক দশক আগেই পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। আর বছর-বছর এই পার্থক্য বেড়েই চলেছে।
এক সময় যারা নিজেদের শ্রেয় মনে করত, বাঙালিদের ‘গেয়ো’, ‘অশিক্ষিত’ ‘কালো মানুষ’ বলে হেলা করতো, সেই পাকিস্তানে এখন বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। কীভাবে এই দেশ এগিয়ে গেল তাদেরকে পেছনে ফেলে, সে ভেবে কূল-কিনারা করতে পারছে না তারা।
পাকিস্তানের বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় বরাবর উঠে আসে বাংলাদেশের সাফল্য। পাকিস্তানের ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে বারবার বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেন, বাংলাদেশ তাহলে কীভাবে পারছে। ইউটিউবে এসব টক শোর ভিডিও সার্চ দিলেই পাওয়া যায়।
ক্যাপিটাল টিভির টকশোতেও বাংলাদেশের মতো পাকিস্তান গড়ার আকুতির কথা উঠে আসে। জায়গাম বলেন, ‘ইমরান খান পাকিস্তানকে সুইডেনের মতো বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দিন। পাঁচ বছর নয়, দশ বছরে তা বানিয়ে দিন। তাহলে আমরা ইমরান খানের জন্য পাগল হয়ে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পাকিস্তান আমলে সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনে বাঙালিরা কীভাবে বৈষম্যের শিকার হতো, সেটি তুলে ধরেন। বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে বৈষম্যের কথা সব সময় তুলে ধরতেন জাতির জনক। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই সংগ্রাম করেছেন, সক্রিয় হয়েছেন।’
‘এ কারণে তার প্রতি বৈরী মনোভাব ছিল। তার ফলাফলটা ছিল এই, তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় সক্রিয়। তিনি কোথায় যাচ্ছেন কী করছেন কী বলছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে সব সময় গোয়েন্দা সংস্থা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি করত এবং রিপোর্ট পাঠাত। তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা, তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন।’
‘এই বঞ্চনা থেকেই মু্ক্িত পাওয়ার জন্যই তিনি সংগ্রাম করেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। বাঙালির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্তের অক্ষরে লিখে যায়।’
‘ধাপে ধাপে একটি জাতিকে তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। তারই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।’
স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সাবেক প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করতে বঙ্গবন্ধুর চেষ্টা কথা তুলে ধরেন তার কন্যা। বলেন, ‘বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা অনেক দুরূহ কাজ ছিল। কিন্তু অতি দ্রুত সময়ে তিনি এই বাংলাদেশকে যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যান।’
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা শাসক গোষ্ঠী ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি দেশকে উন্নয়নের দিকেও পিছিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২১ বছর আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে (১৯৯৬ সালে) দেশে উন্নয়নের যাত্রা শুরু।’
‘মাঝে আরও সাত বছর হারিয়ে ফেলেছি। আর ২০০৯ থেকে ১৮ সাল। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’