অভিযোগে জর্জরিত রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

১৬ জুলাই শনিবার লক্ষীপুর মোড় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত ১৪ জুলাই এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর করা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে এই আয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলন বাধ্য হয়ে আয়োজন করতে হয়েছে। রাজাবাড়ী হাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষকে মারার বিষয় নিয়ে এমপি ফারুক চৌধুরীর মিথ্যাচারের প্রমাণ সহ জবাব দেওয়ার জন্য এই সাংবাদিক সম্মেলন।

ওমর ফারুক চৌধুরীর অপকর্মগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, দুদক ২০২০ সালে অর্থ আত্মসাৎ, খাসজমি দখল, খাসজমি ইজারায় দূর্নীতি, সার ডিলার নিয়োগ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগসহ জামায়াত-বিএনপি’র মদতপূষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করাসহ প্রায় ২০ ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেন। এছাড়াও তিনি বলেন, রাজাবাড়ী হাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষকে শুধু নির্যাতন করেনি, একইভাবে ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে তানোর থানা

এল.জি.ই.ডি এর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লা আল মামুন, ২০১৩ সালে তানোর আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমানকে তার বাড়ীতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ২০১৫ সালে প্রেমতলি ডিগ্রী কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে রাজাকার পুত্র সাজেদুর রহমান সুজন এবং পিযারুল ইসলাম ফারুক চৌধুরীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে গোগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিল।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭০% জামায়াত বিএনপি ক্যাডারদের চাকুরি প্রদান করেন তিনি।

ওমর ফারুক চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকায় নিজে ২০১৮ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে বিএনপির গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও উপজেলা বি.এন.পির সভাপতি  ইসহাক আলীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে মিষ্টি বিতরণ উৎসব করে। ২০১৮ সালে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসে ওমর ফারুক চৌধুরী তানোর উপজেলার ডাঃ আবু বকর হাই স্কুল এন্ড কলেজে উপস্থিত থেকে আনন্দ র‍্যালী করেছিল। ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি গোদাগাড়ীর মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেন এবং পৃষ্টপোষকতা করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তদন্তেও তাকে মাদকের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করে।

তানোর-গোদাগাড়ির স্কুল কলেজ সরকারিকরণ করার নাম করে কোটি কোটি টাকা সেসব স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কাছে থেকে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গোদাগাড়ি কলেজের অধ্যক্ষকে টাকার জন্য কলেজ গভর্নিং বডির সভায় ফারুক চৌধুরীর উপস্থিততে বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও তার ছেলে মারধর করেছিল, যা জাতীয় পত্রিকাসহ স্থানীয় সকল পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছিলো।

২০১৩ সালে তানোর উপজেলা পি.আই.ও জিয়াকে লাঞ্ছিত করে। ২০১৮ সালে তানোর উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রবিন সরকারকে জুতা পেটা করেছিল এমপি নিজে। ১২ আগস্ট ২০১৮ সালে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী রুবেল রানাকে জুতা পেটা করে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার হুমকি দেয়।

ওমর ফারুক চৌধুরী নিজেকে এখন শহীদ পরিবারের সন্তান দাবী করেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক কালের কণ্ঠে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিবৃতি দিয়েছে যে, তার বাবা রাজাকার ছিল। তার বাবা শান্তি কমিটি রাজশাহী জেলার সদস্য ছিল। ২০১৯ সালে ১৯ জানুয়ারী তানোরের সকল স্কুলের ক্লাস বন্ধ করে সংবর্ধনা দিয়ে ছিল শিক্ষকরা।

২০১৯ সালে মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ফারুক চৌধুরীর নিজ বাড়ী রাজশাহী শহরের সাগরপাড়ায়। সে সেখানকার বাড়ীর ঠিকানায় ভোটার। ফারুক চৌধুরী ৩ বারের এম.পি একবারও সে নৌকায় ভোট দেননি। সে চেতনায় আওয়ামী লীগ বিরোধী ও পাকিপন্থী ধারার মানুষ।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছে সে ফ্রিডম পার্টি করেনি। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২০২১ সালের সাংবাদিক

ফারজানা রুপার উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ফাইলস নামে একটি অনুষ্ঠানে প্রয়াত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. আব্দুল মতিন খসরুর উপস্থিতে তাকে ফ্রিডম পার্টিও নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন আছে। সে ফ্রিডম পার্টি করত তা রাজশাহীর রাজনীতি সচেতন অনেক মানুষ জানে। ফারুক চৌধুরী রাজনীতি জীবন শুরু করেন

ত্রিদলের মাধ্যমে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮০ সালের ছাত্রসংসদ(রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের মর্তুজা-জুয়েল প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদন্দ্বীতা করে ছাত্রলীগের শাহ আলমের কাছে পরাজিত হয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ব্যারিষ্টার আমিনুল ইসলামের পক্ষে সরাসরি ভোট করেন তিনি।

এ সময় আসাদ বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমার কথায় চুল পরিমান মিথ্যা থাকলে আমাকে দল থেকে চিরস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন। আর এমপিকে পদোন্নতি দেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের খতিয়ে বিচার করতে অনুরোধ করেন তিনি। এসময় প্রমাণ স্বরুপ বিভিন্ন অডিও ও পত্র পত্রিকার ডকুমেন্টস তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Next Post

মোহনপুরে বাস চাপায় পুলিশ সদস্য নিহত

শনি জুলাই ১৬ , ২০২২
মোঃ শাহিন সাগর, রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীর মোহনপুরে যাত্রীবাহী বাস চাপায় মো. জুয়েল রানা (৩১) নামে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তিনি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ৯ নম্বর তেতুলিয়া ইউপি’র কুরকুচি গ্রামের মহিবুর রহমানের ছেলে। বগুড়া জেলার আদমদিঘি থানায় কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে  রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links