আভা ডেস্ক : অনেকবার নির্বাচন হয়েছে পাকিস্তানে। কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি, কপালে সুখ জোটেনি। নামমাত্র নির্বাচনে কেবল ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, নতুন নতুন সরকার এসেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আবার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। এভাবে কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার ক্ষমতার মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। নিয়মমতো আজও নির্বাচন হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে মনে হয় না। আজ ১০ কোটিরও বেশি ভোট দিতে যাবেন। অথচ ইতিমধ্যেই এই ভোটের গায়ে ‘বিতর্কিত’ কলঙ্ক লেগে গেছে। পাকিস্তানের সাম্প্র্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা ভোট বলে অভিহিত করেছেন সবাই। মঙ্গলবার এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও ফরেন পলিসির পৃথক পৃথক দুটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
‘দ্বিতীয় সারি’র পাতি নেতা ইমরান খান ও তার দল পিটিআইকে জেতাতে নির্বাচনে নগ্ন হস্তক্ষেপের ব্যাপক অভিযোগ দেশটির প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার পিএমএল-এনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিচারবিভাগ। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা যে ভাষায় কথা বলেছেন তা খুবই কুরুচিপূর্ণ। এসব কারণই এই নির্বাচনকে সবচেয়ে বিতর্কিত ও নোংরা বলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, আর যেই জিতুক, শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে পাকিস্তান। দেশটির চলমান অস্থিতিশীলতা এবং সেনাবাহিনী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মধ্যকার দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্কের উন্নয়নে কোনো কাজেই আসবে না এ ভোট। আগেও যেমন ছিল, তেমন থাকবে ভবিষ্যতেও। অর্থাৎ শাসনযন্ত্রের কলকাটি থাকবে সেই সেনাবাহিনীর হাতেই।পাকিস্তান আজ যত সমস্যার মুখোমুখি তার প্রধান কারণ সেনাবাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। প্রধানত অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করেই এ দ্বন্দ্ব আবর্তিত হচ্ছে। এই একই স্বার্থে গত তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধান দুই দলের মূলোৎপাটন করতে চায় স্বার্থান্বেষী উর্দিবাহিনী। ২০১৩-তে বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপল’স পার্টিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে সক্ষম হয় তারা। এবার লেগেছে নওয়াজের পিএমএল-এনের পেছনে। নওয়াজকে উৎখাত করে ইমরান খান ও তার দল পিটিআইকে ক্ষমতায় আনতে চাচ্ছে জেনারেলরা। অন্যান্য দেশে সাধারণত প্রত্যেক নির্বাচনের পর গণতন্ত্র ও এর চর্চা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটবে কিনা এমন প্রশ্নে হতাশাই প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচন পরবর্তী পাকিস্তানের বাস্তবতা ও চিত্র তেমনটা হওয়ার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ দেশটির গণতন্ত্রের ইতিহাস এবং বারবার সামরিক অভ্যুত্থান সে কথা বলে না। দেশটিতে না রাজনীতিকদের ওপর আস্থা আছে জেনারেলদের, না জেনারেলদের বিশ্বাস করেন রাজনীতিকরা। ফলে নির্বাচিত কোনো প্রধানমন্ত্রীই ক্ষমতা পূরণ করতে পারেননি। স্বাধীনতার পর গত ৭০ বছর ধরেই এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
যুগান্তর