আশ্রায়নের অধিকার, শেখ হাসিনা অঙ্গিকার’ এই শ্লোগানে নাটোরের ১হাজার ৬২০গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে নতুন বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিশ্রুতি প্রকল্প ২০১৭-১৮অর্থ বছরের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধিনে জমি আছে যার, ঘর নাই তার’ শীর্ষক প্রকল্পে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ১লাখ টাকা। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস। ইতোমধ্যে নাটোরের ১হাজার ৬২০গৃহহীন পরিবারের জন্য ১৬ কোটি ২০লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
তবে গৃহহীনদের তালিকা তৈরী নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। তালিকায় নাম উঠানোর নামে ১০ থেকে ২০হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এবিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। তবে প্রশাসন বলছে, তালিকায় তৈরীতে কোন অনিয়ম থাকলে অভিযোগের সাপেক্ষে সেগুলো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, যাদের এক শতাংশ থেকে ১০শতাংশ জমি রয়েছে, কিন্তু ঘর নেই বা থাকলেও তা বসবাসের অনুপযোগী এমন ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবেন। এছাড়া দুঃস্থ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা মহিলা, স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা, শারীরিক ভাবে পঙ্গু ও আয় উপার্জনে অক্ষম, ভিক্ষুক, অতি বার্ধক্য এবং পরিবারের আয় উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন ব্যক্তিরাও এই প্রকল্পের সুবিধাভোগি হবেন।
প্রকল্প ওয়েবসাইট সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ১৯মে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্নিঝড়ে আক্রান্ত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুর্নিঝড় আক্রান্ত, গৃহহীন ও ছিন্নমুল পরিবারসূমহকে পুর্নবাসনের নির্দেশ দেন। তাঁরই নির্দেশে ১৯৯৭ সালে “আশ্রয়” নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার পরিবারকে পূর্নবাসন করা হয়েছে। এরমধ্যে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ৬৭হাজার ৯৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্ণিত প্রকল্পের সাফল্য ও ধারাবাহিকতায় ২০১০-২০১৯ (সংশোধিত) মেয়াদে আড়াই লাখ গৃহহীন, ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি প্রকল্প ‘আশ্রয়ন-২’ এর আওয়তায় নাটোর জেলায় মোট ১হাজার ৬২০জন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে নাটোর সদরে ৪০০জন, নলডাঙ্গায় ৪০০জন, বাগাতিপাড়ায় ১০০জন, সিংড়া ২৯৩জন, লালপুরে ১৫৭জন, বড়াইগ্রামে ১৪০জন এবং গুরুদাসপুরে ১৩০জন। প্রতিটি পরিবার টিন শেডের চারচালার একটি ঘর, একটি বাথরুম এবং একটি করে টিউবয়েল পাবেন। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সদস্য সচিব, উপজেলা প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে সদস্য করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩০জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা থাকলেও বরাদ্দ দেরিতে পাওয়ার কারনে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওরা।
গুরুদাসপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি প্রকল্পের গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ বাবদ ১কোটি ৩০লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বরাদ্দ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে আমরা ৫জন পরিবারের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আরো ৩০জনের ঘর নির্মাণ হয়ে যাবে। আশা করছি জুন মাসের মধ্যেই সকল গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা সে ভাবেই ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। এতে পিআইও, প্রকৌশলী সহ অন্যান্যেরা সহযোগিতা করছে।
বড়াইগ্রাম উপজেলার নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ বলেন, প্রতিঘর নির্মাণ বাবদ এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা সে বরাদ্দের মধ্যেই ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। এখন ঘর নির্মাণের জন্য খুঁটি তৈরী করা হচ্ছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩০জনের মধ্যে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এত দ্রুত নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা বরাদ্দ যৌথ সাক্ষরে তুলে রেখেছি, ঈদের পরেই গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
গৃহহীনদের তালিকা নিয়ে কোন অনিয়ম রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নিজে ঘুরে ঘুরে তালিকা তৈরী করেছি। তালিকা তৈরীতে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই।
এদিকে, গৃহহীনদের তালিকা তৈরী নিয়ে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। তালিকায় নাম উঠানোর নামে ১০ থেকে ২০হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এমন অভিযোগ বেশি রয়েছে সদর উপজেলার হালসা, ছাতনী, হরিশপুর এবং দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে। তবে এবিষয়ে কেউ মুখ খুলতে কেউ রাজি হয়নি।
এবিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, তালিকা তৈরীতে কিছু কিছু এলাকায় অনিয়মের খবর পেয়ে ছিলাম। সে সময় স্থানীয় সংসদের কঠোর নির্দেশনার কারনে ইউপি চেয়ারম্যানগুলো আর অনিয়ম করতে পারেনি। তারপরও কোন এলাকার অনিয়মের তথ্য প্রমান থাকলে অভিযোগের স্বাপেক্ষে সেগুলো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।