আভা ডেস্ক: ঢাকা শিশু হাসপাতালে পতিত অবস্থায় পড়ে ছিল একচিলতে জমি। কাঠা পাঁচেকের জমিটি সারা বছর পানি-কাদায় ভরে থাকত। হঠাৎ জায়গাটি যেন হেসে উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জায়গাটিকে ছোটখাটো শিশুপার্কের আদল দিয়েছে। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পার্কটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের জন্য খোলা থাকে। ১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া এই হাসপাতালে প্রতিদিন ঢাকা শহর এবং দেশের দূরদূরান্ত থেকে অনেক শিশুকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য আনা হয়। কিন্তু শিশুদের অন্যতম অধিকার বিনোদনের প্রতি এ-যাবৎ তেমন একটা দৃষ্টি দেওয়া হয়নি।
কয়েক বছর আগে শিশুদের অধিকার এবং সুস্থ বিকাশ নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একই জায়গায় শিশুদের জন্য কয়েকটি রাইড বসিয়েছিল। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা বেশি দূর এগোয়নি। রাইডগুলো অচিরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আশার কথা, শিশু হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক এবার উদ্যোগ নিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় এই কাজে হাত দিয়েছেন। তাঁরা পকেটের টাকা, শ্রম ও পরিকল্পনা দিয়ে কাজটিকে এগিয়ে নিয়েছেন। নতুন চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করবে তাঁদের এই অন্য রকম কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা। কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ড. তহমিনা সেখানকার শিশু ওয়ার্ডটি শিশুদের উপযোগী করে সাজিয়েছিলেন। তাঁর সে উদ্যোগ সবার প্রশংসা পেয়েছিল। শিশুরা হাসপাতালকে আরেকটি মজার জায়গা হিসেবে ভাবতে শিখেছিল। শিশুদের রোগ নিরাময়ের জন্য এটা খুবই সহায়ক।
প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ গাইন পাইলও সালভিওলির মতে, শিশুদের চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে সুস্থ বিনোদন আর খেলাধুলার ব্যবস্থা। তিনি এটাও বলেছেন, এই কাজে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ত হওয়াটা খুবই জরুরি। আর তাই শিশু চিকিৎসকদের যতটা সম্ভব প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজের চাপ থেকে মুক্ত রাখা উচিত।
জাতিসংঘের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রায় সব কটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের জন্য একটা খেলা বা বিনোদন ঘর সাজিয়ে দিয়েছিল। চিকিৎসাধীন শিশুদের বিনোদনের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় না থাকায় হাসপাতালের মূল ডিজাইনে এ ধরনের কোনো পরিসর বা স্পেস ছিল না। এতে শিশুদের উপযোগী একটি কক্ষ খুঁজে পাওয়া তখন বেশ কষ্টকর হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, শিশুরা খেলনা নষ্ট করে ফেলবে—এই অজুহাতে এসব কক্ষের বেশির ভাগই এখন বন্ধ থাকে। এগুলো সব সময় চালু রাখা দরকার।
শিশু হাসপাতালের আঙিনায় সদ্য চালু মিনি শিশুপার্কটি আরও বড় হলে নিশ্চয়ই ভালো হতো। কিন্তু যা হয়েছে তা-ই বা কম কী? সবার আন্তরিকতা থাকলে এটাকে আরও সুন্দর এবং শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। চিকিৎসার জন্য কোনো শিশুকে হাসপাতালে থাকতে হলে তার অভিজ্ঞতা যেন আনন্দের হয়, তা নিশ্চিত করতে সবার মনোযোগ দরকার।
প্রথম আলো