হত্যা মামলার আসামি ধরতে এক জেলের (মৎসবজীবী) কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেছেন পটুয়াখালী দশমিনা থানার ওসি রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী। টাকা দিতে না পারায় আট আসামির মধ্যে কোনো আসামিকেই গ্রেফতার হয়নি। অথচ আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, টাকা না দিলে আসামিদের নামে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
রোববার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মামলার বাদী পটুয়াখালী দশমিনা থানার চরবোহান গ্রামের জাকির আলী বেপারী।
তবে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি ওসি রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না
সংবাদ সম্মেলনে জাকির আলী বেপারী বলেন, যৌতুক দিতে না পারায় গত ২৩ এপ্রিল স্বামী রাসেল মুন্সির হাতে নির্যাতনের পর খুন আমার মেয়ে শাকিনুর বেগম। হাসপাতালে লাশ রেখে পালিয়ে যায় রাসেলসহ অন্যরা। পরে আমি পটুয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে ময়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে দশমিনা ওসি মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ঘাতকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়ার পর ওসি আমাদের বলেন, শাকিনুর আত্মহত্যা করেছেন। তাই এ নিয়ে কোন মামলা হবে না। পরে আমি এ ব্যাপারে আদালতের দারস্থ হলে আদালত থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তাতেও গড়িমসি করেন থানার ওসি।
জাকির আলী বেপারী বলেন, গত ১৪ মে আদালতে মামলা করি। মামলায় শাকিনুরের স্বামী রাসেল এবং রাসেলের বাবা জাহাঙ্গীর মুন্সিসহ আটজনকে আসামি করা হয়। আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশ ওই মামলার তদন্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে আটক বা গ্রেফতার করেনি।
শাকিনুর বেগমের বাবা জাকির আলী বেপারী বলেন, মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে সম্প্রতি পটুয়াখালীর এসপির কাছে আবেদন জানালে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন এসপি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন মিয়া।
পরিদর্শক সুমন মিয়া আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা মূল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দিয়ে দেব, পারলে তুই কিছু করিস। তোর কত্ত বড় সাহস! আমাদের পাশ কাটিয়ে এসপির কাছে আবেদন দিয়েছিস।’
জাকির আলী ব্যাপারীর অভিযোগ, আসামি ধরার জন্য এক পর্য়ায়ে ওসি রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরি এক লাখ টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, আসামি ধরতে হলে এক লাখ টাকা জোগাড় করে আসতে হবে। কিন্তু আমার মতো জেলের পক্ষে এই টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। জাকির আলী বেপারী আরও বলেন, ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট রাসেল মুন্সির সঙ্গে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে হয় শাকিনুরের। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে রাসেলকে ১ লাখ দেয়া হয়। কয়েকমাস পর মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে রাসেল। টাকা দিতে না পারায় শাকিনুরের চলে নির্যাতন।
তিনি বলেন, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে রাসেলকে আরও ৫০ হাজার টাকা দিই। এর কয়েকমাস পর মোটর সাইকেলটি বিক্রি করে আবারও ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। পরে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ টাকা দিতে না পারার কারণে রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা শাকিনুরের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে শাকিনুরের মুখে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবার
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দশমিনা থানার ওসি রতন কৃষ্ণ রায় চৌধুরী বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা সুরতহাল প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই ভিসেরার জন্য আলমত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরিস্কার করে বলা যাবে। আসামিরা পলাতক উল্লেখ করে ওসি বলেন, তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
যুগান্তর