আভা ডেস্ক:
* সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা পণ্যবাহী ট্রাকে
* সবচেয়ে বেশি নিহত সাধারণ যাত্রী
* দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিহত পথচারী
* নিহতের সংখ্যায় তৃতীয় মোটরসাইকেল আরোহী
চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সারা দেশে ২ হাজার ৩৫৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৩১৭ নারী ও ৩২৬ শিশুসহ ২ হাজার ৪৭১ জন নিহত হয়। আহত হয় ৫ হাজার ৯৭৫ জন। আহতদের মধ্যে ৩৬৮ নারী ও ১৬৮ শিশু রয়েছে।
জাতীয় মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোয় এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে। বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন ২২টি বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ১০টি আঞ্চলিক সংবাদপত্র, আটটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সংবাদ সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৪০৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৫৪ নারী ও ৩০ শিশুসহ ৪২৫ জন নিহত হয়। আহত হয় ৫৭ নারী ও ১৩ শিশুসহ ৯৩৩ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৩ দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৪৮ শিশুসহ ৪১৩ জন নিহত হয়। আর আহত হয় ৪৬ নারী ও ১৯ শিশুসহ ৯৯৫ জন।
মার্চে ৩৭৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৩৮৫ জন, এর মধ্যে ৫৩ নারী ও ৭৯টি শিশু রয়েছে। এই মাসে ৬০ নারী ও ৪৩ শিশুসহ আহত হয় ৯৭১ জন। এপ্রিলে ৪০৮টি দুর্ঘটনায় ৫০ নারী ও ৫০ শিশুসহ ৩৮৯ জন নিহত এবং ৬৩ নারী ও ২৪ শিশুসহ ১ হাজার ৩২ জন আহত হয়। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৬৩টি। এতে ৪০ নারী ও ৫১ শিশুসহ নিহত হয় ৩৮১ জন। আহত হয় ৪৪ নারী ও ৩০ শিশুসহ ৮৪৬ জন।
জুনে ৪২৭টি দুর্ঘটনায় ৬৭ নারী ও ৬৮ শিশুসহ ৪৭৮ জন নিহত হয়। আহত হয় ৯৮ নারী ও ৩৯ শিশুসহ ১ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে ১২ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১৩ দিনে ঈদ-যাতায়াতে দুর্ঘটনা ঘটে ২১১টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭ নারী ও ৩২ শিশুসহ ২৪৮ জন নিহত ও ৭১৭ জন আহত হয়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক বেশি দেখানো হয়েছে বলে দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।
জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঈদের আগে দূরপাল্লার সড়কে সরকারের তদারকি ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল। এর ফলে আশঙ্কার তুলনায় জনদুর্ভোগ কম ছিল এবং দুর্ঘটনাও কম ঘটে। ঈদের পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর নজরদারি কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। যে কারণে একইদিনে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি ও রংপুরের তারাগঞ্জে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হয়। তবে ঈদ-যাতায়াতের ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হওয়ার যে তথ্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি প্রকাশ করেছে তা বাস্তবতাবিবর্জিত।
জাতীয় কমিটির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, গত ৬ মাসে নিহতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সাধারণ যাত্রী ৭৭৩ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পথচারী ৭০১ ও মোটরসাইকেল আরোহী ৫৪৮ জন। নিহত পথচারীদের মধ্যে ২১৫ জনের প্রাণহানি ঘটে অসতর্কভাবে সড়ক পার হতে গিয়ে। এ ছাড়া এই ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় পণ্যবাহী ট্রাকের, ৭৫৬টি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যাত্রীবাহী বাস, ৬০৬টি এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল, ৫৯৬টি।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বছরের প্রথম ৬ মাসে প্রাণঘাতি সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অধিকাংশই ঘটে বাস ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহনের চালকদের অসতর্কতা ও খামখেয়ালিপনার কারণে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক মিলিয়ে ক্ষুদ্র যানবাহনের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, মহাসড়কসহ দূরপাল্লার সড়কে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন, পথচারীদের অসতর্কতা এবং সব ধরনের যানের চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
জাগো নিউজ