অভিযোগের অন্ত নাই বাঘার মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মনিগ্রাম উচ্চ বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, দোকানঘর ভাড়ার টাকা, আম বিক্রয়ের টাকা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ম‍্যানজিং কমিটি গঠন ইত‍্যাদি নানান অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,

উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক বরাবর একের পর এক অভিযোগ দিয়েও মিলছেনা প্রতিকার।

লিখিত অভিযোগ থেকে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে প্রায় ১১/১২শত শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোয়ার হোসেন যোগদানের পর থেকেই  বিদ‍্যালয়ে শুরু হয় নানান রকমের সমস্যা । তিনি জড়িয়ে পড়েন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে । প্রধান শিক্ষক এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যেন  দেখার কেউ নেই।

অভিযোগ রয়েছে, ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে প্রধান শিক্ষক সকল নিয়ম কানুন উপেক্ষা করে অতি গোপনে বহুল প্রচার ও নির্বাচন না করে কমিটি গঠন করেছেন। ঐ কমিটিতে যিনি  সভাপতি মনোনীত হয়েছেন তাঁর ছেলেকে দাতা সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেছে। এখানে দাতা সদস্যের ৬ মাস বা ১৮০ দিন পূর্বে টাকা জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও টাকা জমা না দিয়েই দাতা সদস্য করা হয়েছে। মহিলা অভিভাবক সদস্য যাকে নির্বাচন করেছে সেটা সভাপতির আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। প্রকাশ থাকে যে, বিধবা মহিলা কোটা বিধান থাকলেও তা অনুসরণ না করে স্বামী  জীবিত আছে এমন মহিলাকে অভিভাবক সদস্য করেছেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। এছাড়াও কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী তফসিল গোপন করে সভাপতির নিজস্ব লোকদের সদস্য করে জাল স্বাক্ষর করেছে যা অভিভাবক সদস্যরা জানে না এমনকি সকল স্বাক্ষর জাল করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অভিভাবক সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য ও দাতা সদস্য তৈরি করে প্রিজাইডিং অফিসার দিয়ে নির্বাচনী প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং গোপনে কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়ে ৩১/০৫/২০২২ ইং তারিখে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে  বিপুল অর্থ বানিজ‍্যের লক্ষ‍্যে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে  নিয়োগ দেয়ার অপচেষ্টায় চালাচ্ছে। এর প্রতিবাদে ৫ জন সদস‍্য পদত‍্যাগ করেছেন।

এখানেই শেষ নয়, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের বিগত ২০২১ সালের ৩,৫০,০০০/(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) ও ২০২২ সালে ১,৮৫,০০০/-(এক লক্ষ পঁচাশি হাজার) আম বিক্রয়ের টাকা স্কুল ফান্ডে জমা না দিয়ে সভাপতির সঙ্গে  ভাগাভাগি করে আত্বসাৎ করেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমির ওপর নির্মিত দোকান ঘরের প্রতি মাসের ভাড়া ২০,০০০/-(বিশ হাজার) টাকা করে ১২ মাসে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি ফি এর লক্ষাধিক টাকাসহ মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি এর একটি টাকাও ব্যাংকে জমা না দিয়ে বিদ্যালয়ের অর্থ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ইচ্ছামত ব্যবহার করেন। উক্ত বিষয় গুলি সরজমিনে সৎ ও দক্ষ অফিসার দ্বারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসির দাবি, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন ও সভাপতি কাফাতুল্লাহ’র অনিয়ম ও দুর্নীতির আসল চিত্র।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী আফাজ উদ্দিন  বলেন,প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে আনিতো অভিযোগগুলো একটিও মিথ‍্যে নয়। সকল অভিযোগ গুলো শতভাগ সত‍্য। এর পরেও কর্তৃপক্ষ ব‍্যবস্থা নিচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে আমরা আদালতে মামলা দিয়েছি। এত অনিয়মের পরেও তিনি( প্রধান শিক্ষক ) কাউকে পরোয়া করিনা মুডে রয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা হতবাক। আসলে তার খুঁটির জোর কোথায়!

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নিতে গিয়ে বিদ‍্যালয়ে না পেয়ে  মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন, এখন কিছু বলতে চাচ্ছিনা, পরে কথা হবে বলেই সংযোগটি কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কল করলেও তা রিসিভ করেননি।

উপজেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসার আফম হাসান বলেন, এ ব‍্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।  অভিযোগ হয়েছে কিনা তাও বলতে পারবনা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) শারমিন আখতার বলেন, এ সংক্রান্ত  একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির সঠিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন‍্য  সহকারি কমিশনার ( ভূমি)-বাঘা কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর অভিযোগ প্রমানিত হলে  আইনি ব‍্যবস্থা নেয়া হবে।

Next Post

কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদ এর বিরুদ্ধে আদালতে দূর্নীতির মামলা

মঙ্গল মার্চ ১৪ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন একরামুল হক নামের এক কাউন্সিলর। গত ৬ মার্চ তিনি আইনজীবির মাধ্যমে পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহীর সিনির স্পেশাল জজ আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেন। এর আগে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links